আয় বাড়লেও লাভ কমল সিইএসসি’র 

রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থা CESC (ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন) জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে আয় বৃদ্ধির মুখ দেখলেও, কমেছে সংস্থার নিট লাভ। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে,…

CESC kolkata

রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থা CESC (ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন) জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে আয় বৃদ্ধির মুখ দেখলেও, কমেছে সংস্থার নিট লাভ। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এই সময়কালে তাদের লাভ ৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮৫ কোটি টাকায়। গত বছর একই ত্রৈমাসিকে সংস্থার লাভ ছিল ৪১৫ কোটি টাকা। অথচ ওই একই সময়ে আয় বেড়ে হয়েছে ৪০৩০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের ৩৪৬০ কোটি টাকার তুলনায় প্রায় ১৬.৪% বেশি।

এই মিশ্র পারফরম্যান্স ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষত যেখানে আয় বাড়ছে, সেখানে নিট লাভ কমে যাওয়াটা বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষেত্রে খরচ বৃদ্ধিরই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন শিল্পবিশেষজ্ঞরা।

   

আয়ের উত্থান: চাহিদা ও খরচ দুয়েরই প্রভাব
CESC-এর মতে, বিদ্যুৎ ব্যবহারের চাহিদা গত এক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিশেষত গ্রীষ্মের দাবদাহ এবং শিল্প ও আবাসিক ক্ষেত্রে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে। এর পাশাপাশি ট্যারিফ রিভিশনের কিছু ইতিবাচক প্রভাবও আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। তবে খরচের লাগাম টানতে না পারাই লাভের ঘাটতির মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, কয়লার দাম বৃদ্ধি, জ্বালানি পরিবহনের খরচ, এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালনে ব্যবহৃত পরিকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধির ফলে সংস্থার মোট ব্যয়ও অনেকটাই বেড়েছে। ফলে আয় বাড়লেও, মুনাফার অঙ্কে ধাক্কা খেতে হয়েছে CESC-কে।

কেন কমল মুনাফা?
CESC-এর আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, উৎপাদন খরচ, পরিকাঠামো উন্নয়ন, এবং কর্মীদের বেতন সংক্রান্ত ব্যয়গত দিকগুলি গত ত্রৈমাসিকে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সংস্থার আধিকারিকরা জানান, “আমাদের আয় বাড়লেও, কিছু অবধারিত খরচ এবং জ্বালানি সংক্রান্ত খরচে দ্রুত বৃদ্ধি আমাদের প্রফিট মার্জিনে চাপ সৃষ্টি করেছে।”

এছাড়াও, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়লার আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দামের ওঠানামাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। কয়লা আমদানিতে দেরি ও ব্যয়বৃদ্ধিও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

দেশের একমাত্র মনোপলি বিদ্যুৎ সংস্থা
CESC দেশের একমাত্র এমন বিদ্যুৎ সংস্থা যাদের নির্দিষ্ট অঞ্চলে সরবরাহে একাধিকার রয়েছে। সংস্থাটি মূলত কলকাতা ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে প্রায় ৩৩ লক্ষ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। মনোপলি হওয়ার ফলে বাজার প্রতিযোগিতার চাপ থেকে কিছুটা মুক্ত হলেও, অভ্যন্তরীণ ব্যয় ও উৎপাদন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ সংস্থাকে সমস্যায় ফেলছে। তবে সিইএসসি কর্তৃপক্ষ আশাবাদী। তারা মনে করছেন, আগামী ত্রৈমাসিকে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যয় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে লাভের অঙ্ক ফের বাড়বে।

বিনিয়োগকারী এবং গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া
লাভ কমার খবর শুনে শেয়ারবাজারে CESC-এর শেয়ার দামে সামান্য পতন লক্ষ্য করা যায়। যদিও সংস্থার দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি ও স্থিতিশীল গ্রাহকভিত্তি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রেখেছে।

গ্রাহক পর্যায়ে অবশ্য এই মুনাফা হ্রাসের কোনও সরাসরি প্রভাব নেই বলেই জানা গিয়েছে। তবে ভবিষ্যতে বিদ্যুতের ট্যারিফ বাড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।

সবমিলিয়ে, CESC-এর আয় বাড়া সত্ত্বেও মুনাফা হ্রাস পাওয়া একটি বড় আর্থিক চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে। খরচ নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদনের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সংস্থাটি ফের মুনাফা বৃদ্ধির পথে ফিরবে বলেই আশাবাদী কর্পোরেট মহল।