শুক্রবার, ৬ জুন ২০২৫, জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ (abdullah) কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির রাজ্যের মর্যাদা পুনর্বহালের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই লক্ষ্য অর্জনে নেতৃত্ব দেবেন। কাটরা রেলওয়ে স্টেশনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ভান্ডে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন উদ্বোধনের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসে তিনি এই মন্তব্য করেন। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং উপস্থিত ছিলেন।
ওমর আবদুল্লাহ বলেন (abdullah)
অনুষ্ঠানে ওমর আবদুল্লাহ (abdullah) বলেন, “রেলের বড় বড় অনুষ্ঠানে আমি সবসময় অংশ নিয়েছি। আনন্তনাগ রেল স্টেশনের উদ্বোধন, বানিহাল রেল সুড়ঙ্গের উদ্বোধনের সময়ও আমি উপস্থিত ছিলাম। ২০১৪ সালে আমার প্রথম মেয়াদের শেষ অনুষ্ঠানও এখানে কাটরায় হয়েছিল। তখন আপনি (প্রধানমন্ত্রী মোদী) প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে কাটরা রেল স্টেশনের উদ্বোধন করেছিলেন।
আপনি তিনবার নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।” তিনি আশা প্রকাশ করেন যে জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি শীঘ্রই স্বাভাবিক হবে এবং রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “২০১৪ সালে এখানে আমরা চারজনই ছিলাম। মনোজ সিনহা তখন রেল প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, এখন তিনি লেফটেন্যান্ট গভর্নর। আমি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে জম্মু ও কাশ্মীর শীঘ্রই রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাবে।”
লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা বলেন
এদিকে, লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা বলেন, কাটরা-শ্রীনগর বন্দে ভারত ট্রেনের উদ্বোধনের মাধ্যমে ‘কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী’ সংযোগের স্লোগান বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। তিনি বলেন,(abdullah) “প্রধানমন্ত্রী দেশের দুই প্রান্তকে একত্রিত করে সরদার বল্লভভাই প্যাটেল এবং ড. শ্যামা প্রসাদ মুখার্জির স্বপ্নকে সত্যি করেছেন। এই রেলপথ কেবল শহরগুলোকে সংযুক্ত করেনি, বরং কোটি কোটি ভারতীয়ের হৃদয়কে সংযুক্ত করেছে। আজ উদ্বোধন করা চেনাব সেতু শুধু সিমেন্ট আর লোহার কাঠামো নয়, এটি জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে সংযুক্ত করার মাধ্যম।”(abdullah)
প্রধানমন্ত্রী মোদী কাটরা রেল স্টেশন থেকে দুটি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন করেন, যা জম্মু বিভাগকে সরাসরি কাশ্মীরের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। উদ্বোধনের আগে তিনি ট্রেনে থাকা স্কুল শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন এবং রেল কর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংশ নেন। তিনি চেনাব নদীর উপর নির্মিত সেতুর ডেকে দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন, যা একটি উল্লেখযোগ্য প্রতীকী অঙ্গভঙ্গি হিসেবে বিবেচিত হয়।
নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন কাটরা (abdullah)থেকে শ্রীনগরের মধ্যে ভ্রমণের সময়কে ৬-৭ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে মাত্র ৩ ঘণ্টায় নিয়ে এসেছে। এই ট্রেনগুলি স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক এবং তীর্থযাত্রীদের জন্য দ্রুত, আরামদায়ক এবং নির্ভরযোগ্য ভ্রমণের সুবিধা দেবে। ট্রেনগুলি ভারতের প্রথম কেবল-স্টেড রেল সেতু অঞ্জি খাদ ব্রিজ এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতু চেনাব ব্রিজের উপর দিয়ে চলবে, যা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধন করা হয়েছে।
এই সেতুগুলি উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল লিঙ্ক (ইউএসবিআরএল) প্রকল্পের অংশ, যা ২৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং প্রায় ৪৩,৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। এই প্রকল্পে ১১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩৬টি সুড়ঙ্গ এবং ৯৪৩টি সেতু রয়েছে।
এই রেলপথ কাশ্মীর উপত্যকাকে সারা বছর ধরে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত রাখবে, যা অঞ্চলের কঠিন ভূখণ্ড এবং ভূমিকম্প সংবেদনশীলতার কারণে একটি বিশাল প্রকৌশল চ্যালেঞ্জ ছিল(abdullah)। বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রমের পর এই প্রকল্প ভারতের প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
চেনাব সেতু, যা ৩৫৯ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এবং ১,৩১৫ মিটার দীর্ঘ, আইফেল টাওয়ারের চেয়ে ৩৫ মিটার উঁচু। এটি ভূমিকম্প এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ্য করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। অঞ্জি খাদ সেতু, ভারতের প্রথম কেবল-স্টেড রেল সেতু, কাটরা-বানিহাল অংশে অঞ্জি নদীর উপত্যকায় অবস্থিত। এই রেলপথটি পর্যটন, বাণিজ্য এবং সামরিক গতিশীলতার জন্য নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করবে।
HDFC ও ICICI ক্রেডিট কার্ডে খরচের ধরনে আসছে পরিবর্তন, জানুন নতুন নিয়ম
বন্দে ভারত ট্রেনগুলির ডিজাইন
বন্দে ভারত ট্রেনগুলি কাশ্মীরের কঠিন শীতকালের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এতে উন্নত হিটিং সিস্টেম, বরফ কাটার যন্ত্র এবং ড্রাইভারের জন্য হিটিং এলিমেন্ট সহ ফ্রন্ট লুকআউট গ্লাস রয়েছে, যা বরফাচ্ছাদিত অবস্থায় দৃশ্যমানতা নিশ্চিত করে। এই ট্রেনগুলি জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ের তুলনায় একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প, যা শীতকালে প্রায়শই বন্ধ হয়ে যায়। অমরনাথ যাত্রার জন্য বিশেষ ট্রেনের পরিকল্পনাও বিবেচনাধীন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে জম্মু ও কাশ্মীরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রিয়াসি জেলার কাটরা শহর এবং রামবানে অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর সেতু এবং সুড়ঙ্গগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এই প্রকল্প জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করবে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক একীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি কেবল একটি পরিবহন সংযোগ নয়, বরং জাতীয় ঐক্য এবং প্রকৌশল শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক।
