পহেলগাঁওয়ের বদলা নিতে অভাবনীয় অর্থনৈতিক পদক্ষেপ ভারতের

পহেলগাঁওয়ে (pahalgam) সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আর্থিক ক্ষেত্রে দুটি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যার লক্ষ্য সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদের আর্থিক সহায়তা বন্ধ…

pahalgam attack india takes big decesion

পহেলগাঁওয়ে (pahalgam) সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আর্থিক ক্ষেত্রে দুটি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যার লক্ষ্য সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করা। সূত্র জানায়, ভারত ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (FATF)-এর ধূসর তালিকায় পাকিস্তানকে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করবে।

দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর পাকিস্তানের জন্য ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাহায্য প্যাকেজ নিয়ে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করবে, অভিযোগ করে যে এই তহবিল সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে অপব্যবহার হচ্ছে। এই তিন বছরের সাহায্য প্যাকেজের চুক্তি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে চূড়ান্ত হয়েছিল।

   

ইতিহাস কি বলছে

পাকিস্তানকে ২০১৮ সালের জুন মাসে বিশ্বব্যাপী মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন নজরদারি সংস্থা FATF-এর ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ২০২২ সালের অক্টোবরে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন রোধে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর এই তালিকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। যদি পাকিস্তান পুনরায় ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে এটি দেশটির আর্থিক লেনদেনের উপর কঠোর নজরদারি বাড়াবে, যা সম্ভাব্যভাবে বিদেশি বিনিয়োগ এবং মূলধন প্রবাহকে সীমিত করবে।

ভারত আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে FATF-এর প্রধান সদস্য দেশগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে এই পদক্ষেপের জন্য সমর্থন সংগ্রহ করতে চলেছে। FATF-এর সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা, প্লেনারি, ৪০টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত এবং সাধারণত বছরে তিনবার—ফেব্রুয়ারি, জুন এবং অক্টোবরে—বৈঠক করে।

গুরুতর শারীরিক অসুস্থতায় গিল! হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে গুজরাটের নেতৃত্বে কে? জানুন বিস্তারিত

পহেলগাঁও হামলা ও ভারতের কৌশল (pahalgam)

২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে (pahalgam) জঙ্গি হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই হামলাকে সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদের একটি উদাহরণ হিসেবে দেখছে ভারত। সরকারি সূত্র জানায়, ধূসর তালিকায় পাকিস্তানের পুনঃপ্রবেশ ভারতের প্রধান লক্ষ্য।

এই তালিকায় থাকা দেশগুলির আর্থিক লেনদেনে ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের উপর নজরদারি বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা জম্মু ও কাশ্মীরে অবৈধ তহবিল প্রবাহ কমাতে সাহায্য করেছিল। এই পদক্ষেপটি পাকিস্তানের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে, কারণ এটি বিদেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা পেতে বাধার সম্মুখীন হবে।

IMF সাহায্য নিয়ে উদ্বেগ

ভারত আইএমএফ-এর ৭ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য প্যাকেজ নিয়ে আপত্তি তুলবে, যা ২০২৪ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে তিন বছরের জন্য চূড়ান্ত হয়েছিল। এই সাহায্য প্যাকেজের পরবর্তী কিস্তি, প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার, আইএমএফ-এর পারফরম্যান্স পর্যালোচনার সাফল্যের উপর নির্ভর করবে।

ভারত অভিযোগ করবে যে পাকিস্তান এই তহবিল সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে অপব্যবহার করছে। মে মাসে আইএমএফ-এর বোর্ড সভায় ভারত এই উদ্বেগ তুলে ধরবে। এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা ইতিমধ্যেই ঋণের বোঝায় জর্জরিত।

FATF-এর ভূমিকা ও ভারতের কৌশল

FATF হলো অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসবাদের (pahalgam) অর্থায়ন রোধে বিশ্বব্যাপী নজরদারি সংস্থা, যা ১৯৮৯ সালে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর ৪০ সদস্য রাষ্ট্র এবং ২০০টিরও বেশি অঞ্চল এর সুপারিশ মেনে চলে। ধূসর তালিকায় অন্তর্ভুক্তি পাকিস্তানের আর্থিক লেনদেনে উন্নত যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন হবে, যা ব্যবসায়িক বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করবে।

ভারত ইতিমধ্যেই ২৩টি FATF সদস্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে পহেলগাঁও (pahalgam) হামলার পর শোকবার্তা পেয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো প্রভাবশালী দেশ রয়েছে। এই সমর্থন ভারতের কৌশলকে শক্তিশালী করবে।

পাকিস্তানের অতীত ও বর্তমান

পাকিস্তান ২০০৮, ২০১২-২০১৫ এবং ২০১৮-২০২২ সালে ধূসর তালিকায় ছিল। এই সময়ে দেশটি আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলির কাছ থেকে সহায়তা পেতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং এর অর্থনীতি ৩৮ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। ২০২২ সালে তালিকা থেকে বাদ পড়ার পর পাকিস্তান তার অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির জন্য আইএমএফ-এর সাহায্যের উপর নির্ভর করছে। তবে, ভারতের বর্তমান পদক্ষেপ এই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

পহেলগাঁও ((pahalgam)) হামলার পর ভারতের এই আর্থিক কৌশল পাকিস্তানের উপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করবে। FATF-এর ধূসর তালিকায় ফিরিয়ে আনা এবং আইএমএফ-এর সাহায্য নিয়ে আপত্তি তোলার মাধ্যমে ভারত সন্ত্রাসবাদের অর্থায়ন রোধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।

আগামী FATF প্লেনারি সভা এবং আইএমএফ বোর্ডের বৈঠক এই কৌশলের সাফল্য নির্ধারণ করবে। ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতায় নতুন মোড় আনতে পারে।