পহেলগামে জঙ্গি হামলার ‘প্রতিশোধে’ কড়া বার্তা আরএসএসের

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের উপর সংঘটিত ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার (Pahalgam Terror Attack) তীব্র নিন্দা করেছে, এটিকে একটি ‘নৃশংস এবং নিন্দনীয়…

RSS general secretary Dattatreya Hosabale

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের উপর সংঘটিত ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার (Pahalgam Terror Attack) তীব্র নিন্দা করেছে, এটিকে একটি ‘নৃশংস এবং নিন্দনীয় কাজ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। আরএসএস-এর সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে এক বিবৃতিতে এই হামলায় প্রাণহানির জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল, ২০২৫) দুপুরে পহেলগামের মনোরম বাইসারান তৃণভূমিতে এই হামলা সংঘটিত হয়, যার ফলে ২৫ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুজন বিদেশি নাগরিক—একজন ইসরায়েলি এবং একজন ইতালীয়—রয়েছেন।

আরএসএস এই হামলাকে জাতির ঐক্য এবং অখণ্ডতার উপর একটি আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছে। হোসাবলে তাঁর বিবৃতিতে বলেন, “জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার এই জঘন্য কাজ অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং হৃদয়বিদারক। আমরা নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং এই হামলায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। এটি আমাদের জাতির ঐক্য এবং অখণ্ডতার উপর একটি আক্রমণ। সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনকে তাদের মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে এই সন্ত্রাসী কাজের নিন্দা করতে হবে।” তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন এই হামলার জন্য দায়ীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিক এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। হোসাবলে আরও বলেন, “সরকারের উচিত নিশ্চিত করা যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি সমস্ত প্রয়োজনীয় ত্রাণ এবং সহায়তা পায় এবং এই হামলার জন্য দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়।”

   

‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ), যা পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার একটি প্রক্সি গোষ্ঠী, সামাজিক মাধ্যমে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, হামলায় ৪ থেকে ৬ জন সন্ত্রাসী জড়িত ছিল, যাদের মধ্যে তিনজন বিদেশি এবং একজন স্থানীয় কাশ্মীরি। ঘটনাস্থল থেকে এম৪ এবং একে-৪৭ রাইফেলের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। হামলাকারীরা প্রথমে পুরুষ পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়, তবে নারী এবং বয়স্ক ব্যক্তিরাও এই হামলার শিকার হন। বাইসারান উপত্যকা, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ‘মিনি সুইৎজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত, শ্রীনগর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

হামলার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী বাইসারান উপত্যকা ঘিরে ফেলে এবং সতর্কতার সঙ্গে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, সন্ত্রাসীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করতে পারে, তাই অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) বুধবার পহেলগামে পৌঁছে তদন্ত শুরু করবে। স্থানীয় বাসিন্দারা পনির মাধ্যমে আহতদের উপত্যকা থেকে নামিয়ে আনতে সাহায্য করেছে, এবং হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। পহেলগাম হাসপাতালে ১২ জন আহত পর্যটক ভর্তি হয়েছেন, এবং চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই হামলাকে ‘জঘন্য কাণ্ড’ বলে নিন্দা করে বলেছেন, “হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।” তিনি তাঁর সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে মঙ্গলবার রাতেই ভারতে ফিরে আসছেন। মোদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে শ্রীনগরে পাঠিয়েছেন, যিনি মঙ্গলবার রাত ৯টার পর রাজভবনে উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠকে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিচালক নলিন প্রভাত, মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ, লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা এবং গোয়েন্দা ব্যুরোর পরিচালক তপন ডেকা উপস্থিত ছিলেন। শাহ বলেন, “এই হামলার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।”

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই হামলাকে ‘সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেসামরিক নাগরিকদের উপর সবচেয়ে বড় আক্রমণ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের অতিথিদের উপর এই হামলা একটি জঘন্য কাজ। এই হামলার কারিগররা পশু, অমানবিক এবং নিন্দার যোগ্য।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলার নিন্দা করে বলেছেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে।” মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, যিনি ভারতে সফরে রয়েছেন, এই হামলাকে ‘ভয়াবহ’ বলে সমবেদনা জানিয়েছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এটিকে ‘নৃশংস অপরাধ’ বলে নিন্দা করেছেন। ইসরায়েল, ফ্রান্স, ইরান এবং ইউক্রেনের দূতাবাসগুলিও এই হামলার নিন্দা করেছে।

এই হামলা কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের জন্য মারাত্মক আঘাত। ২০২৪ সালে কাশ্মীরে ৩৫ লক্ষ পর্যটক এসেছিলেন, এবং পহেলগাম ছিল তাঁদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য। এই ঘটনা পর্যটকদের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করতে পারে এবং অঞ্চলের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ৩ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া অমরনাথ যাত্রার আগে এই হামলা নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে।

আরএসএস-এর এই নিন্দা এবং দ্রুত বিচারের আহ্বান জাতীয় ঐক্যের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে। সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে এখন কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। এই হামলার তদন্ত এবং পরবর্তী পদক্ষেপ কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে।

Advertisements