ভারতের নির্বাচন কমিশন (election-commission) ভোটার তালিকাকে শুদ্ধ ও আপডেট রাখার প্রচেষ্টায় একটি প্রায় ২০ বছরের পুরনো সমস্যার সমাধান করেছে। ২০০৫ সাল থেকে বিভিন্ন নির্বাচনী নিবন্ধন কর্মকর্তা (ইআরও) কর্তৃক একই ধরনের সিরিজ ব্যবহারের কারণে ভুলবশত একই ইপিক (ইলেক্টরাল ফটো আইডেন্টিটি কার্ড) নম্বর একাধিক প্রকৃত ভোটারকে জারি করা হয়েছিল।
নির্বাচন কমিশন একটি ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে
এই দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের জন্য নির্বাচন কমিশন (election-commission) একটি ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার ফলে প্রকৃত ভোটারদের নতুন ইপিক নম্বর সহ নতুন কার্ড জারি করা হয়েছে। ইসিআই সূত্র জানিয়েছে, এই সমস্যা সমাধানের জন্য ৯৯ কোটিরও বেশি ভোটারের সম্পূর্ণ নির্বাচনী ডেটাবেস পরীক্ষা করা হয়েছে।
দেশের ৩৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা (election-commission) (সিইও) এবং ৪,১২৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের ইআরও-রা এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন। ভারতের ১০.৫০ লক্ষ ভোটকেন্দ্রে গড়ে প্রতিটি কেন্দ্রে প্রায় ১,০০০ ভোটার রয়েছেন। তদন্তে দেখা গেছে, একই ধরনের ইপিক নম্বরের সংখ্যা খুবই নগণ্য, অর্থাৎ গড়ে প্রতি চারটি ভোট কেন্দ্রে একটি করে ক্ষেত্রে এমন সমস্যা পাওয়া গেছে।
ক্ষেত্রস্তরে যাচাইয়ের সময় দেখা গেছে
ক্ষেত্রস্তরে যাচাইয়ের সময় দেখা গেছে, একই ইপিক নম্বরধারী ব্যক্তিরা বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্র এবং ভোটকেন্দ্রের প্রকৃত ভোটার। এই সমস্ত ভোটারদের ইতিমধ্যে নতুন ইপিক নম্বর সহ নতুন কার্ড জারি করা হয়েছে। এই উদ্যোগ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং নির্ভুলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ইসিআই জানিয়েছে (election-commission)
ইসিআই (election-commission) জানিয়েছে, এই সমস্যার উৎপত্তি ২০০৫ সালে, যখন বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বিধানসভা কেন্দ্রভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন আলফানিউমেরিক সিরিজ ব্যবহার করত। এই সিরিজগুলো বিকেন্দ্রীভূতভাবে পরিচালিত হত। ২০০৮ সালে নির্বাচনী এলাকার পুনর্সীমায়নের পর এই সিরিজগুলো পরিবর্তন করা হয়।
তবে, এই সময়কালে কিছু বিধানসভা কেন্দ্র ভুলবশত পুরনো সিরিজ ব্যবহার অব্যাহত রাখে অথবা টাইপোগ্রাফিক ত্রুটির কারণে অন্য কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দকৃত সিরিজ ব্যবহার করে। এর ফলে একই ইপিক নম্বর একাধিক ভোটারের কাছে জারি হয়।
Bangladesh: মধ্যরাতে লুঙ্গি পরে থাইল্যান্ডে পালালেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, ঢাকায় শোরগোল
নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করেছে
নির্বাচন কমিশন (election-commission) স্পষ্ট করেছে, প্রত্যেক ভোটারের নাম তাঁর সাধারণ বসবাসের ভোটকেন্দ্রের ভোটার তালিকায় নথিভুক্ত থাকে। একই ইপিক নম্বর থাকার কারণে কোনও ব্যক্তি অন্য কোনও ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে পারেননি। ফলে, এই সমস্যা কোনও নির্বাচনের ফলাফলের উপর প্রভাব ফেলেনি। তবুও, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে এই সমস্যার সমাধান অত্যন্ত জরুরি ছিল।
ইসিআই-এর এই উদ্যোগকে বিশ্লেষকরা প্রশংসনীয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ভারতের মতো একটি বিশাল গণতান্ত্রিক দেশে, যেখানে ৯৯ কোটিরও বেশি ভোটার রয়েছেন, ভোটার তালিকার শুদ্ধতা বজায় রাখা একটি জটিল কাজ। এই সমস্যা সমাধানের জন্য নির্বাচন কমিশনের ব্যাপক ডেটাবেস পরীক্ষা এবং ক্ষেত্রস্তরে যাচাই প্রক্রিয়া প্রযুক্তি ও প্রশাসনিক দক্ষতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
ইপিক কার্ড (election-commission) ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি ভোটারদের পরিচয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভোটদান প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ করে। একই ইপিক নম্বরের সমস্যা, যদিও সংখ্যায় নগণ্য, ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারত এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতার উপর প্রশ্ন তুলতে পারত। এই সমস্যার সমাধান ভবিষ্যতে এ ধরনের ত্রুটি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পথ প্রশস্ত করবে।
সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা
নির্বাচন কমিশনের (election-commission) এই পদক্ষেপ সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। ‘এক্স’-এ বহু ব্যবহারকারী ইসিআই-এর এই প্রচেষ্টাকে ‘গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে, কিছু সমালোচক মনে করেন, এই ধরনের সমস্যা এড়াতে ভোটার তালিকা ব্যবস্থাপনায় আরও আধুনিক প্রযুক্তি, যেমন ব্লকচেইন বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়ানো উচিত।
ইসিআই (election-commission) জানিয়েছে, ভোটার তালিকার শুদ্ধতা এবং আপডেট রাখার জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ত্রুটি রোধে আরও কঠোর নজরদারি এবং প্রযুক্তিগত উন্নতি নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া, ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এবং তাদের ইপিক কার্ডের নির্ভুলতা যাচাই করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এই উদ্যোগ ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর জনগণের আস্থা আরও জোরদার করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং নির্ভরযোগ্যতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসিআই-এর এই পদক্ষেপ সেই লক্ষ্যের দিকে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।