পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) প্রধান মেহবুবা মুফতি (mehbooba mufti) কেন্দ্রীয় সরকারকে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য করা উচিত এবং নিরীহ মানুষকে বিচ্ছিন্ন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিল সংঘটিত জঙ্গি হামলার পর সরকারের কঠোর পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে তিনি এই মন্তব্য করেছেন। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজন নৌবাহিনীর অফিসার এবং গোয়েন্দা ব্যুরোর একজন কর্মকর্তাও রয়েছেন।
মেহবুবা মুফতি (mehbooba mufti) এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “ভারত সরকারকে পাহালগাম হামলার পর সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সন্ত্রাসী ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য করতে হবে। বিশেষ করে যারা সন্ত্রাসবাদের বিরোধী, তাদের মতো নিরীহ মানুষকে বিচ্ছিন্ন করা উচিত নয়।
হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং সাধারণ কাশ্মীরিদের উপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।” তিনি এই ধরনের পদক্ষেপকে সাধারণ মানুষের প্রতি “অন্যায়” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
পহেলগাঁও হামলা ও সরকারের পদক্ষেপ
পহেলগাঁওয়ের বাইসারান উপত্যকায় সংঘটিত হামলার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার প্রক্সি সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) দায় স্বীকার করেছে। এই হামলার পর ভারত সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিতকরণ, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা সুবিধা বন্ধ এবং পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের বহিষ্কার। এছাড়া, দিল্লিতে বসবাসকারী প্রায় ৫০০০ পাকিস্তানি নাগরিকের তালিকা গোয়েন্দা ব্যুরো দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে, তাঁদের দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে।
কাশ্মীরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান চালানো হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, মেঘালয় এবং ত্রিপুরায় সামাজিক মাধ্যমে হামলা-সম্পর্কিত মন্তব্য করার জন্য ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন একজন বিধায়ক, সাংবাদিক, ছাত্র, আইনজীবী এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
মেহবুবা মুফতির উদ্বেগ (mehbooba mufti)
মেহবুবা মুফতি (mehbooba mufti) সরকারের এই অভিযানের পদ্ধতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নিরীহ কাশ্মীরিদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বাড়াতে পারে। তিনি অতীতেও কাশ্মীরে সরকারি কর্মচারীদের বাছবিছিয়ে বরখাস্ত করা এবং পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে সম্মিলিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন (mehbooba mufti)।
২০২৩ সালে তিনি বলেছিলেন, “সন্ত্রাসবাদের নামে সরকারি কর্মচারীদের অযৌক্তিকভাবে বরখাস্ত করা হচ্ছে এবং পরিবারগুলোকে আইনি প্রক্রিয়ার সুযোগ না দিয়ে বাড়িঘর বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। এটি নিরীহ পরিবারগুলোর প্রতি সম্মিলিত শাস্তি এবং তাদের জীবনকে উল্টে দেয়।”
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, কাশ্মীরে সাধারণ মানুষকে উগ্রপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতা বেড়েছে। ২০২৪ সালে তিনি জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের মহারাজা যুগের কঠোর ‘এনিমি অর্ডিন্যান্স অ্যাক্ট’ প্রয়োগের সমালোচনা করে বলেছিলেন, “শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই পুরনো আইন প্রয়োগ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এবং ন্যায়বিচারের প্রতি গুরুতর লঙ্ঘন।”
ভারতীয় সেনার এই ট্যাঙ্কটি আরও শক্তিশালী হবে, শত্রুর ড্রোন দেখা মাত্রই করবে ধ্বংস
সরকারের অবস্থান
পহেলগাঁও হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ভারত প্রতিটি সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের সমর্থকদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেবে। তিনি বলেন, “এই হামলা শুধু নিরীহ পর্যটকদের উপর নয়, দেশের শত্রুরা ভারতের আত্মার উপর আঘাত করার সাহস দেখিয়েছে।”
তবে, মেহবুবা মুফতি (mehbooba mufti) সরকারের ব্যাপক অভিযানের ফলে নিরীহ কাশ্মীরিদের হয়রানির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “ইডি রেড, এনআইএ রেড, এসআইএ রেডের মাধ্যমে মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং জেলে পাঠানো হচ্ছে। এভাবে সাধারণ মানুষকে সন্ত্রাসবাদী বানানো হচ্ছে।”
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
মেহবুবা মুফতির এই মন্তব্য কাশ্মীরের রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ তাঁর মন্তব্যকে সাধারণ কাশ্মীরিদের পক্ষে কথা বলার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ মনে করছেন, এটি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সরকারের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করতে পারে। লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, সরকার যে কোনো পদক্ষেপ নিলে বিরোধী দল তাদের পূর্ণ সমর্থন দেবে।
তবে, মুফতির মন্তব্য কাশ্মীরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের প্রকৃতি এবং এর প্রভাব নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মেহবুবা মুফতি সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হোক এবং নিরীহ মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন না হয়। তিনি বলেন, “কাশ্মীরের মানুষ ইতিমধ্যে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। তাদের প্রতি আরও অবিচার করা উচিত নয়।”