জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে গত ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলায় নিহত তিন বাঙালি পর্যটক—বিতান অধিকারী, সমীর গুহ এবং মণীশ রঞ্জন মিশ্র—এর পরিবারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata) ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন।
আর্থিক সাহায্য (mamata)
এই আর্থিক সাহায্যের মধ্যে নিহতদের স্ত্রীদের ৫ লক্ষ টাকা এবং তাদের মা-বাবাদের ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। মমতা (mamata) নিহতদের পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সমবেদনা জানিয়েছেন এবং রাজ্য সরকারের তরফে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। নিহতদের মরদেহ পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনতে রাজ্য সরকার (mamata) সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছে।
অরুণ জেটলিতে দিল্লি-বেঙ্গালুরুর মহারণ, প্রতিশোধের আগুনে মাঠে নামবে বিরাট বাহিনী
জঙ্গি হামলা
পহেলগাঁওয়ের বাইসরান মেডোতে এই জঙ্গি হামলায় মোট ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার প্রক্সি গ্রুপ দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF)। হামলাকারীদের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানি নাগরিক—আসিফ ফৌজি, সুলেমান শাহ এবং আবু তালহা—এবং দুজন স্থানীয় সন্ত্রাসী—আদিল গুরি এবং আহসান—চিহ্নিত হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (mamata) হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেন, “জঙ্গিদের কোনো জাত বা ধর্ম হয় না। এই কাপুরুষোচিত হামলা শান্তিপ্রিয় মানুষের উপর আঘাত। আমরা নিহতদের পরিবারের পাশে আছি এবং তাদের সব ধরনের সহায়তা দেব।” তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটির সমালোচনা করে দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
জম্মু ও কাশ্মীর সরকার
রাজ্য সরকারের পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীর সরকার নিহতদের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে এবং গুরুতর আহতদের জন্য ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। অসম সরকারও তাদের রাজ্যের নিহতদের পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছে। এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারও তদন্তের জন্য জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA)-কে নিয়োগ করেছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দোষীদের কঠোর শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন।
মমতা (mamata) জানিয়েছেন, নিহতদের মরদেহ রাজ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য বিমানবন্দর থেকে শুরু করে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত সব ব্যবস্থা রাজ্য সরকার করছে। তিনি বলেন, “এই দুঃখের মুহূর্তে আমরা পরিবারগুলোর পাশে আছি। তাদের যেকোনো প্রয়োজনে রাজ্য সরকার সহায়তা করবে।” রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস নিহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমবেদনা জানিয়েছেন।
পর্যটন শিল্পের উপর প্রভাব
পহেলগাঁও হামলা কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই ঘটনার পর পর্যটকরা উপত্যকা ছেড়ে চলে গেছেন, এবং স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই হামলাকে “দুঃখজনক” বলে অভিহিত করে বলেছেন, “এই ধরনের ঘটনা কাশ্মীরের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর।” তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ইসলামাবাদের কথাকে তিনি গুরুত্ব দিতে চান না।
স্থানীয় ও জাতীয় স্তরে এই হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। পশ্চিমবঙ্গে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিক্ষোভ ও মোমবাতি মিছিল হয়েছে। কলকাতায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে একটি শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মমতা বলেন, “আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ব এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করব।”
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক
এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত, আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। মমতা এই বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতার কথা বললেও, তিনি জোর দিয়েছেন যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি প্রয়োজন।
নিহতদের পরিবারগুলো এই ক্ষতিপূরণকে স্বাগত জানালেও, তাদের দুঃখের মধ্যে আর্থিক সাহায্য সামান্য সান্ত্বনা। বিতান অধিকারীর স্ত্রী বলেন, “কোনো টাকা আমার স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না, তবু সরকারের এই পদক্ষেপ আমাদের কিছুটা সাহায্য করবে।” আগামী দিনে তদন্তের অগ্রগতি এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপ এই ঘটনার পরবর্তী দিক নির্ধারণ করবে।