কর্মজীবী নারীদের পাশে সুপ্রিম কোর্ট, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে জোর

Maternity Leave verdict: মাতৃত্ব এক মহৎ অনুভূতির নাম। প্রতিটি নারীর জীবনে মাতৃত্ব এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে, যেখানে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।…

gavai told in waqf-hearing

Maternity Leave verdict: মাতৃত্ব এক মহৎ অনুভূতির নাম। প্রতিটি নারীর জীবনে মাতৃত্ব এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে, যেখানে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। এই সময় নারীদের জন্য প্রয়োজন বিশেষ যত্ন ও বিশ্রামের। আর তাই, মাতৃত্বকালীন ছুটি কোনও ‘অনুগ্রহ’ নয়, বরং এটি নারীর এক মৌলিক অধিকার। সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে সেই বার্তাই দিল। সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিল, কোনও নারীকে তার মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে বঞ্চিত করা একেবারেই অনৈতিক এবং আইনসঙ্গত নয়।

ঘটনাটি তামিলনাড়ুর এক সরকারি শিক্ষিকার সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি দ্বিতীয়বার বিবাহিত এবং সেই বৈবাহিক জীবনে তাঁর একটি সন্তান হয়। কিন্তু, রাজ্য সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, শুধুমাত্র প্রথম দুই সন্তানের জন্যই মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। যেহেতু তাঁর প্রথম বিবাহে দুই সন্তান ছিল, তাই সরকার তাঁর তৃতীয় সন্তানের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন খারিজ করে দেয়। শিক্ষিকা এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন।

   

শীর্ষ আদালত তার রায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, মাতৃত্বকালীন ছুটি একজন নারীর অধিকার, তা বিয়ের সংখ্যা বা সন্তান সংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত হতে পারে না। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, “মাতৃত্বকালীন ছুটি হল মাতৃত্বকালীন সুযোগ-সুবিধার একটি অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য অংশ।” এই ছুটি শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রের জন্যই নয়, বরং মা ও সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। আদালতের মতে, একজন নারীকে মাতৃত্বকালীন ছুটি না দেওয়া তার মর্যাদা ও অধিকার লঙ্ঘন করার সামিল।

এই রায় শুধু ওই শিক্ষিকার পক্ষে নয়, বরং দেশের সমস্ত কর্মজীবী নারীদের জন্য এক আশার আলো। এটি একটি দৃষ্টান্ত যা ভবিষ্যতে বহু নারীকে তাঁদের ন্যায্য অধিকার পেতে সহায়তা করবে।

Advertisements

এই রায়ের আগেই তামিলনাড়ু সরকার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়। তারা সরকারি মহিলা কর্মচারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ৯ মাস থেকে বাড়িয়ে ১২ মাস করেছে। এই সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়, কারণ এতে কর্মরত মায়েরা আরও বেশি সময় সন্তান ও নিজের যত্ন নিতে পারবেন। সেইসঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল— আগের নিয়মে প্রবেশন পিরিয়ডে থাকা মহিলা কর্মচারীরা এই ছুটি পেতেন না। কিন্তু এখন থেকে তাঁরা‌ও এই সুবিধার আওতায় আসবেন।

এইসব সিদ্ধান্ত কর্মক্ষেত্রে নারী-বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। অনেক সময় বেসরকারি সংস্থাগুলিতে দেখা যায়, মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে টালবাহানা করা হয়, অথবা কর্মচারীকে ছুটি না দিয়েই ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় সেইসব ক্ষেত্রেও একটি কড়া বার্তা হিসেবে কাজ করবে।

অবশেষে বলা যায়, মাতৃত্বকালীন ছুটি শুধুমাত্র আইনি বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক প্রয়োজন। একজন মা, তার নবজাতকের যত্ন নেওয়ার অধিকার রাখে এবং সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে রাষ্ট্র ও সমাজকে একসাথে কাজ করে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় সেই চেষ্টারই এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আশা করা যায়, এ ধরনের রায় ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমরা আরও নারী-সহায়ক সমাজ ও কর্মসংস্থান পরিবেশ গড়ে তুলতে পারব।