ভারত কোনও ধর্মশালা নয় যে সারা বিশ্বের শরণার্থীদের আশ্রয় দেবে, বলে সোমবার সুপ্রিম কোর্ট (supreme-court)স্পষ্ট মন্তব্য করেছে। শ্রীলঙ্কার এক নাগরিকের শরণার্থী হিসেবে ভারতে থাকার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে আদালত এই মন্তব্য করে। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি কে ভিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ এই মামলার শুনানি করছিল।
আবেদনকারী শ্রীলঙ্কার তামিল নাগরিক, যিনি ২০১৫ সালে শ্রীলঙ্কার জঙ্গি সংগঠন লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (এলটিটিই)-এর সঙ্গে সংযোগের সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে, একটি বিচারিক আদালত তাকে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের (ইউএপিএ) অধীনে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
২০২২ সালে, মাদ্রাস হাইকোর্ট (supreme-court)তার সাজা কমিয়ে সাত বছর করে, কিন্তু নির্দেশ দেয় যে, সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তাকে অবিলম্বে দেশ ছাড়তে হবে এবং নির্বাসনের আগে তাকে একটি শরণার্থী শিবিরে থাকতে হবে।
আবেদনকারীর যুক্তি
আবেদনকারী শ্রীলঙ্কার তামিল নাগরিক সুপ্রিম কোর্টে (supreme-court)জানান, তিনি ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছিলেন এবং তার নিজ দেশে ফিরে গেলে তার জীবন বিপন্ন হবে। তিনি আরও বলেন, তার স্ত্রী এবং সন্তানরা ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনি প্রায় তিন বছর ধরে আটকে রয়েছেন, এবং তার নির্বাসন প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি।
তার আইনজীবী ভারতের সংবিধানের ২১ নং অনুচ্ছেদ (জীবন ও স্বাধীনতার সুরক্ষা) এবং ১৯ নং অনুচ্ছেদের (মৌলিক অধিকার, যার মধ্যে বাকস্বাধীনতা এবং চলাফেরার স্বাধীনতা রয়েছে) অধীনে এই মামলার যুক্তি উপস্থাপন করেন।
সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য (supreme-court)
এই যুক্তির জবাবে বিচারপতি দত্ত (supreme-court)বলেন, “ভারত কি সারা বিশ্বের শরণার্থীদের আশ্রয় দেবে? আমরা ১৪০ কোটি মানুষের জন্য ইতিমধ্যেই লড়াই করছি। এটি কোনও ধর্মশালা নয় যে আমরা সব বিদেশি নাগরিককে আশ্রয় দিতে পারি।” আদালত আরও বলে, আবেদনকারীর আটক ২১ নং অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন করে না, কারণ তাকে আইন অনুযায়ী হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
আদালত স্পষ্ট করে যে, ১৯ নং অনুচ্ছেদ শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য। বিচারপতি দত্ত প্রশ্ন করেন,(supreme-court) “এখানে বসবাসের আপনার কী অধিকার আছে?” আবেদনকারীর আইনজীবী যখন জোর দিয়ে বলেন যে, তিনি একজন শরণার্থী এবং শ্রীলঙ্কায় তার জীবন বিপন্ন, তখন আদালত তাকে পরামর্শ দেয় যে, তিনি অন্য কোনও দেশে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে পারেন। আদালত বলে, “আপনি যদি শরণার্থী হন এবং আপনার জীবন শ্রীলঙ্কায় বিপন্ন, তাহলে অন্য কোনও দেশে যান। ভারত কেন আপনাকে আশ্রয় দেবে?”
মামলার পটভূমি
আবেদনকারী ২০১৫ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হন, যখন তার এলটিটিই-এর সঙ্গে সংযোগের সন্দেহ করা হয়। এলটিটিই শ্রীলঙ্কায় একসময় সক্রিয় একটি জঙ্গি সংগঠন ছিল, যা তামিল স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছিল। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী এলটিটিই-কে পরাজিত করে, কিন্তু এর কিছু সমর্থক এখনও বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন। ভারতে, বিশেষ করে তামিলনাড়ুতে, অনেক শ্রীলঙ্কার তামিল শরণার্থী শিবিরে থাকেন।
আবেদনকারীর দাবি ছিল,(supreme-court) তিনি ভিসা নিয়ে ভারতে এসেছিলেন এবং শ্রীলঙ্কায় ফিরে গেলে তিনি নির্যাতন বা হত্যার শিকার হতে পারেন। তিনি আরও বলেন, তার পরিবার ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে, এবং তাই তাকে ভারতে থাকার অনুমতি দেওয়া উচিত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এই যুক্তি গ্রহণ করেনি।
পরবর্তী সিজনে ব্যাঙ্গালুরু সম্ভাব্য তালিকায় বাদ এই চার ক্রিকেটার!
ভারতের শরণার্থী নীতি
ভারত শরণার্থীদের বিষয়ে ১৯৫১ সালের জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। (supreme-court)তাই ভারতের কোনও আনুষ্ঠানিক শরণার্থী নীতি নেই। তবে, ভারত ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে, যেমন তিব্বতি শরণার্থী, বাংলাদেশের চাকমা শরণার্থী এবং শ্রীলঙ্কার তামিল শরণার্থী। এই শরণার্থীরা সাধারণত নির্দিষ্ট শিবিরে থাকেন এবং তাদের নির্বাসন বা পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া দীর্ঘসময় ধরে চলে।
সুপ্রিম কোর্টের (supreme-court)এই মন্তব্য ভারতের শরণার্থী নীতির উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে। আদালতের ‘ধর্মশালা’ মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, ভারত তার জনসংখ্যার চাপ এবং অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে অসীম সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে নয়। বিচারপতি দত্তের মন্তব্যে দেশের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার প্রেক্ষাপট উল্লেখ করা হয়েছে, যা শরণার্থী গ্রহণের ক্ষেত্রে ভারতের সীমাবদ্ধতাকে তুলে ধরে।
আইনি দৃষ্টিকোণ
আবেদনকারীর আইনজীবী (supreme-court)যুক্তি দিয়েছিলেন যে, তার মক্কেলের জীবনের নিরাপত্তা ২১ নং অনুচ্ছেদের অধীনে সুরক্ষিত। কিন্তু আদালত বলে, এই অনুচ্ছেদের অধীনে আবেদনকারীর আটক বেআইনি নয়, কারণ তিনি একটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সংযোগের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ১৯ নং অনুচ্ছেদের অধীনে মৌলিক অধিকার শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য, তাই আবেদনকারী এই অ*ইতিমধ্যে তার সুযোগ নেই।
প্রভাব ও ভবিষ্যৎ
এই রায় শ্রীলঙ্কার তামিল শরণার্থীদের জন্য ভারতের নীতির উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। তামিলনাড়ুর শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী হাজার হাজার শ্রীলঙ্কার তামিল এই রায়ের পর তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারেন। আদালতের পরামর্শ যে আবেদনকারী অন্য দেশে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করুন, তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হতে পারে, কারণ অনেক শ্রীলঙ্কার তামিলের অন্য দেশে আশ্রয় পাওয়ার সুযোগ সীমিত।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ভারতের শরণার্থী নীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি তার কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। আবেদনকারীর শরণার্থী হিসেবে থাকার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে আদালত স্পষ্ট করেছে যে, ভারত অসীম সংখ্যক বিদেশি নাগরিককে আশ্রয় দেওয়ার পক্ষপাতী নয়, বিশেষ করে যখন তাদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে সংযোগের অভিযোগ থাকে। এই রায় শ্রীলঙ্কার তামিল শরণার্থীদের ভবিষ্যৎ এবং ভারতের শরণার্থী নীতির উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।