মোদী জমানায় প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে বিপুল আয় ভারতের

India Defense Exports: প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার অঙ্গীকারে এগিয়ে চলেছে ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিগত এক দশকে ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পে এসেছে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। ‘আত্মনির্ভর ভারত’…

India Defense Exports

India Defense Exports: প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার অঙ্গীকারে এগিয়ে চলেছে ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিগত এক দশকে ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পে এসেছে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। ‘আত্মনির্ভর ভারত’ (Atmanirbhar Bharat) কর্মসূচির অন্তর্গত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রটি শুধুমাত্র নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষেত্রেও আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই উদ্যোগের ফলেই ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যেখানে ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি ছিল মাত্র ₹৬৮৬ কোটি, সেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ₹২৩,৬২২ কোটিতে — যা ৩৪ গুণ বৃদ্ধি।

এই বিশাল অগ্রগতির পেছনে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক উদ্যোগ, যেমন স্বদেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে উৎসাহ, বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ, প্রযুক্তি স্থানান্তরের প্রক্রিয়া সহজ করা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সরাসরি প্রতিরক্ষা প্রকল্পে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান। একইসঙ্গে দেশীয় প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলিকে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বমানের অস্ত্র ও সরঞ্জাম উৎপাদনে সক্ষম করে তোলা হয়েছে।

   

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, আজ ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম, যেমন: লাইট হেলিকপ্টার, সিমুলেটর, রাডার, সার্ভেলান্স সিস্টেম, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, ট্রাক, ও যুদ্ধ সরঞ্জাম সংবলিত সফটওয়্যার। এইসব রপ্তানি প্রধানত হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। এমনকি কিছু ইউরোপীয় দেশও ভারতীয় প্রতিরক্ষা পণ্যের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

এই সাফল্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘ডিফেন্স প্রোডাকশন অ্যান্ড এক্সপোর্ট প্রোমোশন পলিসি ২০২০’ (DPEPP 2020)। এই নীতিমালার আওতায় সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে ₹১.৭৫ লক্ষ কোটি মূল্যের প্রতিরক্ষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, যার মধ্যে ₹৩৫,০০০ কোটি রপ্তানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Advertisements

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রবৃদ্ধি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত দিক থেকেও ভারতের অবস্থানকে মজবুত করছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির ফলে বিদেশ নির্ভরতা কমে আসছে, যা ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিতে এক বড় সুবিধা। পাশাপাশি, দেশীয় গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানোয় DRDO-র মতো সংস্থাগুলির উদ্ভাবনী ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এই প্রসঙ্গে বলেন, “ভারত এখন শুধুমাত্র অস্ত্র আমদানিকারক দেশ নয়, বরং একটি প্রতিরক্ষা রপ্তানিকারক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার ফল।”

তবে সমালোচকরা মনে করছেন, যদিও রপ্তানি বেড়েছে, তবু প্রযুক্তির উচ্চমান নিশ্চিতকরণ এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য আরও অধিক বিনিয়োগ ও দক্ষতা উন্নয়নের প্রয়োজন আছে। এছাড়াও, রপ্তানির পাশাপাশি সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণে জোর দেওয়া জরুরি।

সব মিলিয়ে, মোদী জমানায় ভারতের প্রতিরক্ষাক্ষেত্র এক নতুন দিগন্তে পৌঁছেছে। বিশ্ববাজারে ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের চাহিদা বাড়ছে, এবং এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ভারত একটি প্রধান প্রতিরক্ষা রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হতে পারে।