দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে আইপিএল ২০২৫ (IPL 2025) এক ম্যাচে রূপ নিয়েছিল এক মর্যাদার লড়াইয়ে। প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে যাওয়া দুই দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (Sunrisers Hyderabad) ও কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) মুখোমুখি হয়েছিল এক অনাড়ম্বর অথচ উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে। তবে মাঠে একতরফা দাপট দেখিয়ে হাদরাবাদ তুলে নেয় ১১০ রানের এক বিশাল জয়। একইসঙ্গে তিন ম্যাচের টানা জয়ে সমাপ্তি টানে তাদের এবারের আইপিএল অভিযান।
হায়দরাবাদের ব্যাটিং আগুন — ক্লাসেনের ঝড়ো সেঞ্চুরি
টস জিতে হায়দরাবাদের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন এবং শুরু থেকেই তার দল আগ্রাসী ব্যাটিং করে কলকাতার বোলারদের কোণঠাসা করে তোলে। ওপেনার অভিষেক শর্মা (১৬ বলে ৩২) এবং ট্রাভিস হেড (৪০ বলে ৭৬) প্রথম উইকেটে এনে দেন এক ঝড়ো সূচনা। দলীয় পঞ্চাশ পার হয়ে যায় মাত্র পাঁচ ওভারের মধ্যেই।
সপ্তম ওভারে প্রথম সাফল্য এনে দেন সুনীল নারিন, যিনি অভিষেককে ফিরিয়ে দেন। এরপর ১৩তম ওভারে নারিন আবারও আঘাত হানেন, এবার হেডকে ফিরিয়ে দিয়ে। তবে তারপর যা ঘটে, তা এক কথায় বিধ্বংসী। হেনরিখ ক্লাসেন ও ইশান কিশান গড়ে তোলেন এক অসাধারণ জুটি। কিশান (২০ বলে ২৯) ১৯তম ওভারে আউট হলেও অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ক্লাসেন মাত্র ৩৯ বলে তুলে নেন আইপিএল ইতিহাসের যৌথ-তৃতীয় দ্রুততম শতরান।
ক্লাসেনের ইনিংসটি ছিল ৭টি চার ও ৯টি ছক্কায় সাজানো ১০৫ রানের এক দুরন্ত ঝড়। শেষ ওভারে অনিকেত বর্মা (১২*), একটি চার ও একটি ছক্কা মেরে দলকে নিয়ে যান ২৭৮ রানে। এই বিশাল রানের পাহাড়টি কার্যত অতিক্রমের বাইরেই ছিল কলকাতার জন্য।
নাইটদের দুর্বল ব্যাটিং — কেকেআরের লজ্জার হার
২৭৯ রানের বিশাল লক্ষ্যে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় কেকেআর। ওপেনাররা দ্রুত উইকেট হারিয়ে বসেন এবং মাঝের ওভারে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দলটি। অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে ব্যর্থ হন, আর মিডল অর্ডারে কেউই দাঁড়াতে পারেননি।
মানিশ পাণ্ডে (২৩ বলে ৩৭) কিছুটা লড়াইয়ের চেষ্টা করলেও, সেটা যথেষ্ট ছিল না। হায়দরাবাদের বোলিং ইউনিট এদিন দারুণ ছন্দে ছিল। হর্ষ দুবে, জয়দেব উনাদকাত ও ঈষৎ মালিঙ্গা প্রত্যেকে তিনটি করে উইকেট নেন এবং কলকাতাকে ১৮.৪ ওভারে মাত্র ১৬৮ রানেই গুটিয়ে দেন।
মরসুমের হতাশা থেকে সম্মানজনক বিদায়
গত মরসুমে রানার্সআপ হওয়া সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ২০২৫-এ উচ্চ আশা নিয়ে মাঠে নেমেছিল। কিন্তু পুরো মরসুম জুড়ে ব্যাটিং ও বোলিং – উভয় বিভাগেই ধারাবাহিকতার অভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে শেষ তিনটি ম্যাচ জিতে তারা প্রমাণ করল, এই দলে প্রতিভার অভাব নেই — কেবল প্রয়োজন স্থায়িত্ব এবং সঠিক ছন্দের।
অন্যদিকে, কলকাতা নাইট রাইডার্সের পক্ষে এটি ছিল আরও হতাশার এক মরসুম। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মাঠে নামা দলটি কোথাও তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারেনি। অধিনায়ক রাহানের মুখে ম্যাচ শেষে হতাশার ছাপ স্পষ্ট ছিল।
ক্লাসেনের কীর্তি — ম্যাচের সেরা
এই ম্যাচে স্পটলাইটে ছিলেন নিঃসন্দেহে হেনরিখ ক্লাসেন। তার ৩৯ বলে ১০৫ রানের দুরন্ত ইনিংস দলকে একটি স্মরণীয় জয়ে সাহায্য করে। পাশাপাশি প্যাট কামিন্সের বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব এবং তরুণ বোলারদের পারফরম্যান্স। বিশেষ করে হর্ষ দুবে ও মালিঙ্গার বোলিং হায়দরাবাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করেছে।