কাশ্মীর হামলার নিন্দায় রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির কড়া বার্তা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে সংঘটিত ভয়াবহ জঙ্গি হামলার জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে গভীর…

Vladimir Putin Condemns Pahalgam Terror Attack

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে সংঘটিত ভয়াবহ জঙ্গি হামলার জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি এই ঘটনাকে ‘নৃশংস অপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং বলেছেন, এর কোনো ন্যায্যতা নেই। পাহলগামের জনপ্রিয় পর্যটন স্থান বাইসারান উপত্যকায় জঙ্গিদের এই হামলায় কমপক্ষে ২৮ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুজন বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন।

পুতিন তাঁর বিবৃতিতে এই হামলার সংগঠক এবং কার্যকরীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি রাশিয়ার পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের সকল রূপ ও প্রকাশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “পাহলগামে জঙ্গি হামলার মর্মান্তিক পরিণতির জন্য আন্তরিক সমবেদনা গ্রহণ করুন। এই হামলার শিকার হয়েছেন বিভিন্ন দেশের নিরীহ নাগরিকরা। এই নৃশংস অপরাধের কোনো ন্যায্যতা নেই। আমরা আশা করি, এর সংগঠক এবং কার্যকরীরা তাদের প্রাপ্য শাস্তি পাবে।”

   

পুতিন আরও অনুরোধ করেছেন যে, নিহতদের পরিবার এবং ঘনিষ্ঠদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা ও সমর্থনের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হোক। তিনি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। এই হামলা, যা মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল, ২০২৫) দুপুর আনুমানিক ২:৩০-এ বাইসারানের তৃণভূমিতে পর্যটকদের উপর চালানো হয়, কাশ্মীরের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি ঘটনাগুলির মধ্যে একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

লস্কর-ই-তৈবা (এলইটি)-এর সঙ্গে যুক্ত একটি জঙ্গি গোষ্ঠী এই হামলা চালায়, এবং ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামে একটি দল সামাজিক মাধ্যমে এর দায় স্বীকার করে। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, হামলায় ৪ থেকে ৬ জন জঙ্গি জড়িত ছিল, যাদের মধ্যে তিনজন বিদেশি এবং একজন স্থানীয় কাশ্মীরি। ঘটনাস্থল থেকে এম৪ এবং একে-৪৭ রাইফেলের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। হামলাকারীরা প্রথমে পুরুষ পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়, এবং নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিরাও এই হামলার শিকার হন। একজন আহত পর্যটক জানিয়েছেন, সামরিক পোশাক পরা দুজন জঙ্গি কাছ থেকে অন্ধভাবে গুলি চালায়, যার ফলে পর্যটকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

নিহতদের মধ্যে দুজন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন—একজন ইসরায়েলি এবং একজন ইতালীয়। গোয়েন্দা সূত্রের মতে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। হামলাটি পর্যটকদের জনপ্রিয় গন্তব্য বাইসারানে ঘটেছে, যা পাহলগামের মনোরম তৃণভূমি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এই ঘটনা কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে অমরনাথ যাত্রার আগে, যা ৩ জুলাই থেকে শুরু হবে।

হামলার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকাটি ঘিরে ফেলে এবং সতর্কতার সঙ্গে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, জঙ্গিরা নিরাপত্তা বাহিনীকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করতে পারে, তাই অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) তল্লাশি অভিযান শেষ হওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবে। স্থানীয় বাসিন্দারা আহতদের ঘোড়ায় করে তৃণভূমি থেকে নামিয়ে আনতে সাহায্য করেছে, এবং হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আহতদের হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, “যারা এই জঘন্য কাজের পিছনে রয়েছে, তাদের ছাড়া হবে না। আমাদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই অটুট।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শ্রীনগরে পৌঁছে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা আহতদের জন্য তাৎক্ষণিক চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, “এই হামলার পিছনে দায়ীদের শাস্তি থেকে রেহাই দেওয়া হবে না।”

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই হামলাকে ‘অমানবিক’ বলে নিন্দা করেছেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি এবং পিসি নেতা সাজ্জাদ লোনও এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। মুফতি বলেন, “কাশ্মীর ঐতিহ্যগতভাবে পর্যটকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে এসেছে। এই হামলা আমাদের আতিথেয়তার বিরুদ্ধে।”

পুতিনের এই বিবৃতি ভারত-রাশিয়ার দীর্ঘদিনের কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রতিফলন। রাশিয়া এবং ভারত দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করে আসছে, এবং পুতিনের বক্তব্য এই সহযোগিতার প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। ইসরায়েলের ভারতীয় দূতাবাসের মুখপাত্র গাই নির এবং আর্জেন্টিনার ভারতীয় রাষ্ট্রদূত মারিয়ানো কাউসিনোও এই হামলার নিন্দা করেছেন। নির বলেন, “ইসরায়েল ভারতের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একত্রিত।” কাউসিনো এই হামলাকে ‘জঘন্য’ বলে নিন্দা করেছেন।

এই হামলা কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের জন্য মারাত্মক আঘাত। ২০২৪ সালে কাশ্মীরে প্রায় ৩৫ লক্ষ পর্যটক এসেছিলেন, এবং পাহলগাম ছিল তাঁদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য। এই ঘটনা পর্যটকদের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করতে পারে এবং অঞ্চলের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। স্থানীয় নেতারা এই হামলাকে কাশ্মীরের আতিথেয়তা এবং জীবিকার বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে দেখছেন। সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে এখন কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে।

পুতিনের সমবেদনা এবং ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংহতির প্রতীক। তবে, এই হামলার পর কাশ্মীরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

Advertisements