যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন থেকে জঙ্গি হামলা! পাক-ষড়যন্ত্র উন্মোচন করল চাঞ্চল্যকর তথ্য

Terrorism in Kashmir: পহেলগাঁওয়ে কাপুরুষোচিত হামলা দেশকে ক্রোধে ফুটিয়ে তুলেছে। জনগণের কণ্ঠস্বর স্পষ্ট! পাকিস্তানকে এমন শিক্ষা দিতে হবে যা তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে।…

Terrorism in Kashmir valley

Terrorism in Kashmir: পহেলগাঁওয়ে কাপুরুষোচিত হামলা দেশকে ক্রোধে ফুটিয়ে তুলেছে। জনগণের কণ্ঠস্বর স্পষ্ট! পাকিস্তানকে এমন শিক্ষা দিতে হবে যা তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে। এর মধ্যেই একটি তথ্য পাওয়া গিয়েছে, যাতে স্পষ্ট হয়েছে যে, ২০১৯ সাল থেকে পাকিস্তান কতবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে, জঙ্গিরা কতবার হামলা চালিয়েছে এবং প্রতি বছর ভারতীয় বাহিনী কতজন জঙ্গিকে নিষ্ক্রিয় করেছে। এখানে পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দেওয়া হল।

   

কখন এবং কতবার পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে?

নিরাপত্তা সংস্থাগুলির একচেটিয়া প্রতিবেদন অনুসারে, পূর্ববর্তী বছরগুলির তুলনায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে, গত দুই থেকে তিন বছরে পাকিস্তান আবারও বিক্ষিপ্তভাবে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন শুরু করেছে। তথ্য অনুসারে, পাকিস্তান ২০১৯ সালে ৩,২৩৩ বার এবং ২০২০ সালে ৪,৬৪৫ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। ২০২১ সালে এই সংখ্যা তীব্রভাবে কমে ৫৯৫-এ নেমে আসে। এরপর, ২০২২ সালে মাত্র একটি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ঘটে, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে প্রতিটিতে দুটি ঘটনা রেকর্ড করা হয়। এ বছর এখন পর্যন্ত পাকিস্তান ১৪ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এই তথ্যগুলি স্পষ্ট করে যে পাকিস্তানের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড সম্প্রতি আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জম্মু ও কাশ্মীরে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছে।

লাইন অফ কন্ট্রোলে কখন এবং কতজন জঙ্গি নিহত হয়েছে?

ভারতীয় সেনাবাহিনী, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (সিআরপিএফ)-এর সমন্বয়ে জঙ্গিদের নির্মূল করার জন্য অভিযান চালাচ্ছে। এই অভিযানগুলি লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) থেকে শুরু করে জঙ্গিদের ওভারগ্রাউন্ড কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতের রিসেপশন এলাকা এবং জনবহুল অঞ্চলে পরিচালিত হচ্ছে।

একচেটিয়া তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে এলওসি-তে ৭ জন জঙ্গি নিহত হয়। এই সংখ্যা ২০২০ সালে বেড়ে ১৪-এ পৌঁছায়। ২০২১ সালে, অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালীন ১২ জন জঙ্গি নিষ্ক্রিয় করা হয়। ২০২২ সালে সেনাবাহিনী ১৮ জন, ২০২৩ সালে ৩৬ জন এবং ২০২৪ সালে ১৯ জন জঙ্গিকে নির্মূল করে। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত এলওসি-তে ৪ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই জঙ্গিরা সকলেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং আইএসআই-এর সমর্থন পাচ্ছিল। এই তথ্যগুলি ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর প্রতিক্রিয়া এবং সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধে তাদের সাফল্যের ইঙ্গিত দেয়।

জঙ্গি হামলার পরিসংখ্যান

সেনাবাহিনীর প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯ সালে ১৭৩টি জঙ্গি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছিল। এই সংখ্যা ২০২০ সালে কমে ১৪২-এ, ২০২১ সালে ১৩১-এ এবং ২০২২ সালে ১১০-এ নেমে আসে। তবে, ২০২৩ সালে সরকারের নীতি কাশ্মীরের প্রতিটি পরিবারে পৌঁছানোর কারণে এই ধরনের কার্যকলাপ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়, এবং ঘটনার সংখ্যা ২৫-এ নেমে আসে। ২০২৪ সালে এটি সামান্য বেড়ে ২৭-এ পৌঁছায়। এ বছর সংখ্যাটি কম হলেও, সম্প্রতি পর্যটকদের উপর হামলার কারণে সারা দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত তিনটি জঙ্গি ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। বর্তমানে জম্মু ও কাশ্মীরে প্রায় ৬০ জন জঙ্গি সক্রিয় রয়েছে, যার মধ্যে ১৪ জন স্থানীয় কাশ্মীরি যুবক, বাকিরা পাকিস্তানি নাগরিক।

অভ্যন্তরীণ এলাকা প্রকৃত চ্যালেঞ্জ

জম্মু ও কাশ্মীরের অভ্যন্তরীণ অঞ্চল, বিশেষ করে দক্ষিণ কাশ্মীর, উত্তর কাশ্মীর এবং মধ্য কাশ্মীর, সেনাবাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। এই এলাকাগুলিতে জঙ্গিরা ওভারগ্রাউন্ড কর্মীদের থেকে উল্লেখযোগ্য সমর্থন পাচ্ছে, এবং সেনাবাহিনী এই নেটওয়ার্কগুলি ভেঙে ফেলার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

২০১৯ সালে সেনাবাহিনী ১৫১ জন জঙ্গিকে নিষ্ক্রিয় করে, এবং এই সংখ্যা ২০২০ সালে বেড়ে ২০৭-এ পৌঁছায়। ২০২২ সালে ১৬৯ জন, ২০২৩ সালে ১৬৫ জন এবং ২০২৪ সালে তীব্রভাবে কমে ৪৮ জন জঙ্গি নিহত হয়। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ৬ জন জঙ্গি নির্মূল করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যানের মধ্যে রয়েছে অনুপ্রবেশকারী পাকিস্তানি জঙ্গি এবং স্থানীয় উগ্রপন্থী উভয়ই। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ২৫ জন মেয়ে নিখোঁজ বলে জানা গেছে, যদিও সঠিক বিবরণ স্পষ্ট নয়। এছাড়া, উপত্যকায় মাদকের অপব্যবহারের দ্রুত বিস্তার একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে

পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র এবং ভারতের প্রতিক্রিয়া

সাম্প্রতিক পাহালগাম হামলা, যেখানে ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন, তা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে আরও উত্তপ্ত করেছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এই হামলার পিছনে পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট জড়িত, যারা পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রক্সি হিসেবে কাজ করে। এই হামলার পর ভারত পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার, ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত, সীমান্ত বন্ধ এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল সহ একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে শিমলা চুক্তি স্থগিত, সীমান্ত ও আকাশপথ বন্ধ এবং বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং সিআরপিএফ যৌথভাবে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে। পাহালগাম হামলার পর সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে এবং শতাধিক ওভারগ্রাউন্ড কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। জঙ্গিদের খুঁজে বের করতে ড্রোন এবং অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে।

পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন এবং জঙ্গি কার্যকলাপ জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ক্রমাগত হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী জঙ্গিদের নির্মূল এবং অনুপ্রবেশ রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, তবে অভ্যন্তরীণ এলাকায় ওভারগ্রাউন্ড কর্মীদের সমর্থন এবং মাদকের অপব্যবহারের মতো সমস্যাগুলি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। পাহালগামের মতো হামলা দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি উঠেছে। ভারতের কূটনৈতিক এবং সামরিক প্রতিক্রিয়া এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা পরিস্থিতির গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনটি নিরাপত্তা সংস্থা এবং সংবাদ সূত্রের তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। পরিস্থিতি গতিশীল এবং নতুন তথ্যের ভিত্তিতে বিবরণ পরিবর্তিত হতে পারে।