ক্রিকেটের মাঠেও ফিরে ফিরে আসে সন্ত্রাসের স্মৃতি

ক্রিকেট (cricket) ভারতীয় জনজীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত এবং মানুষের আবেগের সাথে মিশে আছে , তাতেও রয়েছে সন্ত্রাসের স্মৃতি। জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও , যাকে…

jeet win

cricket ground terror

ক্রিকেট (cricket) ভারতীয় জনজীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত এবং মানুষের আবেগের সাথে মিশে আছে , তাতেও রয়েছে সন্ত্রাসের স্মৃতি। জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও , যাকে ভারতের ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ বলা হয়, যা গতকালের জঙ্গি হামলায় মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে।

মঙ্গলবার বৈসারান উপত্যকায় ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে মহারাষ্ট্রের ছয়জন পর্যটকও রয়েছেন। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে গোটা ভারত তথা বিশ্ব শোকস্তব্ধ। দেশবাসীর মনে জ্বলছে প্রচণ্ড ক্ষোভ। এই হামলার ছায়া পড়েছে ক্রিকেটের মাঠেও। অতীতেও সন্ত্রাসবাদের কালো ছায়া ক্রীড়াজগতকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৪ সালে, যখন ভারত-পাকিস্তান ওয়ানডে ম্যাচ মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়।

   

পাহালগাম হত্যাকাণ্ড: ভয়ের রাত

পহেলগাঁওয়ের বৈসারান উপত্যকায় পর্যটকরা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ পাহাড় থেকে স্থানীয় পুলিশের পোশাক পরা কিছু ব্যক্তি নেমে আসে এবং গুলি চালাতে শুরু করে। আতঙ্কিত পর্যটকরা তাঁবুতে আশ্রয় নেন। পুনের ব্যবসায়ী সন্তোষ জগদালে তাঁর পরিবারের সঙ্গে ছিলেন।

তাঁর কন্যা আশাবরী জানান, সন্ত্রাসীরা তাঁদের তাঁবুর কাছে এসে ‘চৌধুরী’ নামে ডাক দিয়ে সন্তোষকে বাইরে টেনে বের করে। তারা পর্যটকদের ধর্ম জিজ্ঞাসা করে এবং হিন্দুদের লক্ষ্য করে। সন্তোষকে একটি ইসলামিক শ্লোক আবৃত্তি করতে বলা হয়। তিনি তা করতে ব্যর্থ হলে সন্ত্রাসীরা তাঁর মাথায়, কানের পিছনে এবং পিঠে তিনটি গুলি করে। এরপর আশাবরী মামাকেও গুলি করে হত্যা করা হয়।

নিহতদের মধ্যে মহারাষ্ট্রের অতুল মানে, সঞ্জয় লেলে, হেমন্ত জোশী, কৌস্তুভ গানবোটে এবং দিলীপ দোসালে ছিলেন। অতুল ছিলেন সেন্ট্রাল রেলওয়ের সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার, আর দিলীপ নবি মুম্বইয়ের একটি পর্যটক দলের সঙ্গে ভ্রমণে গিয়েছিলেন। নাগপুরের এক দম্পতি ও তাঁদের ছেলে হামলার ঠিক আগে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন, তবে পালানোর সময় ভিড়ের মধ্যে ওই দম্পতির স্ত্রী পড়ে গিয়ে পায়ে ফ্র্যাকচার হয়।

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা রেহাই পাবে না, কড়া হুঁশিয়ার রাজনাথের

১৯৮৪: ক্রিকেট মাঠে সন্ত্রাসের ছায়া (cricket)

সন্ত্রাসবাদের কালো ছায়া ক্রীড়াজগতেও (cricket) পড়েছিল । ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর পাকিস্তানের শিয়ালকোটে ভারত-পাকিস্তান ওয়ানডে ম্যাচ চলছিল। ভারতীয় দল ভালো অবস্থানে ছিল। দিলীপ বেঙ্গসরকর ৯৪ রানে ব্যাট করছিলেন, তাঁর প্রথম ওডিআই সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৬ রান দূরে। হঠাৎ একটি ভয়াবহ খবর আসে—

Advertisements

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। মুহূর্তের মধ্যে খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। খেলোয়াড়রা মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন (cricket)। বাইরের পরিবেশে তখন তীব্র অস্থিরতা। ভারতীয় দলের অধিনায়ক সুনীল গাভাসকরের নেতৃত্বে দ্রুত একটি বিমানের ব্যবস্থা করা হয় এবং দলটি পাকিস্তান থেকে দিল্লি ফিরে আসে।

এই ঘটনা ভারতের ক্রিকেট (cricket) ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থেকে যায়। ১৯৮৪ সালে ভারত পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে, কিন্তু সিরিজটি শেষ করতে পারেনি। ওডিআই সিরিজে ভারত ০-১ ব্যবধানে হেরে যায়, আর টেস্ট সিরিজ ০-০ ফলাফলে শেষ হয়। বাকি ম্যাচগুলো বাতিল করা হয়।

পাকিস্তানের ভূমিকা: অতীত থেকে বর্তমান

ভারতে জঙ্গি হামলার পিছনে পাকিস্তানের ভূমিকা দীর্ঘদিন ধরে উঠে এসেছে। আটের দশকে পাঞ্জাবে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়া হোক বা বর্তমানে কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা—পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে বলে অভিযোগ। ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর শিয়ালকোটে ভারতীয় ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই ভারত সরকার কোনো ঝুঁকি না নিয়ে দলকে তৎক্ষণাৎ ফিরিয়ে আনে।

শোক ও প্রতিক্রিয়া

পহেলগাঁওয়ের হামলা ভারতের পর্যটন শিল্প ও জনমানসে গভীর আঘাত হেনেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী তদন্ত শুরু করেছে। সরকারের কাছে দাবি উঠেছে, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হোক। এই ঘটনা কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয়, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। শোকস্তব্ধ ভারতবাসী নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।

আইপিএলেও প্রভাব

পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আইপিএল ম্যাচের (cricket) তিনটি নিয়মে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ক্রিকেটের মাঠ থেকে রাজনৈতিক মঞ্চ—সর্বত্রই এই হামলার বিরুদ্ধে ধিক্কার জানানো হচ্ছে। পাহালগামের এই ঘটনা ভারতের ইতিহাসে আরেকটি কালো দিন হয়ে থাকবে।