West Bengal Wakf scam: ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে অগ্নিগর্ভ মুর্শিদাবাদ। সুতি-সামশেরগঞ্জে তুলকালাম। রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি ছাড়া সবাই আইনের বিরুদ্ধে সরব। পশ্চিমবঙ্গে এই আইন কার্যকর হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরপর তিনিই বাম জমানার ওয়াকফ কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। সেটাও আবার বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বর। রাজ্য পালাবদলের মাত্র চার মাস হয়েছে। তখন পশ্চিমবঙ্গে ডবল ইঞ্জিন সরকার। কেন্দ্রে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারে তৃণমূল শরিক। বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তৃণমূলের। সেই পরিস্থিতিতে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সুর চড়ান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বিধানসভায় সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের বাজেট আলোচনার সময় কোটি কোটি টাকার ওয়াকফ বোর্ড কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
সেদিন বিধানসভায় বাজেট আলোচনার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, “আমি এই বিভাগ নিজের হাতে রেখেছি একটাই কারণে—এটাকে আমি অবহেলিত হতে দেব না।”
Also Read | বাম জমানায় বাংলায় ১০০০ কোটির ওয়াকফ কেলেঙ্কারি!
সেদিন কংগ্রেস বিধায়ক আবু তাহের খান ওয়াকফ কেলেঙ্কারির বিস্তারিত তদন্তের দাবি জানানোর পর সিপিআইএম বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাও এই দাবির সঙ্গে সুর মেলান। তখন মোল্লার দিকে ইঙ্গিত করে মমতা বলেন, “আপনি এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। আমি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেব। আমি নিজে এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলাম। এর আগে এই বিষয়ে একটি বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনও গঠন করা হয়েছিল।”
তৎকালীন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এই সিবিআই তদন্তের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “সরকার চাইলে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে। বামফ্রন্টের শাসনামলে আমরা এবং অন্যান্য রাজ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে এই ধরনের বিষয়ে আমরা নিজেরাই তদন্ত করতে পারি। বর্তমান সরকার যদি তাদের নিজস্ব সংস্থার উপর ভরসা না করে, তবে সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা যে কোনও তদন্তকে স্বাগত জানাই।”
ওয়াকফ কেলেঙ্কারির ইতিহাস
ওয়াকফ বোর্ড কেলেঙ্কারির সূত্রপাত ১৯৯৬ সালে, যখন কলিন স্ট্রিটের একটি ওয়াকফ সম্পত্তিতে অনিয়ম ধরা পড়ে। ওই বছরই তৎকালীন বিচারবিভাগীয় সচিব পি কে সেনগুপ্ত এই বিষয়ে তদন্ত করেন। জ্যোতি বসু সরকার বিচারপতি গীতেশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি এক সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করে। ২০০১ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই কমিশন তার ১,৪০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে, এই তদন্তের ফলাফল নিয়ে তখন থেকেই বিতর্ক চলছে।
ওয়াকফ বোর্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ উঠছে। এই কেলেঙ্কারির মূল বিষয় হল ওয়াকফ সম্পত্তির অবৈধ ব্যবহার এবং তহবিলের অপব্যবহার। মমতা জানিয়েছিলেন, “এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। যদি কোনও অনিয়ম হয়ে থাকে, তবে তা বেরিয়ে আসবে। আমি কাউকে ছাড় দেব না।”
মুর্শিদাবাদের হিংসার পিছনেও কি সেই কেলেঙ্কারি। কারণ মুর্শিদাবাদের ওয়াকফ সম্পত্তির একটা বড় অংশ নেতাদের দখলে। সেই সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়ার ভয়েই তাঁরা হিংসায় উসকানি দিয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করতে থাকা সম্পত্তি কেই বা হাতছাড়া করতে চায়? এমনই কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল বাম জমানায়। যার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় ১৪ বছর আগের সেই নির্দেশ অনুযায়ী কি কাজ হয়েছিল? এ প্রশ্নের উত্তর অজানা।