বর্তমানে অধিকাংশ কর্পোরেট সংস্থা তাদের কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্যবিমার (Health Insurance) সুবিধা দিয়ে থাকে। এই কর্পোরেট স্বাস্থ্যবিমা সাধারণত কর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও মৌলিক চিকিৎসা খরচের আওতায় আনে। অনেক কর্মীই এই বিমার সঙ্গে অতিরিক্ত একটি টপ-আপ প্ল্যান যোগ করেন যাতে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। তবে এই অতিরিক্ত প্ল্যানের খরচ কর্মীকেই বহন করতে হয়। কিন্তু এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল—কর্মী যদি চাকরি হারান বা চাকরি ছেড়ে দেন, তাহলে এই কর্পোরেট স্বাস্থ্যবিমার কী হবে?
চাকরি হারালে কর্পোরেট স্বাস্থ্যবিমার অবস্থা
যদি কোনও কর্মী স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়েন বা সংস্থা তাকে বরখাস্ত করে, তাহলে কর্পোরেট স্বাস্থ্যবিমার কভারেজ তখনই বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ, যতদিন কর্মী সংস্থায় কর্মরত থাকেন, ততদিনই তিনি এই বিমার সুবিধা পেতে পারেন। একই নিয়ম প্রযোজ্য চাকরি পরিবর্তন বা ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রেও।
এছাড়া, যদি কেউ কর্পোরেট বিমার টপ-আপ অংশে আলাদা অর্থ প্রদান করে থাকেন, তাহলে সেই অতিরিক্ত অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে কিনা তা নির্ভর করে বিমা সংস্থার নির্দিষ্ট নীতির ওপর। অনেক বিমা সংস্থাই টপ-আপ প্ল্যানের জন্য মধ্যবর্তী সময়ে বাতিলের নিয়ম রাখে, তবে সবক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। ফলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে কিনা, তা নির্ভর করে সেই নির্দিষ্ট শর্তাবলীর ওপর।
কর্মীদের জন্য উপলব্ধ বিকল্প
চাকরি ছাড়ার সময় বা তার আগেই কর্মীদের উচিত তাদের মানবসম্পদ (HR) বিভাগ বা বিমা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করা—এই কর্পোরেট গ্রুপ হেলথ পলিসি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিমা হিসেবে রূপান্তর করা সম্ভব কি না। অনেক বিমা সংস্থা এখন এই রূপান্তরের সুযোগ দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বিমার কভারেজ অব্যাহত থাকে, তেমনই পূর্ববর্তী ওয়েটিং পিরিয়ড বা পূর্ব-অবস্থার চিকিৎসা সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতাগুলোও নতুন ব্যক্তিগত পলিসিতে বহাল থাকে।
চাকরি হারালে বা পরিবর্তন করলে অনাকাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য-ঝুঁকি তৈরি হয়, কারণ সেই সময় যদি কোনও গুরুতর চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে, আর বিমা না থাকে, তাহলে অর্থনৈতিক চাপ ভয়ানক হতে পারে। তাই চাকরি থাকাকালীনই একটি নিজস্ব স্বাস্থ্যবিমা কিনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
নিজস্ব স্বাস্থ্যবিমার প্রয়োজনীয়তা
নিজস্ব স্বাস্থ্যবিমা থাকলে তা চাকরি পরিবর্তন, অবসান বা অন্যান্য পরিস্থিতিতেও চালু থাকে। যদিও কর্পোরেট বিমার তুলনায় নিজের কেনা বিমা কিছুটা ব্যয়বহুল হয়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি অনেক বেশি নিরাপদ এবং স্থিতিশীল। বিশেষ করে যারা বয়সে অপেক্ষাকৃত বেশি বা যাদের পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতার ইতিহাস আছে, তাদের জন্য এই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিমা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র কর্পোরেট বিমার ওপর নির্ভর না করে নিজের একটা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিমাও রাখা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে চাকরি পরিবর্তনের সময় নতুন সংস্থা সঙ্গে সঙ্গে বিমা সুবিধা চালু করে না। আবার অনেক সংস্থায় ওয়েটিং পিরিয়ড থাকে, যার মধ্যে কোনো রোগের চিকিৎসার খরচ পাওয়া যায় না।
করণীয়
১. চাকরি ছাড়ার আগে HR-এর সঙ্গে আলোচনা করে বিমার স্ট্যাটাস জেনে নিন।
২. কর্পোরেট বিমা ব্যক্তিগত বিমায় রূপান্তরের সুযোগ থাকলে তা দ্রুত সম্পন্ন করুন।
৩. যদি এখনও নিজস্ব স্বাস্থ্যবিমা না থাকে, তবে যত দ্রুত সম্ভব একটি কিনে ফেলুন।
৪. বয়স অনুযায়ী ও পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী বিমার পরিমাণ নির্ধারণ করুন।
৫. বিমা নেওয়ার আগে নীতিমালাগুলো ভালোভাবে পড়ুন—বিশেষ করে ওয়েটিং পিরিয়ড, প্রি-এক্সিস্টিং ডিজিজ কভার, রিনিউয়ালের শর্ত ইত্যাদি।
চাকরি থাকাকালীন কর্পোরেট স্বাস্থ্যবিমা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলেও, এটি চিরস্থায়ী নয়। কর্মজীবনের অনিশ্চয়তা মাথায় রেখে সকলেরই উচিত নিজস্ব স্বাস্থ্যবিমা রাখা, যাতে কোনো সময় চিকিৎসা খরচের জন্য বিমার অভাবে সমস্যায় না পড়তে হয়। ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য সচেতনতা ও আগাম প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি।