হাইকোর্টের বিতর্কিত ধর্ষণ মামলার রায়কে ভর্ৎসনা সুপ্রিম কোর্টের

সুপ্রিম কোর্ট (supreme court) মঙ্গলবার এলাহাবাদ হাইকোর্টের একটি ধর্ষণ মামলায় বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। হাইকোর্ট সম্প্রতি একটি ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তকে জামিন মঞ্জুর…

supreme court on rape case

সুপ্রিম কোর্ট (supreme court) মঙ্গলবার এলাহাবাদ হাইকোর্টের একটি ধর্ষণ মামলায় বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। হাইকোর্ট সম্প্রতি একটি ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তকে জামিন মঞ্জুর করার সময় বলেছিল, অভিযোগকারিণী “নিজেই সমস্যা ডেকে এনেছেন” কারণ তিনি মদ্যপানের পর অভিযুক্তের বাড়িতে যেতে সম্মত হয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, জামিনের আবেদনের বিষয়ে রায় দেওয়ার সময় এমন মন্তব্য করার প্রয়োজন কী ছিল।

এই পর্যবেক্ষণ এসেছে যখন সুপ্রিম কোর্ট (supreme court) এলাহাবাদ হাইকোর্টের আরেকটি আদেশ নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলার শুনানি করছিল। গত ১৭ মার্চ হাইকোর্টের ওই আদেশে বলা হয়েছিল, কোনো নারীর স্তন স্পর্শ করা বা তার পায়জামার ফিতা টানা ধর্ষণের চেষ্টার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। এই দুটি ঘটনাই হাইকোর্টের বিচার প্রক্রিয়া এবং মহিলাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

সুপ্রিম কোর্টের (supreme court) ক্ষোভ

বিচারপতিদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের (supreme court) বেঞ্চ এলাহাবাদ হাইকোর্টের মন্তব্যকে “অগ্রহণযোগ্য” এবং “অনুচিত” বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেন, “একটি ধর্ষণ মামলায় জামিনের আবেদন বিবেচনা করার সময় এমন মন্তব্য করার কী প্রয়োজন ছিল? অভিযোগকারিণীকে দোষারোপ করা এবং তার চরিত্রের উপর প্রশ্ন তোলা বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।” সুপ্রিম কোর্ট জোর দিয়ে বলেছে, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধে অভিযুক্তদের জামিন দেওয়ার সময় বিচারকদের অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং ভুক্তভোগীর মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখানো উচিত।

মার্চের আদেশে হাইকোর্টের মন্তব্য নিয়েও সুপ্রিম কোর্ট তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। তারা বলেন, “স্তন স্পর্শ করা বা পায়জামার ফিতা টানাকে ধর্ষণের চেষ্টা হিসেবে গণ্য না করার মন্তব্য অত্যন্ত গুরুতর এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারাগুলোর সঠিক ব্যাখ্যার পরিপন্থী। এটি যৌন হয়রানি এবং নারীর প্রতি অপমানজনক আচরণের বিষয়ে ভুল বার্তা দেয়।”

সুপার কাপ প্রস্তুতির আগে পয়লা বৈশাখে বারপুজোয় মাতল ইস্টবেঙ্গল

হাইকোর্টের আদেশের পটভূমি

এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রথম মামলাটি একটি ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে, যেখানে অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হয়। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, অভিযোগকারিণী মদ্যপানের পর অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়েছিলেন, যা তিনি নিজেই “সমস্যা ডেকে এনেছে”। এই মন্তব্য নারীবাদী সংগঠন এবং আইনজীবী মহলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। অনেকে বলছেন, এই ধরনের মন্তব্য ভুক্তভোগীদের দোষারোপ করে এবং ধর্ষণ সংস্কৃতির প্রতি পরোক্ষ সমর্থন দেয়।

দ্বিতীয় মামলায়, হাইকোর্টের ১৭ মার্চের আদেশে বলা হয়, স্তন স্পর্শ করা বা পায়জামার ফিতা টানা ধর্ষণের চেষ্টার অপরাধ নয়। এই মন্তব্য ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩৫৪ (নারীর লজ্জা ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ) এবং ধারা ৩৫৪বি (যৌন নিপীড়ন) এর ব্যাখ্যার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বিবেচিত হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট এই আদেশের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা নিয়ে শুনানি করছে।

Advertisements

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ

সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের এই দুটি আদেশের বিষয়ে বিস্তারিত শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেছে। তারা বলেছে, “এই ধরনের মন্তব্য বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ করে। আমরা এই মামলাগুলোর পুনর্বিবেচনা করব এবং প্রয়োজনে নতুন নির্দেশিকা জারি করব।” সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের বিচারকদের জন্য লিঙ্গ সংবেদনশীলতার উপর প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছে।

বিচারপতিরা আরও বলেন, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের মামলায় ভুক্তভোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা উচিত। “অভিযোগকারিণীকে দোষারোপ করা বা তার জীবনযাত্রার উপর মন্তব্য করা অগ্রহণযোগ্য। বিচারকদের কাজ অপরাধের তথ্য বিশ্লেষণ করা, ব্যক্তিগত মতামত দেওয়া নয়,” তারা বলেন।

সমাজে প্রভাব

এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই মন্তব্য নারী অধিকার কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। নারীবাদী সংগঠনগুলো বলছে, এই ধরনের মন্তব্য ধর্ষণের শিকার নারীদের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করে এবং অপরাধীদের উৎসাহিত করে। একজন নারী অধিকার কর্মী বলেন, “যখন বিচারকরা ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করেন, তখন নারীরা থানায় অভিযোগ করতে ভয় পান। এটি আমাদের বিচার ব্যবস্থার ব্যর্থতা।”
সামাজিক মাধ্যমে এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ হচ্ছে। অনেকে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আশা করছেন, এই ঘটনা ভবিষ্যতে বিচারকদের আরও সংবেদনশীল হতে বাধ্য করবে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলোও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কংগ্রেস নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছেন, “নারীদের প্রতি এমন মন্তব্য বিচার ব্যবস্থার পক্ষপাতমূলক মানসিকতাকে প্রকাশ করে। আমরা নারীদের ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।” বিজেপি নেতারা বলেছেন, তারা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সমর্থন করে এবং নারী নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে। তবে, কিছু সমালোচক বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলো এই ইস্যুতে প্রকৃত সংস্কারের পরিবর্তে কেবল বক্তব্য দিচ্ছে।

এলাহাবাদ হাইকোর্টের ধর্ষণ মামলায় বিতর্কিত মন্তব্য ভারতের বিচার ব্যবস্থায় লিঙ্গ সংবেদনশীলতার অভাবকে তুলে ধরেছে। সুপ্রিম কোর্টের কঠোর প্রতিক্রিয়া এবং হস্তক্ষেপ এই ধরনের মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের মামলায় ভুক্তভোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া সময়ের দাবি। এই ঘটনা আমাদের সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়, নারীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় বিচার ব্যবস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।