আইপিএল ২০২৫-এর (IPL 2025) ২৮তম ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) জয়পুরের সাওয়াই মানসিং স্টেডিয়ামে রাজস্থান রয়্যালসকে (আরআর) নয় উইকেটের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে। ফিল সল্টের ৩৩ বলে বিস্ফোরক ৬৫ রানের ইনিংস এবং বিরাট কোহলির অপরাজিত ৬২ রানের শান্ত, নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিংয়ের সৌজন্যে আরসিবি মাত্র ১৭.৩ ওভারে ১৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করে এই মরশুমে তাদের চতুর্থ জয় নিশ্চিত করে। এই জয়ের সঙ্গে আরসিবি পয়েন্ট টেবিলে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে, যদিও তাদের সব জয় এসেছে বাইরের মাঠে। যশস্বী জয়সওয়ালের ৪৭ বলে ৭৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস সত্ত্বেও রাজস্থান হতাশ হয়েছে, কারণ তাদের বোলাররা সল্ট এবং কোহলির আক্রমণের সামনে দিশেহারা হয়ে পড়ে।
ম্যাচের শুরু: আরসিবির বোলিংয়ের সাফল্য
আরসিবি অধিনায়ক রজত পাটীদার টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। সাওয়াই মানসিং স্টেডিয়ামের ধীরগতির এবং অসমান বাউন্সের পিচে এই সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হয়। রাজস্থান রয়্যালস ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭৩ রান তুলতে সমর্থ হয়। তরুণ ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল এই ইনিংসের নায়ক ছিলেন। তিনি ৪৭ বলে ৭৫ রান করেন, যার মধ্যে ছিল ১০টি চার এবং দুটি ছক্কা। তার বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিং এই কঠিন পিচে রাজস্থানের স্কোরকে সম্মানজনক স্তরে পৌঁছে দেয়। জয়সওয়াল পঞ্চম ওভারে যশ দয়ালের বিরুদ্ধে একটি ছক্কা এবং একটি চার মেরে গতি পান এবং ৩৫ বলে মরশুমের দ্বিতীয় ফিফটি পূর্ণ করেন।
রিয়ান পরাগের সঙ্গে তার ৩৯ বলে ৫৬ রানের জুটি রাজস্থানকে শক্ত ভিত দেয়। পরাগ ১৮ বলে ৩০ রান করেন, যার মধ্যে একটি ছক্কা এবং তিনটি চার ছিল। তবে, দয়ালের হাতে সহজ ক্যাচ ফেলার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও পরাগ তার ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন। দয়ালের ধীরগতির বলে তিনি কোহলির হাতে ক্যাচ দেন। অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন এদিন মন্থর ব্যাটিং করেন। ১৬ বলে মাত্র ১৩ রান করে তিনি ক্রুণাল পাণ্ড্যের বলে স্টাম্পড হন। শেষ দিকে ধ্রুব জুরেল ২৩ বলে অপরাজিত ৩৫ রান করেন, তবে শুরুতে বেশ কয়েকটি ডট বল খেলে তিনি চাপ বাড়ান। জয়সওয়াল জশ হ্যাজেলউডের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে একটি দুর্দান্ত স্কুপ শটে ছক্কা হাঁকান। আরসিবির বোলারদের মধ্যে দয়াল এবং হ্যাজেলউড একটি করে উইকেট নেন, যখন ভুবনেশ্বর কুমার এবং পাণ্ড্য শৃঙ্খলাবদ্ধ বোলিং করেন।
ফিল সল্টের আগুনঝরা ইনিংস
১৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আরসিবি ওপেনার ফিল সল্ট শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন। প্রথম ওভারেই তিনি জোফ্রা আর্চারের বলে টপ-এজ করে ছক্কা মারেন এবং একটি এলবিডব্লিউ আবেদন থেকে বেঁচে যান। সল্ট লেগ-সাইডে শট খেলতে ক্রিজে ঘুরে বেড়ান এবং মাত্র ২৮ বলে মরশুমের দ্বিতীয় ফিফটি পূর্ণ করেন। তার ৩৩ বলে ৬৫ রানের ইনিংসে ছিল ৬টি ছক্কা এবং ৫টি চার। পাওয়ারপ্লেতে আরসিবি ৬৫ রান তুলে ফেলে, যা ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে।
সল্টের পথে কিছু ভাগ্য ছিল। ২৩ রানে সন্দীপ শর্মার প্রত্যাবর্তন ক্যাচের চেষ্টায় বল তার হাতে লাগলেও ধরা যায়নি। আবার ৪০ রানে জয়সওয়াল কাভারে তার সহজ ক্যাচ ফেলেন, যা রান-আউটের সুযোগও তৈরি করে। তবে, স্টাম্পে বল না লাগায় সল্ট বেঁচে যান। তিনি এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেন এবং রাজস্থানের বোলারদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। কুমার কার্তিকেয়ার বলে বোল্ড হওয়ার আগে তিনি আরসিবিকে ৮২ রান বাকি থাকতে শক্ত অবস্থানে রাখেন।
বিরাট কোহলির শান্ত নৈপুণ্য
সল্টের আক্রমণের পাশে বিরাট কোহলি শুরুতে শান্ত ভূমিকা পালন করেন। প্রথম ছয় বলে তিনি মাত্র ৭ রান করেন এবং সন্দীপ শর্মার ধীরগতির বলে মিড-অফে রিয়ান পরাগের হাতে সহজ ক্যাচ ফেলার সুযোগ পান। তবে, কোহলি দ্রুত নিজেকে সংগঠিত করেন এবং তার অভিজ্ঞতার পরিচয় দেন। ৪৫ বলে অপরাজিত ৬২ রানের ইনিংসে তিনি ৪টি চার এবং ২টি ছক্কা মারেন। তার ইনিংসে ছিল ২৫টি সিঙ্গল, যা লক্ষ্য তাড়ার গতি নিয়ন্ত্রণে রাখে।
কোহলি ১৫তম ওভারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে সোজা বাউন্ডারি মেরে তার ১০০তম টি-টোয়েন্টি ফিফটি পূর্ণ করেন। এই ওভারে ১৪ রান আসে, যা লক্ষ্যকে ৩০ বলে ২৮ রানে নামিয়ে আনে। কোহলির এই ফিফটি ছিল তার ৪০৫তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে, যেখানে তার রয়েছে ১০০টি ফিফটি এবং ৯টি সেঞ্চুরি। সল্টের সঙ্গে তার ৯২ রানের ওপেনিং জুটি ম্যাচের ফলাফল নিশ্চিত করে।
ম্যাচের পরিসংখ্যান
- রাজস্থান রয়্যালস: ১৭৩/৪ (২০ ওভার)
- যশস্বী জয়সওয়াল: ৭৫ (৪৭ বল, ১০ চার, ২ ছক্কা)
- ধ্রুব জুরেল: ৩৫* (২৩ বল)
- রিয়ান পরাগ: ৩০ (১৮ বল)
- যশ দয়াল: ১ উইকেট, জশ হ্যাজেলউড: ১ উইকেট
- আরসিবি: ১৭৪/১ (১৭.৩ ওভার)
ফিল সল্ট: ৬৫ (৩৩ বল, ৫ চার, ৬ ছক্কা) - বিরাট কোহলি: ৬২* (৪৫ বল, ৪ চার, ২ ছক্কা)
- কুমার কার্তিকেয়া: ১ উইকেট
ম্যাচের প্রভাব ও ভবিষ্যৎ
এই জয় আরসিবির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা এই মরশুমে ঘরের মাঠে এখনও জয় পায়নি। সল্টের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এবং কোহলির অভিজ্ঞতার সমন্বয় দলের ব্যাটিং শক্তিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। রাজস্থানের জন্য এই হার তাদের প্লে-অফের সম্ভাবনায় ধাক্কা দিয়েছে। জয়সওয়ালের ইনিংস সত্ত্বেও তাদের মিডল অর্ডার এবং বোলিং ইউনিট এদিন সঠিক ছন্দে ছিল না। আর্চার এবং হাসারাঙ্গার মতো তারকারা ব্যয়বহুল প্রমাণিত হন।
এই ম্যাচ ছিল আরসিবির ব্যাটিং দক্ষতার একটি দুর্দান্ত প্রদর্শনী। ফিল সল্টের আগ্রাসী শুরু এবং বিরাট কোহলির শান্ত ফিনিশিং রাজস্থানকে পিছনে ফেলে দেয়। জয়সওয়ালের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয় হলেও, রাজস্থানের বাকি ব্যাটাররা এই ধীরগতির পিচে লড়াই করেন। আরসিবি এই জয়ের গতি ধরে রাখতে চাইবে, যখন রাজস্থান তাদের পরবর্তী ম্যাচে ফিরে আসার জন্য মরিয়া হবে।