অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (himanta) শনিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন যে, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে বিদেশে পাঠানো সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের জন্য কংগ্রেস কর্তৃক মনোনীত চার সাংসদের তালিকা থেকে অসমের একজন সাংসদকে বাদ দেওয়া হোক।
হিমন্ত কী বলছেন (himanta)
কংগ্রেসের লোকসভার উপনেতা গৌরব গগৈয়ের নাম সরাসরি উল্লেখ না করে, যিনি মনোনীত চার সাংসদের মধ্যে রয়েছেন, শর্মা (himanta)বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে” তাকে এই প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়। শর্মা (himanta)গৌরব গগৈয়ের বিরুদ্ধে তার ব্রিটিশ স্ত্রী এলিজাবেথ কোলবার্নের মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ তুলে আসছেন এবং দাবি করেছেন যে জোড়হাটের এই সাংসদ প্রশাসনকে না জানিয়ে প্রতিবেশী দেশে ১৫ দিন অবস্থান করেছিলেন।
গুয়াহাটিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শর্মা (himanta)বলেন, “কংগ্রেসের তালিকায় একজন সাংসদ রয়েছেন, যিনি পাকিস্তানে প্রায় দুই সপ্তাহ অবস্থানের বিষয়টি অস্বীকার করেননি। নথি থেকে জানা যায়, তার স্ত্রী ভারতে কাজ করার সময় পাকিস্তান-ভিত্তিক একটি এনজিও থেকে বেতন গ্রহণ করেছিলেন।”
রাহুল গান্ধীর কাছে অনুরোধ
তিনি রাহুল গান্ধীর কাছে এই সাংসদকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অনুরোধ জানান, যাতে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে কোনো আপস না হয়। শর্মা (himanta)জোর দিয়ে বলেন, “এই বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। আমরা বিশ্বের কাছে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান তুলে ধরতে যাচ্ছি, এবং এই প্রতিনিধি দলে এমন কাউকে থাকা উচিত নয়, যার উপর সন্দেহের ছায়া রয়েছে।”
সাতটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন
সাতটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন কংগ্রেস নেতা শশি থারুর, বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ, জেডি(ইউ) নেতা সঞ্জয় কুমার ঝা, বিজেপি নেতা বৈজয়ন্ত পান্ডা, ডিএমকে নেতা কানিমোঝি করুণানিধি, এনসিপি (এসপি) নেতা সুপ্রিয়া সুলে এবং শিবসেনা নেতা শ্রীকান্ত একনাথ শিন্ডে। এই প্রতিনিধি দলগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জাপানের মতো দেশগুলিতে যাবে।
শর্মার (himanta)অভিযোগগুলি গৌরব গগৈয়ের বিরুদ্ধে তার পূর্ববর্তী মন্তব্যের ধারাবাহিকতা। তিনি দাবি করেছেন যে গগৈ ব্যক্তিগত ক্ষমতায় পাকিস্তানে ১৫ দিন কাটিয়েছেন এবং সেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এছাড়াও, তিনি অভিযোগ করেছেন যে গগৈয়ের স্ত্রী এলিজাবেথ কোলবার্ন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একাধিকবার যাতায়াত করেছেন এবং পাকিস্তান-ভিত্তিক একটি এনজিওর সঙ্গে তার আর্থিক সম্পর্ক ছিল।
পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য পাচার! হরিয়ানার ব্লগার-সহ গ্রেফতার ৬
জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি
শর্মা (himanta)এই অভিযোগগুলিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ তুলে বিশ্ব মঞ্চে তার অবস্থান জোরদার করছে। গৌরব গগৈ এই অভিযোগগুলি বারবার অস্বীকার করেছেন এবং শর্মাকে তার দাবির পক্ষে প্রমাণ পেশ করতে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই অভিযোগগুলি ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি আমার দেশের প্রতি পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো আপস করার প্রশ্নই ওঠে না।” গগৈ আরও অভিযোগ করেছেন যে শর্মা ব্যক্তিগত আক্রমণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এই বিতর্ক অসমের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে ইতিমধ্যেই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে, এবং শর্মার (himanta)এই মন্তব্য দুই দলের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়িয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শর্মার এই আক্রমণ গৌরব গগৈয়ের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাবকে ক্ষুণ্ন করার একটি কৌশল হতে পারে, বিশেষ করে যখন তিনি লোকসভায় কংগ্রেসের উপনেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
এদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠানোর উদ্যোগকে ভারতের কূটনৈতিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে পাকিস্তানে নয়টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারত বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তার অবস্থান তুলে ধরতে তৎপর।
শর্মার (himanta)এই আহ্বান কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কংগ্রেস নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, এই বিতর্ক জাতীয় নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে বৃহত্তর আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আগামী দিনে এই ঘটনা অসম এবং জাতীয় রাজনীতিতে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়।