ফেসবুকে বন্ধুত্ব পাতিয়ে এক বিবাহিত মহিলাকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে, পরিচয় লুকিয়ে যৌন চ্যাটে লিপ্ত হয়ে, পরে নগ্ন ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেল—অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়ল অভিযুক্ত। ধৃতের নাম শেখ সাদ্দাম হোসেন। বাড়ি হাওড়া (Howrah) জেলার রামেশ্বরপুর এলাকায়।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসেছে নদিয়ার ভীমপুর থানা এলাকার ট্যাংরা গ্রাম থেকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রামের এক গৃহবধূর সঙ্গে অভিযুক্ত সাদ্দাম ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুত্ব করে। তবে বন্ধুত্বের শুরুর থেকেই সে নিজের পরিচয় গোপন রাখে এবং ভুয়ো নাম ব্যবহার করে। প্রথমে হালকা চ্যাট, ধীরে ধীরে সম্পর্ক গভীর হয়, এবং তা গড়ায় সেক্স চ্যাটে। সেই সময় দু’জনের মধ্যে গোপন ছবি এবং ভিডিও আদানপ্রদান হয়।
কিন্তু সম্পর্ক যত এগোয়, গৃহবধূর সন্দেহ দানা বাঁধে। তদন্তে নেমে তিনি জানতে পারেন, অভিযুক্ত যুবক তাকে ভুল পরিচয়ে প্রতারণা করছে। এরপরই তিনি সাদ্দামকে এড়িয়ে চলা শুরু করেন। এখান থেকেই মোড় নেয় ঘটনা।
অভিযুক্ত তখন শুরু করে ব্ল্যাকমেলিং। ওই মহিলার ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও এবং ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয় সে। শুধু তাই নয়, ওই ভিডিও পাঠিয়ে দেয় মহিলার স্বামীর মোবাইল ফোনে। ঘটনায় আতঙ্কিত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত গৃহবধূ ভীমপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
তবে অভিযুক্তের সঠিক নাম জানলেও তার ঠিকানা বা পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলেন না মহিলা। এরপর পুলিশের সঙ্গে পরামর্শ করে এক পরিকল্পনা করা হয়। সেই অনুযায়ী, গৃহবধূ ফের সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে দেখা করার প্রস্তাব দেন। সাদ্দাম তাতে রাজি হয় এবং ঠিক হয় নদিয়ার মাজদিয়া রেলস্টেশনে দেখা হবে।
ঠিক সেই সময়েই ভীমপুর থানার পুলিশ গোপনে সেখানে পৌঁছে যায়। সাদ্দাম সেখানে উপস্থিত হতেই তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতকে মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে তোলা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইন ও ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের ফোন ও অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, এমন প্রতারণা সে এর আগেও করেছে। এই কারণে তদন্তের পরিধি আরও বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সামাজিক মাধ্যমে পরিচয় গোপন করে প্রতারণা ও মহিলাদের ফাঁদে ফেলার প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। পুলিশ সাধারণ মানুষকে এই ধরনের সম্পর্ক থেকে সাবধান থাকার বার্তা দিয়েছে। একই সঙ্গে অল্প সন্দেহ থাকলেই থানায় যোগাযোগ করার অনুরোধ করেছে পুলিশ।
এই ঘটনার জেরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ভুক্তভোগী মহিলার পরিবার জানিয়েছে, অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি তারা জানিয়েছে আদালতের কাছে। এই ঘটনার পূর্ণ তদন্তের মাধ্যমে ভবিষ্যতে যেন কেউ এমন দুঃসাহস না দেখায়, তারও দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।