কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং (giriraj) সোমবার, ৫ মে ২০২৫, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রদায়িক হিংসাগ্রস্ত মুর্শিদাবাদ সফরের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, বাংলার হিন্দুদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়ার পরই মমতা ২৭ দিন পর মুর্শিদাবাদে গিয়ে “কুমিরের অশ্রু” ফেলছেন । সিং দাবি করেছেন, মমতার শাসনকালে হিন্দুরা নিরাপদ নয়, এবং বাংলার মানুষ এটা বুঝে গেছে ।
সংবাদ মাধ্যমে সিং বলেন (giriraj)
সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সিং (giriraj) বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটব্যাঙ্ক ও তোষণের রাজনীতি করেন। তিনিই সেই মমতা যিনি বলেছিলেন, তাঁর উপস্থিতিতে কোনও বাংলাদেশিকে বহিষ্কার করা যাবে না। মুর্শিদাবাদে সবকিছু প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় হয়েছে। যখন বাংলার হিন্দুদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, তখন ২৭ দিন পর মমতা মুর্শিদাবাদে পৌঁছে কুমিরের অশ্রু ফেলেছেন। তাঁর শাসনে হিন্দুরা নিরাপদ নয়। বাংলার মানুষ এটা বুঝে গেছে।”
মমতার মুর্শিদাবাদ সফর
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার মুর্শিদাবাদে দুই দিনের সফরে গিয়ে সাম্প্রদায়িক হিংসাগ্রস্থ পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করেন। বহরমপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, গত মাসে মুর্শিদাবাদে সংঘটিত সহিংসতা “পরিকল্পিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক” ছিল। তিনি বলেন, “আমি যখন কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি করি, তখন আমার কাছে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান—সবাই সমান।
আমি চাই না কোনও ধর্মের মানুষের উপর আক্রমণ হোক। ঘটনার একদিনের মধ্যে জাতীয় মহিলা কমিশন এখানে পৌঁছে গিয়েছিল। তারা মণিপুর, উত্তর প্রদেশ বা রাজস্থানে যায়নি। এই ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। যারা এই হিংসাকে উসকে দিয়েছে, বাংলা তাদের সহ্য করবে না। আমি কারও বিরুদ্ধে নই, কিন্তু আমি দাঙ্গার বিরুদ্ধে।”
মমতা তাঁর সফরে বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন
মমতা তাঁর সফরে বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমি আগেই মুর্শিদাবাদে যেতে পারতাম, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত স্থিতিশীলতা ফিরে না আসে এবং শান্তি পুনরুদ্ধার না হয়, ততক্ষণ যাওয়া উচিত নয়। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, তবে আমাকে জগন্নাথ ধামের প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হয়েছিল, যা অনেক আগে ঘোষিত হয়েছিল। তাই, আজ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর আমি মুর্শিদাবাদে যাচ্ছি।”
মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক নীতিতে ভারতীয় চলচ্চিত্রে অশনি সংকেত
ক্ষতিপূরণ ও কর্মসূচি
মমতা ঘোষণা করেন, তিনি সোমবার বহরমপুরে পৌঁছাবেন এবং মঙ্গলবার ধুলিয়ানে যাবেন। তিনি বলেন, “যাদের ঘরবাড়ি এবং দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। যারা সম্পত্তি হারিয়েছেন, তাদের ক্ষতির মূল্যায়ন করা হবে। সুতিতে আমি একটি জনবণ্টন কর্মসূচির আয়োজন করব। তারপর বুধবার কলকাতায় ফিরব।”
মুর্শিদাবাদে হিংসার প্রেক্ষাপট
১১ এপ্রিল মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। এতে দুজন নিহত, বেশ কয়েকজন আহত এবং সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়। হাজার হাজার মানুষ নিরাপত্তার জন্য বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই প্রতিবাদ পরে মালদা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হুগলি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে অগ্নিসংযোগ, পাথর ছোঁড়া এবং রাস্তা অবরোধের ঘটনা ঘটে।
ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন, যা ৮ এপ্রিল সংসদে পাশ হয়, মুসলিম সম্প্রদায়ের দাতব্য সম্পত্তি পরিচালনার নিয়মে পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির বাধ্যবাধকতা উল্লেখযোগ্য। এই আইন তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, এবং এর বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দায়ের করা হয়েছে, যা নতুন প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে ১৫ মে শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
গিরিরাজ সিংয়ের (giriraj) সমালোচনা বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করেছে। তিনি মমতার বিরুদ্ধে ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি এবং তোষণের অভিযোগ তুলে বলেন, মুর্শিদাবাদে সহিংসতা প্রশাসনের মদতে সংঘটিত হয়েছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীও মমতার সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “বাংলায় হিন্দুদের উপর আক্রমণ হচ্ছে, আর মমতা নীরব দর্শক।”
তৃণমূল পাল্টা অভিযোগ করেছে, বিজেপি (giriraj) মুর্শিদাবাদে সহিংসতাকে উসকে দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি মুর্শিদাবাদে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। মমতা শান্তি ফেরাতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছেন।”
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
এক্স-এ এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “মমতা মুর্শিদাবাদে গিয়ে কুমিরের অশ্রু ফেলছেন(giriraj)। তিনি হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।” আরেকটি পোস্টে তৃণমূল সমর্থকরা লিখেছেন, “মমতা সকলের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি শান্তি ফেরাতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে মুর্শিদাবাদে গিয়েছেন।”