কলিঙ্গ সুপার কাপ ২০২৫-এর সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে দুটি ক্লাবের নাম চূড়ান্ত হয়েছে, যারা ২০২৫-২৬ মরসুমে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এ অংশ নেবে। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (AFC Champions League 2) আয়োজিত এশিয়ার দ্বিতীয় স্তরের এই ক্লাব ফুটবল টুর্নামেন্টের ২২তম সংস্করণে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবং এফসি গোয়া। ৩২টি দলের অংশগ্রহণে গ্রুপ পর্বে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় মোহনবাগান সরাসরি গ্রুপ পর্বে প্রবেশ করবে, কারণ তারা ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) শিল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে। অন্যদিকে, এফসি গোয়া ২০২৫ কলিঙ্গ সুপার কাপ জয়ের পর যোগ্যতা অর্জনকারী প্লে-অফে খেলবে। এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব কীভাবে এই দুটি ক্লাব ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ অর্জন করেছে এবং তাদের এই যাত্রার গুরুত্ব।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট: সরাসরি গ্রুপ পর্বে

মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ২০২৪-২৫ আইএসএল মরসুমে শিল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের মাধ্যমে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর গ্রুপ পর্বে সরাসরি প্রবেশ করবে। মেরিনার্সরা ২৪টি ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট অর্জন করে ঐতিহাসিক একটি মরসুম উপহার দিয়েছে। এই মরসুমে তারা রেকর্ড সংখ্যক ক্লিন শিট এবং অসাধারণ পয়েন্ট সংগ্রহের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করে।
মোহনবাগানের এই সাফল্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন ভারতীয় খেলোয়াড়রা। গোলকিপার বিশাল কাইথ, ডিফেন্ডার সুবাশিস বোস এবং দিপেন্দু বিশ্বাস তাদের অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়ে দলের প্রতিরক্ষাকে অটুট রেখেছেন। আইএসএল প্লে-অফে দলটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে এবং বেঙ্গালুরু এফসি-কে ২-১ গোলে হারিয়ে অতিরিক্ত সময়ে জয় ছিনিয়ে এনে ঘরোয়া ফুটবলে দ্বৈত শিরোপা অর্জন করে।
কলিঙ্গ সুপার কাপে মোহনবাগান তরুণ খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল নিয়ে অংশ নেয় এবং কিছু সিনিয়র খেলোয়াড়ের সমর্থনে মাঠে নামে। যদিও তারা এই টুর্নামেন্টে শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয়, তবে সেমিফাইনালে এফসি গোয়ার ক** কাছে পরাজিত হয়। তবে, কোচ হোসে মোলিনার নেতৃত্বে দলটি এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এ ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে প্রস্তুত। মোহনবাগানের লক্ষ্য থাকবে এশিয়ার মঞ্চে তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি অবিস্মরণীয় পারফরম্যান্স প্রদর্শন করা।
এফসি গোয়া: যোগ্যতা অর্জনকারী প্লে-অফে

এফসি গোয়া ২০২৫ কলিঙ্গ সুপার কাপ জয়ের মাধ্যমে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর যোগ্যতা অর্জনকারী প্লে-অফে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে। গৌররা ফাইনালে জামশেদপুর এফসি-কে ৩-০ গোলে পরাজিত করে এই ট্রফি জয় করে। টুর্নামেন্টে তাদের যাত্রা ছিল অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। প্রথম রাউন্ডে তারা গোকুলাম কেরালা এফসি-কে ইকের গুয়ারোটক্সেনার হ্যাটট্রিকের সৌজন্যে সহজেই হারায়। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে ২-১ গোলে জয় ছিনিয়ে আনে, যেখানে বোর্জা হেরেরা এবং মোহাম্মদ ইয়াসির গোল করেন।
সেমিফাইনালে এফসি গোয়ার মুখোমুখি হয় আইএসএল চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগানের। শুরুতে কিছুটা চাপের মুখে পড়লেও গৌররা ব্রিসন ফার্নান্দেস, বোর্জা হেরেরা এবং ইকের গুয়ারোটক্সেনার গোলের সৌজন্যে মেরিনার্সদের টুর্নামেন্ট থেকে বাদ দেয়। ফাইনালে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে তারা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে। দেজান দ্রাজিচের ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং বোর্জা হেরেরার দুর্দান্ত ব্রেস গোয়াকে ৩-০ গোলে জয় এনে দেয়, যা তাদের এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর প্লে-অফে স্থান নিশ্চিত করে।
এফসি গোয়ার এই সাফল্য তাদের টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকতা এবং গভীরতার প্রমাণ দেয়। বোর্জা হেরেরা, ইকের গুয়ারোটক্সেনা এবং হৃতিক তিওয়ারির মতো খেলোয়াড়রা দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এখন তাদের লক্ষ্য হবে প্লে-অফে জয়লাভ করে গ্রুপ পর্বে প্রবেশ করা এবং এশিয়ার মঞ্চে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করা।
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর তাৎপর্য
এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২ এশিয়ার দ্বিতীয় স্তরের ক্লাব ফুটবল টুর্নামেন্ট, যেখানে গ্রুপ পর্বে ৩২টি দল অংশ নেয়। এই টুর্নামেন্টে সফল দলগুলো এশিয়ার শীর্ষ ক্লাবগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পায়। ভারতের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ, কারণ এটি ভারতীয় ফুটবলের মান এবং প্রতিভা বিশ্বের কাছে তুলে ধরার সুযোগ প্রদান করে। মোহনবাগান এবং এফসি গোয়ার মতো ক্লাবগুলোর অংশগ্রহণ ভারতীয় ফুটবলের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং প্রতিযোগিতামূলকতার প্রতিফলন।
মোহনবাগানের সরাসরি গ্রুপ পর্বে প্রবেশ তাদের আইএসএল-এর শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি। অন্যদিকে, এফসি গোয়ার প্লে-অফে অংশগ্রহণ তাদের কলিঙ্গ সুপার কাপে অসামান্য পারফরম্যান্সের পুরস্কার। দুটি ক্লাবই এশিয়ার মঞ্চে ভারতের ফুটবল ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
কলিঙ্গ সুপার কাপ ২০২৫ ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে মোহনবাগান এবং এফসি গোয়া এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে। মোহনবাগান তাদের আইএসএল শিল্ড জয়ের মাধ্যমে সরাসরি গ্রুপ পর্বে প্রবেশ করবে, আর এফসি গোয়া কলিঙ্গ সুপার কাপ জয়ের পর প্লে-অফে লড়বে। এই দুটি ক্লাবের অংশগ্রহণ ভারতীয় ফুটবলের সম্ভাবনা এবং প্রতিভার প্রমাণ দেয়। এশিয়ার মঞ্চে তাদের পারফরম্যান্স ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ফুটবলপ্রেমীরা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এই দুই দলের এশিয়ান যাত্রার জন্য, যেখানে তারা ভারতের গৌরব অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করবে।