১৯ মে থেকে জুনের ফিফা আন্তর্জাতিক উইন্ডোর জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে ভারতীয় ফুটবল দল (Indian Football Team)। আগামী ৪ জুন থাইল্যান্ডের (Thailand) পাথুম থানিতে একক প্রীতি ম্যাচ খেলবে ভারত। এরপর ১০ জুন কোলুন সিটিতে এএফসি এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর বাছাই (AFC Asian Cup 2027 Qualifier) পর্বে হংকংয়ের (Hong Kong) মুখোমুখি হবে মানোলো মার্কুয়েজের (Manolo Marquez) ছাত্ররা।
হেড কোচ মানোলো মার্কুয়েজ ২৮ জন সম্ভাব্য খেলোয়াড়কে ডাক দিয়েছেন, যার মধ্যে ২৬ জন প্রথম দিনেই অনুশীলনে অংশ নেন। ডিফেন্ডার রাহুল ভেকে সম্প্রতি বাবা হয়েছেন, তিনি ২৩ মে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। মিডফিল্ডার আশিক কুরুনিয়ান অসুস্থ থাকায় ২১ মে থেকে অনুশীলনে নামবেন। ২৮ মে ভারতীয় দল থাইল্যান্ড রওনা দেবে।
মানোলো মার্কুয়েজ বলেন, “আমাদের আরও অনেক উন্নতি করতে হবে, কারণ আমি মনে করি, প্রতিটি ফিফা উইন্ডোতে দল উন্নতির দিকে যাচ্ছিল, শুধুমাত্র শেষটি ছাড়া।”
মার্চ মাসে মালদ্বীপের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে জয় এলেও, বাংলাদেশের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র ভারতীয় কোচের কাছে সন্তোষজনক ছিল না। সেই ম্যাচটি ছিল এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের প্রথম খেলা এবং প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দুর্বল পারফরম্যান্স ছিল।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের বিপক্ষে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ শুরুর একাদশের খেলোয়াড় হারিয়েছিলাম, এটা সত্যি। কিন্তু এটা আমাদের খারাপ পারফরম্যান্সের অজুহাত হতে পারে না। আমাদের বুঝতে হবে যে হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচটি কঠিন হবে। আমাদের হাতে সময় আছে প্রস্তুতির জন্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য এবং তিন পয়েন্ট নেওয়ার জন্য।”
গ্রুপ ‘সি’-র অন্য ম্যাচে সিঙ্গাপুর এবং হংকং ০-০ গোলে ড্র করে, ফলে প্রথম ম্যাচের পর চারটি দলই এক পয়েন্ট করে পেয়েছে। আগামী ১০ জুন হংকং স্বাগতিক হিসেবে ভারতের মুখোমুখি হবে, অন্যদিকে সিঙ্গাপুর যাবে ঢাকা, বাংলাদেশের মুখোমুখি হতে। শুধুমাত্র গ্রুপ চ্যাম্পিয়নই যোগ্যতা অর্জন করবে এএফসি এশিয়ান কাপ সৌদি আরব ২০২৭-এর জন্য।
মার্কুয়েজ বলেন, “বাংলাদেশ কোচ জাভি কাবরেরার সঙ্গে ম্যাচের আগে আমার কথা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, এই গ্রুপে কেউ বলতে পারবে না কে প্রথম হবে আর কে শেষ। প্রত্যেক দলই অন্য দলকে হারাতে সক্ষম। প্রথম দিনের ফলাফলের পর আমি বলেছিলাম, ও ঠিকই বলেছে। এখন চার দল এক পয়েন্টে। যেন সবকিছু আবার নতুন করে শুরু হচ্ছে, পাঁচটা ম্যাচ বাকি।”
ভারত, গ্রুপে সবচেয়ে উচ্চ র্যাংকিংয়ের দল হিসেবে পট ১-এ থাকলেও, হংকংয়ের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচটি সবচেয়ে কঠিন মনে করছেন কোচ। তবে তার মতে, প্রতিটি ম্যাচই প্রায় সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এবং ফলাফল নির্ধারিত হবে সূক্ষ্ম ফারাক দিয়ে।
তিনি বলেন, “আমি সিঙ্গাপুর বনাম হংকং ম্যাচ দেখেছি। প্রথমার্ধে সিঙ্গাপুর ভালো খেলেছে, দ্বিতীয়ার্ধে হংকং। এটা ছিল খুবই সমান একটি ম্যাচ, যেমন ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ।”
আগামী ম্যাচ থাইল্যান্ডের বিপক্ষে, যাদের র্যাংকিং ৯৯ এবং ভারতের চেয়ে ২৮ ধাপ এগিয়ে। এই ম্যাচটি ভারতের জন্য প্রস্তুতির দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কোচ। সেই প্রসঙ্গে কোচ বলেন, “থাইল্যান্ডকে আমি হংকং ম্যাচের জন্য ভালো প্রস্তুতি হিসেবে দেখছি, কারণ ওরা পট ১-এর দল। আমি ওদের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দেখেছি, যেখানে তারা মাত্র ১-০ ব্যবধানে জিতেছে। আমার মনে হয়েছে শ্রীলঙ্কার হারার কথা ছিল না।”
এইবার ভারতীয় ক্যাম্পে কয়েকজন নতুন মুখ আছেন, যারা আইএসএল এবং কলিঙ্গ সুপার কাপে ভালো পারফরম্যান্সের জন্য প্রথমবার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন। মোহনবাগান ফরোয়ার্ড সুহেল আহমেদ ভাট, এফসি গোয়ার গোলরক্ষক ঋতিক তিওয়ারি এবং পাঞ্জাব এফসির মিডফিল্ডার নিখিল প্রভু রয়েছেন এই তালিকায়।
মানোলো মার্কুয়েজ বলেন, “সুহেল খুব ভালো মুভমেন্ট করে আক্রমণে। আমরা সুপার কাপে দেখেছি সে কিভাবে সুযোগ তৈরি করে এবং গোল করতে পারে।”
“ঋতিককে আমি খুব ভালো করে চিনি। আমার মতে, সে ভারতের শীর্ষ গোলকিপারদের একজন হয়ে উঠবে। নিখিল আগে সেন্টার-ব্যাক খেলত, এখন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবেও ভালো করছে। বল নিয়ন্ত্রণে দক্ষ, হেডিংয়ে উন্নতি করেছে, এবং ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়,” বলেন কোচ।
ভারতের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ, এবং সেই পথচলা শুরু হল কলকাতার গরমে ঘাম ঝরিয়ে। এখন দেখার, ব্লু টাইগার্সরা কতটা সফল হয় নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে।