বোকারোয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে নিকেশ ৮ নকশাল

ঝাড়খণ্ডের বোকারো (bokaro) জেলার লুগু পাহাড়ে সোমবার ভোরে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর কোবরা কমান্ডো এবং স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে নকশালদের তুমুল সংঘর্ষে আট নকশাল নিহত…

bokaro naxals dead

ঝাড়খণ্ডের বোকারো (bokaro) জেলার লুগু পাহাড়ে সোমবার ভোরে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ)-এর কোবরা কমান্ডো এবং স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে নকশালদের তুমুল সংঘর্ষে আট নকশাল নিহত হয়েছে। কর্তৃপক্ষের মতে, এই অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।

সংঘর্ষের বিবরণ

সোমবার ভোর ৫:৩০ নাগাদ বোকারো (bokaro) জেলার লালপানিয়া এলাকার লুগু পাহাড়ে নকশালদের উপস্থিতির গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান শুরু করে। সিআরপিএফ-এর ২০৯ কমান্ডো ব্যাটালিয়ন ফর রেজোলিউট অ্যাকশন (কোবরা), যারা জঙ্গল যুদ্ধে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত, এই অভিযানে নেতৃত্ব দেয়। ঝাড়খণ্ড পুলিশের সহযোগিতায় এই অভিযানে আট নকশাল নিহত হয়। সংঘর্ষের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো সদস্য আহত হননি।

   

উদ্ধারকৃত অস্ত্র (bokaro)

অভিযানের পর নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থল থেকে একটি এ কে সিরিজের রাইফেল, তিনটি ইনসাস রাইফেল, একটি সেলফ-লোডিং রাইফেল (এসএলআর), আটটি দেশীয় বন্দুক এবং একটি পিস্তল উদ্ধার করে। এছাড়াও, নকশালদের কাছ থেকে গোলাবারুদ এবং অন্যান্য সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়েছে। ঝাড়খণ্ড পুলিশের ডিজিপি জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে একজন নকশাল নেতা বিবেকও রয়েছেন, যার মাথার উপর ১ কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।

বামেদের চায়ের টাকাও তৃণমূল দেয়, সিপিএমের কেবল পোস্টারবাজি, কটাক্ষ দিলীপের

অভিযানের তাৎপর্য 

এই অভিযান কেন্দ্রীয় সরকারের ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে দেশ থেকে নকশাল এবং মাওবাদ নির্মূল করার অংশ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি বলেছেন, “মোদী সরকার নকশালদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করেছে। যারা আত্মসমর্পণ করছে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এই অভিযানটি ঝাড়খণ্ডে নকশালদের বিরুদ্ধে চলমান তীব্র অভিযানের একটি অংশ, যা সম্প্রতি প্রতিবেশী ছত্তিশগড়েও তীব্রতর হয়েছে।

Advertisements

প্রেক্ষাপট এবং চলমান অভিযান

লুগু পাহাড় (bokaro) এলাকা দীর্ঘদিন ধরে নকশালদের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালিত হয়, যেখানে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো এবং স্থানীয় পুলিশের তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অভিযান শেষ হওয়ার পরও এলাকায় তল্লাশি চলছে, কারণ আরও নকশালদের উপস্থিতির সম্ভাবনা রয়েছে। ঝাড়খণ্ড পুলিশের মুখপাত্র অমল হোমকার জানিয়েছেন, “আমরা ক্রমাগত তথ্য পাচ্ছি। চূড়ান্ত হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করতে আরও সময় লাগবে।”

নকশালবিরোধী অভিযানের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট

এই ঘটনা প্রমান করে কত তীব্রতার সাথে কেন্দ্র তার লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঝাড়খণ্ড এবং ছত্তিশগড়ে (bokaro) নকশালবিরোধী অভিযান তার ই প্রকাশ মাত্র । সম্প্রতি ছত্তিশগড়ের সুকমা জেলায় ১৭ জন নকশাল নিহত হয়েছে, এবং এই বছর ছত্তিশগড়ে মোট ১৩২ জন নকশাল নিহত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর নীতি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে নকশালদের উপর চাপ ক্রমশ বাড়ছে। অমিত শাহ ঘোষণা করেছেন যে, নকশালরা আত্মসমর্পণ না করলে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

এই অভিযান নকশালবিরোধী লড়াইয়ে একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হলেও, এটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। নকশালরা প্রায়ই গ্রামীণ এলাকায় দরিদ্র সম্প্রদায়ের সমর্থন নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে, সরকারের আত্মসমর্পণ নীতি এবং পুনর্বাসন প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক নকশাল মূলধারায় ফিরে আসছে। এই অভিযানের ফলে এলাকায় শান্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য স্থানীয় উন্নয়ন এবং জনগণের আস্থা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বোকারোর লুগু পাহাড়ে নকশালদের বিরুদ্ধে এই সফল অভিযান নিরাপত্তা বাহিনীর দক্ষতা এবং সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রমাণ। তবে, নকশালবাদের মূল কারণ যেমন দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং অসম উন্নয়নের সমাধান না হলে এই সমস্যা সম্পূর্ণ নির্মূল করা কঠিন হতে পারে। সরকারের ২০২৬ সালের লক্ষ্য পূরণের জন্য নিরাপত্তা অভিযানের পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের উপরও জোর দেওয়া প্রয়োজন।