দেশজুড়ে নারী নিরাপত্তা নিয়ে যখন একের পর এক প্রশ্ন উঠছে, ঠিক তখনই ফের একবার ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী থাকল বিহারের বেগুসরাই জেলা। শনিবার গভীর রাতে ঘটল এক মর্মান্তিক ও নৃশংস ঘটনা, যেখানে এক ঘুমন্ত যুবতীর মুখ ও শরীর অ্যাসিডে (Acid attack in Bihar) ঝলসে গেল। আক্রান্ত যুবতী পল্লবী রাঠোর, স্থানীয় বিজেপি নেতা সঞ্জয় কুমার সিংয়ের মেয়ে। রাতের অন্ধকারে বাড়ির পাঁচিল টপকে এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবক তাঁর ঘরে প্রবেশ করে, জানালার ফাঁক দিয়ে অ্যাসিড ছুড়ে আক্রমণ করে তাঁকে।
জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় বাড়ির একতলায় ঘুমোচ্ছিলেন পল্লবী। গরমের জন্য জানালা খোলা ছিল। সেই সুযোগ নিয়েই হামলাকারী বাইরের দিক থেকে অ্যাসিড ছুড়ে মারে তাঁর মুখে ও শরীরে। চিৎকার শুনে প্রথমে পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন কোনও টিকটিকি বা ইঁদুর দেখে ভয় পেয়ে চেঁচাচ্ছে পল্লবী। কিন্তু দ্রুতই বুঝতে পারেন ব্যাপারটা ভয়ঙ্কর। ঘরে ঢুকেই দেখতে পান, অ্যাসিডে ঝলসে গেছে মেয়ের মুখমণ্ডল এবং শরীরের বড় অংশ। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখান থেকে Patna Medical College and Hospital-এ স্থানান্তরিত করা হয়।
পল্লবীর বাবা সঞ্জয় কুমার সিং, যিনি বাখরি এলাকার বিজেপি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, এই ঘটনার পর পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে এই হামলার পিছনে কে বা কারা রয়েছে, কিংবা কী উদ্দেশ্যে এই আক্রমণ চালানো হয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে, এবং সন্দেহভাজনদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পল্লবী রাঠোর দুই বছর আগে কলেজ পাশ করেছেন। বর্তমানে তিনি সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁর কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা বা বিরোধের খবর এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ফলে এই হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
এই ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্যে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজদ (RJD) নেতা তেজস্বী যাদব এক টুইটে লেখেন, “বিহারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে কতটা অবনতি হয়েছে, তা বোঝা যায় এই ঘটনায়। আজ মানুষ নিজের বাড়িতেও নিরাপদ নয়। বিজেপি নেতার মেয়েকেও যখন এইভাবে টার্গেট করা হয়, তখন শাসক দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। আমরা এই নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা করি এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
এই ঘটনাকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “এই ধরনের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি এখানে। কারা এমন কাজ করল, আমরা চাই দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।”
নারী নিরাপত্তা নিয়ে যখন গোটা দেশ উদ্বিগ্ন, তখন বিহারের এই ঘটনা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, অনেক জায়গাতেই এখনো সাধারণ নাগরিক, বিশেষ করে নারীরা নিরাপদ নন। ঘুমন্ত অবস্থায় অ্যাসিড হামলার মতো নির্মম ঘটনা সমাজকে নাড়া দেয়। এখন দেখার, প্রশাসন কত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনে এবং পল্লবী ও তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়ায়। একইসঙ্গে সমাজ ও প্রশাসনের উচিত, এই ধরনের অপরাধ রুখতে আরও কঠোর আইন প্রয়োগ এবং সচেতনতা বাড়ানো।