নদিয়ার করিমপুরের (Karimpur) আনন্দপল্লী এলাকায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মায়ের বিরুদ্ধে উঠেছে নিজের দুই ছেলের উপর নৃশংস আক্রমণের অভিযোগ। অভিযুক্ত রিঙ্কি মজুমদারের বিরুদ্ধে শিলনোড়া দিয়ে ছোট ছেলেকে খুন এবং বড় ছেলেকে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ছোট ছেলে অর্ঘ্যদেব মজুমদার (৮) মারা গেছে, এবং বড় ছেলে রুদ্রদেব মজুমদার (১২) বর্তমানে বহরমপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জীবন-মরণের সঙ্গে লড়াই করছে। অভিযুক্ত রিঙ্কি মজুমদারকে করিমপুর থানার পুলিশ আটক করেছে। এই ঘটনা এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ও শোকের সৃষ্টি করেছে।
ঘটনার বিবরণ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সূর্যদেব মজুমদার তাঁর স্ত্রী রিঙ্কি মজুমদার এবং দুই ছেলে—রুদ্রদেব এবং অর্ঘ্যদেব—নিয়ে আনন্দপল্লীতে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। গতকাল (২১ মে) দুপুরে সূর্যদেব কাজ থেকে বাড়ি ফিরে একটি ভয়ঙ্কর দৃশ্যের সম্মুখীন হন। তাঁর দুই ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে ছিল। সূর্যদেবের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন এবং তাঁরা জানান যে ঘটনার সময় রিঙ্কি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন। আহত শিশুদের দ্রুত করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের বহরমপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, হাসপাতালে যাওয়ার পথে ছোট ছেলে অর্ঘ্যদেব মারা যায়। বড় ছেলে রুদ্রদেব বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, এবং তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
অভিযুক্তের গ্রেপ্তার
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রিঙ্কি মজুমদার শিলনোড়া দিয়ে তাঁর দুই ছেলের উপর আক্রমণ চালিয়েছেন, যার ফলে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে রিঙ্কি পলাতক ছিলেন। আজ (২২ মে) সকালে তিনি বাড়ি ফিরলে স্থানীয়রা তাঁকে ঘিরে ধরে করিমপুর থানায় খবর দেয়। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে রিঙ্কি মজুমদারকে আটক করে। বর্তমানে তাঁকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
প্রাথমিক তদন্ত ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, রিঙ্কি মজুমদারের মানসিক ভারসাম্যহীনতা বা পারিবারিক কলহ এই ঘটনার পিছনে কারণ হতে পারে। তবে, ঘটনার সঠিক কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। করিমপুর থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা অভিযুক্তকে আটক করেছি এবং তদন্ত শুরু করেছি। শিশুদের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আমরা এই নৃশংস ঘটনার কারণ জানার চেষ্টা করছি।”
স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনায় গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একজন প্রতিবেশী বলেন, “একজন মা কীভাবে নিজের সন্তানের উপর এমন নৃশংস আক্রমণ করতে পারে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা চাই অভিযুক্ত কঠোর শাস্তি পাক।” আনন্দপল্লী এলাকায় এই ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে, এবং অনেকে শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সামাজিক ও মানসিক দিক
এই ঘটনা সমাজে শিশু নিরাপত্তা এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক চাপ, পারিবারিক অশান্তি বা অর্থনৈতিক সমস্যা এ ধরনের ঘটনার পিছনে কারণ হতে পারে। একজন মনোবিদ বলেন, “মানসিক ভারসাম্যহীনতা থেকে এমন চরম পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। এই ধরনের ঘটনা রোধ করতে পরিবারের সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।”
প্রশাসনের ভূমিকা
পুলিশ জানিয়েছে, তারা ঘটনার সব দিক তদন্ত করছে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান সংগ্রহ করা হচ্ছে। রিঙ্কি মজুমদারের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন) এবং ৩২৬ (গুরুতর আঘাত) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আগামী দিনে তাঁকে আদালতে পেশ করা হবে। এছাড়া, প্রশাসন রুদ্রদেবের চিকিৎসার জন্য সব ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে।
করিমপুরের আনন্দপল্লীতে এই মর্মান্তিক ঘটনা শুধু একটি পরিবারের দুর্ভাগ্যের গল্প নয়, সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা। একজন মায়ের হাতে সন্তানের মৃত্যু এবং অপর সন্তানের জীবন-মরণ সংগ্রাম মানুষের মনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে শিশু নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক সুস্থতার দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার পূর্ণ সত্য উদঘাটন করবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং দোষী ব্যক্তির শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।