আলিপুরদুয়ারের যুবককে পিটিয়ে খুন, নিহত মহম্মদ এমডি

আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar ) জয়গাঁর ভুটান সীমান্তবর্তী এলাকার ইলিয়াস নগরে এক রোমহর্ষক খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। শনিবার রাতে এলাকায় এক যুবককে পিটিয়ে নৃশংসভাবে খুন করা হয়।…

Alipurduar murder case

আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar ) জয়গাঁর ভুটান সীমান্তবর্তী এলাকার ইলিয়াস নগরে এক রোমহর্ষক খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। শনিবার রাতে এলাকায় এক যুবককে পিটিয়ে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। মৃত যুবকের নাম মহম্মদ এম.ডি. (৪০)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে খুনের অভিযোগে জেলে ছিলেন এবং মাত্র দুই দিন আগে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, মহম্মদ এম.ডি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তিনি এক বছর আগে একই এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ হোসেনকে খুন করেছিলেন। সেই মামলায় তিনি গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফেরেন। তবে বাড়ি ফেরার পর থেকেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে এলাকায়।

   

শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে এম.ডি-র সঙ্গে ফিরোজ হোসেনের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, কথাকাটাকাটি থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং এক পর্যায়ে কয়েকজন ব্যক্তি মিলে এম.ডিকে ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধর শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, লাঠি ও লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধরের ফলে ঘটনাস্থলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এম.ডি। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে জয়গাঁ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় জয়গাঁ থানার পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রতিহিংসা মূলক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। ফিরোজ হোসেন খুনের ঘটনার সঙ্গে এম.ডির নাম জড়িত থাকায় তাঁর জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত ব্যক্তির নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত ব্যক্তি ফিরোজ হোসেনের পরিবারের ঘনিষ্ঠ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি অভিযুক্তদের নাম ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র সম্পর্কে জানা যাবে বলে মনে করছে তদন্তকারী দল।

স্থানীয় মানুষদের দাবি, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে, না হলে এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। এলাকায় এখনও আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। বহু মানুষ পুলিশের কাছে নিরাপত্তার দাবিও জানিয়েছেন।

Advertisements

অন্যদিকে, মহম্মদ এম.ডি-র পরিবার এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছে। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশের কাছে আগাম আশঙ্কা জানানো হলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁর জামিনের পর থেকেই হুমকির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে ও সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুরো ঘটনা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই সমস্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে।”

এই হত্যাকাণ্ড আলিপুরদুয়ার জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে এবং কাউকে আইন হাতে তুলে নিতে দেওয়া হবে না।

এখন দেখার, পুলিশের তদন্ত কত দ্রুতগতিতে এগোয় এবং এই খুনের পিছনের আসল কারণ কতটা স্পষ্ট হয়। তবে এমন একটি ঘটনায় ফের একবার উঠে এলো সমাজে প্রতিহিংসার প্রবণতা ও আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন।