সীমান্ত নিয়ে চিনকে কড়া জবাব ভারতের

India China border dispute: অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে আবারও আগ্রাসী মনোভাব দেখাল চিন। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে চিনের সিভিল এভিয়েশন মন্ত্রক একটি নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে,…

India Strongly Rejects China's Renaming Tactic in Arunachal Pradesh Border Dispute

India China border dispute: অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে আবারও আগ্রাসী মনোভাব দেখাল চিন। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে চিনের সিভিল এভিয়েশন মন্ত্রক একটি নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে, যেখানে অরুণাচল প্রদেশের ২৭টি স্থানের নতুন নাম দেওয়া হয়। পাশাপাশি চিনের সরকার-ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যমগুলি দাবি করে, এই অঞ্চলগুলি নাকি তাদের ভূখণ্ডের অন্তর্গত। মোট ৩০টি জায়গার নাম বদলে নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় মেতে উঠেছে বেজিং। তবে এবার আর চুপ থাকেনি ভারত। সীমান্ত ইস্যুতে চিনকে কড়া ভাষায় জবাব দিল নয়াদিল্লি।

ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, অরুণাচল প্রদেশ ভারতেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ, ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমাদের নজরে এসেছে যে চিন ভারতের অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন স্থানের নাম বদল করার চেষ্টা করছে। আমরা এই প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করছি। নতুন নাম দিলেই এই বাস্তবতা বদলাবে না।”

   

বিদেশ মন্ত্রকের কড়া অবস্থান এই বার্তা দেয় যে চিন যতই মানচিত্রে নাম বদল করুক না কেন, তা ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার কোনও পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না। ভারতের আধিকারিক মহলের মতে, চিনের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং এটি একটি উস্কানিমূলক চেষ্টা। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর থেকেই ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে, বিশেষ করে অরুণাচল প্রদেশ এবং লাদাখ অঞ্চলে।

চিনের তরফে এই ধরনের মানচিত্র প্রকাশ করাকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের ভূখণ্ডের উপর ক্রমবর্ধমান দাবিকে জোরদার করার কৌশল। ২০১৭ সালেও চিন এই ধরনের ‘জিওগ্রাফিক নাম’ বদলের চেষ্টা করেছিল, যেখানে ৬টি স্থানের নাম পাল্টে নিজেদের বলে দাবি করা হয়। সেই সময়েও ভারত তীব্রভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল।

এই প্রেক্ষিতে এবার ভারতের পদক্ষেপ আরও কঠোর। শুধু বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে, ভারত ডিজিটাল মাধ্যমে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। চিনের সরকারি মুখপত্র Global Times এবং রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা Xinhua-এর X (প্রাক্তন টুইটার) অ্যাকাউন্ট ভারতে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, এই অ্যাকাউন্টগুলি ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করছে এবং চিনা প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে কাজ করছে।

ভারতের এই পদক্ষেপে স্পষ্ট বার্তা—ডিজিটাল বা ভূ-রাজনৈতিক, কোনও ক্ষেত্রেই চিনের আগ্রাসন বরদাস্ত করা হবে না। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভারত তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ভারত বারবার বলেছে, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অঙ্গ এবং সেখানকার বাসিন্দারা ভারতীয় নাগরিক, যাদের চিনের দাবি ঘৃণ্য এবং অযৌক্তিক।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৪ সালে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান আগের থেকে অনেক বেশি দৃঢ় এবং আত্মবিশ্বাসী। একদিকে যেমন বাণিজ্যিক ও কৌশলগতভাবে বিশ্বমঞ্চে ভারতের গুরুত্ব বেড়েছে, অন্যদিকে জাতীয় নিরাপত্তা এবং ভূখণ্ড রক্ষা করতেও ভারত এখন অনেক বেশি সক্রিয়।

সীমান্ত সমস্যা নিয়ে চিনের এই একতরফা দাবিকে শুধু ভারত নয়, আন্তর্জাতিক মহলও গুরুত্ব সহকারে দেখছে। আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া সহ বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যেই ভারতের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, সীমান্ত ইস্যুতে ভারত এখন আর কোনও রকম সমঝোতার পথে হাঁটবে না। চিনের নাম বদলের খেলায় ভারতের জবাব—”নাম বদলালে ভূখণ্ড বদলায় না।” অরুণাচল ছিল, আছে এবং থাকবে ভারতেরই অঙ্গ।