বাম ব্রিগেডে শ্রমিকদের ডাক, মাকুদের মিছিল বলে কটাক্ষ শুভেন্দুর

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মঞ্চে ফের উত্তেজনা। রবিবার কলকাতার ব্রিগেড (left brigade) প্যারেড গ্রাউন্ডে সিপিআই(এম)-এর নেতৃত্বে বামফ্রন্টের একটি বৃহৎ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এই সমাবেশে শ্রমিক, কৃষক,…

left brigade trolled by suvendu

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মঞ্চে ফের উত্তেজনা। রবিবার কলকাতার ব্রিগেড (left brigade) প্যারেড গ্রাউন্ডে সিপিআই(এম)-এর নেতৃত্বে বামফ্রন্টের একটি বৃহৎ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এই সমাবেশে শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর এবং বিভিন্ন প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মানুষের অংশগ্রহণের ডাক দেওয়া হয়েছে। তবে, এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তীব্র কটাক্ষ করে এটিকে “মাকুদের মিছিল” বলে আখ্যা দিয়েছেন, যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

Advertisements

এর আগেও মুর্শিদাবাদ হিংসার পরে মোহাম্মদ সেলিম এবং শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য ঘিরে তৈরী হয়েছিল বিতর্ক, তৈরী হয়েছিল রাম-বাম কাজিয়ার মঞ্চ। বাম ব্রিগেডকে কেন্দ্র করে শুভেন্দুর বক্তব্য এবার এই কাজিয়াকে নতুন রূপ দিল।

   

ব্রিগেড সমাবেশ: বামেদের লড়াইয়ের হাতিয়ার (left brigade)

সিপিআই(এম) এবং বামফ্রন্টের নেতৃত্বে এই ব্রিগেড (left brigade) সমাবেশকে তারা “মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই” হিসেবে অভিহিত করেছে। সমাবেশের প্রধান দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আইন প্রণয়ন, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প পুনরায় চালু করা, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি এবং আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ন্যায়বিচার। এছাড়াও, সম্প্রতি ২৬,০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিলের ঘটনাকেও এই সমাবেশে তুলে ধরা হয়েছে।

সিপিআই(এম) নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, “এই সমাবেশ (left brigade) শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের একটি মাইলফলক। উত্তরবঙ্গের চা বাগানের শ্রমিক, সুন্দরবনের মৎস্যজীবী, জঙ্গলমহলের আদিবাসী এবং বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার খেতমজুররা এই সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। আমরা শাসক দলের শোষণের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছি।” সমাবেশের প্রচারে সিপিআই(এম) সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক ব্যবহার করেছে, যেখানে তারা দাবি করেছে যে এই সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেবে।

সরকারি কর্মীদের জন্য আসছে ৮ম বেতন কমিশনের বিশাল সুবিধা

শুভেন্দুর কটাক্ষ

তবে, এই সমাবেশের (left brigade) প্রাক্কালে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বামেদের উদ্দেশে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন। একটি জনসভায় তিনি বলেন, “বামেদের ব্রিগেড সমাবেশ মানে মাকুদের মিছিল। এরা ক্ষমতায় থাকতে শ্রমিক-কৃষকদের শোষণ করেছে, এখন এই নাটক করে জনগণের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছে। জনগণ এদের ভণ্ডামি বোঝে।” তিনি আরও বলেন, “বামেদের সময়ে শিল্প ধ্বংস হয়েছে, কৃষকরা আত্মহত্যা করেছে। এখন এরা শ্রমিকদের নিয়ে মিছিল করছে? এটা হাস্যকর।”

শুভেন্দুর এই মন্তব্য বাম নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সিপিআই(এম) নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী শ্রমিকদের অপমান করেছেন। তিনি যে দলের প্রতিনিধিত্ব করেন, সেই বিজেপি শ্রমিক-বিরোধী নীতি চালাচ্ছে। আমাদের সমাবেশে লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষ অংশ নেবে, এবং আমরা দেখিয়ে দেব, জনগণের শক্তি কী।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বামফ্রন্ট ২০১১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। গত এক দশকে তারা বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে তারা শ্রমিক, কৃষক এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের ইস্যুতে রাজপথে সক্রিয় হয়েছে। ব্রিগেড সমাবেশকে তারা তাদের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা ফিরিয়ে আনার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে।

Advertisements

অন্যদিকে, বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক লড়াই চলছে। শুভেন্দু অধিকারী, যিনি ২০২০ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত আক্রমণ চালাচ্ছেন। তবে, বামেদের প্রতি তার এই কটাক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বামেদের সমাবেশকে গুরুত্ব দেওয়ার একটি কৌশল হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শুভেন্দুর মন্তব্য দিয়ে বামেদের সমাবেশকে অপ্রাসঙ্গিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু এই কটাক্ষ বাম সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ জাগাতে পারে, যা সমাবেশে অংশগ্রহণ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।”

সমাবেশের প্রস্তুতি ও প্রভাব

ব্রিগেড (left brigade) সমাবেশের জন্য বামফ্রন্ট ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সিটু, কৃষকসভা, খেতমজুর ইউনিয়ন এবং বস্তি উন্নয়ন সমিতির নেতৃত্বে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষকে কলকাতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের চা বাগানের শ্রমিকরা ট্রেনে করে কলকাতায় আসছেন, এবং সুন্দরবন, জঙ্গলমহল এবং পুরুলিয়ার প্রান্তিক মানুষের অংশগ্রহণের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র এবং অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতারা। এছাড়াও, সমাবেশে কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।

তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া

তৃণমূল কংগ্রেস এই সমাবেশ নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেনি। তবে, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “বামেদের সমাবেশে কতজন আসে, তা দেখার বিষয়। জনগণ তৃণমূলের উন্নয়নের পক্ষে। বামেদের সময়ে শিল্প ধ্বংস হয়েছিল, শ্রমিকরা দুর্দশার শিকার হয়েছিল। এখন তারা মানুষের মন ফেরানোর চেষ্টা করছে।”

ব্রিগেড (left brigade) সমাবেশের মাধ্যমে বামফ্রন্ট তাদের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ এই সমাবেশকে আরও আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। সমাবেশের সাফল্য নির্ভর করবে জনসমাগম এবং বামেদের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছানোর উপর। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মঞ্চে এই ঘটনা আগামী দিনে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।