দিঘা জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষে তৈরি হয়েছে এক অনন্য রাজনৈতিক আবহ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজনীতির নানা মুখ। তবে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি(Dilip Ghosh) দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। সস্ত্রীক তিনি হাজির ছিলেন মন্দির দর্শনে এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল সৌজন্য সাক্ষাৎও করেছেন। আর তাতেই শুরু হয়েছে নতুন জল্পনা – তবে কি বঙ্গ রাজনীতির মোড় ঘুরছে মন্দিরকে কেন্দ্র করে?
মন্দির উদ্বোধনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও আমন্ত্রণ জানানো হলেও, তাঁরা সেই আহ্বান উপেক্ষা করেছেন। কেবলমাত্র দিলীপ ঘোষই (Dilip Ghosh) উপস্থিত থেকে সেই সৌজন্য রক্ষা করেছেন। (Dilip Ghosh) মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতা, ছবি তোলা এবং পরে সমুদ্রতটে প্রাতঃভ্রমণে তাঁর খোলামেলা বক্তব্য বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন তরঙ্গ তোলে।
এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুললে ক্ষুণ্ণ হওয়ার কী আছে? বহু মানুষ তো তাঁর আশীর্বাদে উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবন কাটাচ্ছে, তারা আজ নিজেদের সতী দাবি করছে। এতদিন যারা কালীঘাটের উচ্ছিষ্ট খেয়েছে, তারা এখন বড় বড় কথা বলছে। আমি শুরু থেকে মুখ্যমন্ত্রীর চোখে চোখ রেখে কথা বলেছি, আজও বলছি, ভবিষ্যতেও বলব।”
তাঁর এই মন্তব্যে একদিকে যেমন স্পষ্ট আক্রমণের সুর, অন্যদিকে তেমনই উঠে আসছে বিজেপির অন্দরমহলের বিভাজন ও অসন্তোষের ইঙ্গিত। দিলীপ ঘোষের মতে, বিজেপি এখন আর দল নয়, একপ্রকার ‘দোকানে’ পরিণত হয়েছে। তাঁর ভাষায়, “সবাই এসে কামাচ্ছে, তাই কষ্ট হচ্ছে। দিলীপ ঘোষ(Dilip Ghosh) কারোর কাছে হাত পাতেনি, কাউকে ফোন করেনি। আমি আপোসহীন লড়াই করেছি, আজও করছি, আগামীতেও করব।”
তিনি স্পষ্ট করেই বলেন, তিনি আগে হিন্দু, পরে বিজেপির সদস্য। “বিজেপি হিন্দুত্বের দল। এটা কাল ছিল, ভবিষ্যতে নাও থাকতে পারে। কিন্তু দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) চিরকাল হিন্দু থাকবে,”— বলে জানান তিনি।
এই মন্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন পড়েছে। অনেকের মতে, দিঘার জগন্নাথ মন্দির ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে হিন্দুত্বকে সামনে রেখে নতুন মোড় নেওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। আবার অনেকেই মনে করছেন, এটি নিছকই একজন রাজনীতিকের ব্যক্তিগত অবস্থান প্রকাশ – যা তাঁকে রাজনৈতিকভাবে আবার নতুন আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) এই বক্তব্যে দলের একাংশের ক্ষোভও তীব্র হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী এবং সৌমিত্র খাঁ-র মতো নেতারা পরোক্ষভাবে তাঁর দিঘা সফরকে ভালোভাবে নেননি। কিন্তু দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, তিনি কারো মতের তোয়াক্কা করেন না। তাঁর লড়াই চলবে নিজের পথেই।
দিঘার সমুদ্রতটে সূর্যোদয়ের আলোয় যেমন নতুন সকাল শুরু হয়, তেমনই এই জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে বাংলার রাজনীতিতে কি নতুন সকাল দেখা দেবে? নাকি এটি শুধুই একদিনের আলোড়ন, যা সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাবে? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বঙ্গ রাজনীতির অলিন্দে।