নতুন উদ্যোগে এগোচ্ছে স্টাফ সিলেকশন কমিশন (SSC)। কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম বৃহৎ নিয়োগকারী সংস্থা এসএসসি ঘোষণা করেছে যে, আগামী মে ২০২৫ থেকে তাদের সব নিয়োগ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের পরিচয় যাচাইয়ের জন্য আধার-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক প্রমাণীকরণ চালু করা হবে। রোববার এক সরকারি বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এসএসসি-র আধিকারিকরা।
এই পদক্ষেপটি মূলত পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, পরিচয় যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা এবং জালিয়াতি বা প্রতারণার মতো ঘটনা রুখতে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই প্রমাণীকরণ পদ্ধতি স্বেচ্ছামূলকভাবে চালু করা হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।
পরিচয় যাচাইয়ের নতুন ধারা
আধার-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক প্রমাণীকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে পরীক্ষার্থীরা তাদের পরিচয় তিনটি ধাপে যাচাই করাতে পারবেন—অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের সময়, আবেদনপত্র পূরণের সময় এবং পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের সময়। এতে পরীক্ষার প্রক্রিয়াটি আরও সহজ, স্বচ্ছ এবং নির্ভরযোগ্য হবে বলে মনে করছে কমিশন।
স্টাফ সিলেকশন কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন বিভিন্ন মন্ত্রক ও বিভাগে ‘নন-গেজেটেড’ পদে কর্মী নিয়োগ করে থাকে। প্রতিবারই লক্ষ লক্ষ প্রার্থী বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকেন, যেমন—কম্বাইন্ড গ্র্যাজুয়েট লেভেল এক্সামিনেশন (CGLE) সহ একাধিক ওপেন কম্পিটিটিভ ও ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষা।
কমিশনের তরফ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “এসএসসি তার আগামি পরীক্ষাগুলিতে আধার-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক প্রমাণীকরণ প্রক্রিয়া চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে স্বেচ্ছাসেবী এবং পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থেই এটি চালু করা হচ্ছে।”
আধার কীভাবে কাজ করবে?
আধার হচ্ছে একটি ১২-সংখ্যার বিশেষ পরিচয় নম্বর, যা ভারতের ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি (UIDAI) দ্বারা প্রদান করা হয়। এটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বায়োমেট্রিক (যেমন—আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের মণির ছবি) এবং ডেমোগ্রাফিক তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়।
এই পদ্ধতির সাহায্যে একজন পরীক্ষার্থীর পরিচয় নিশ্চিত করা অনেক বেশি কার্যকর এবং নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে। সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বহুবার পরীক্ষায় ভুয়ো পরিচয়ে পরীক্ষা দেওয়া, অন্যের হয়ে পরীক্ষা দেওয়া বা পরিচয় গোপন করার মতো ঘটনা সামনে এসেছে। আধার-ভিত্তিক পদ্ধতি এসব অনিয়ম রুখতে কার্যকর হবে।
আইনি স্বীকৃতি ও নিরাপত্তা
২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কর্মীবিভাগ (Union Personnel Ministry) এক বিজ্ঞপ্তিতে এসএসসি-কে স্বেচ্ছামূলকভাবে আধার ব্যবহার করার অনুমোদন দেয়। তবে সেই সঙ্গে বলা হয়, এই প্রক্রিয়াটি অবশ্যই আধার (Targeted Delivery of Financial and Other Subsidies, Benefits and Services) আইন, ২০১৬ এবং UIDAI কর্তৃক নির্ধারিত যাবতীয় নিয়ম, বিধি ও নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হতে হবে।
তবে প্রমাণীকরণ প্রক্রিয়া স্বেচ্ছাসেবী হওয়ায়, কোনো পরীক্ষার্থী যদি এই পদ্ধতিতে অংশ নিতে না চান, তাহলেও তাঁর পরীক্ষায় বসতে কোনো বাধা থাকবে না। কমিশন জানিয়েছে, কোনওরকম জোর জবরদস্তি করা হবে না এবং বিকল্প পরিচয় যাচাইয়ের পদ্ধতিও চালু থাকবে।
পরীক্ষার ভবিষ্যৎ আরও প্রযুক্তিনির্ভর
এ ধরনের প্রযুক্তিনির্ভর পদক্ষেপ সরকারের ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরীক্ষা সংক্রান্ত জালিয়াতি এবং সিস্টেমিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের আধুনিক ব্যবস্থা দেশের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে। ভবিষ্যতে অন্যান্য নিয়োগকারী সংস্থাও এই পথ অনুসরণ করতে পারে।
পরীক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
এই ঘোষণার পর থেকেই পরীক্ষার্থী মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ একে যুগোপযোগী ও স্বাগতযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, আবার কারও মতে এটি প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রার্থীদের পক্ষে আধার সংশ্লিষ্ট সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা থাকায় তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা ব্যবস্থার দাবিও উঠছে।
কমিশন অবশ্য জানিয়েছে, এই নতুন ব্যবস্থাটি চালুর সময় সকল প্রার্থীর সুবিধা ও অসুবিধার বিষয় মাথায় রেখেই বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এসএসসি-র এই আধার-ভিত্তিক নতুন পদক্ষেপ দেশের নিয়োগ পরীক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনতে চলেছে। যদিও এটি এখনই বাধ্যতামূলক নয়, তবুও এই স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থার মাধ্যমে ভবিষ্যতে পরীক্ষায় প্রতারণা রোধে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলেই আশাবাদী কমিশন।