অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশে করা দক্ষিণ কোরিয়ার মহিলা গ্রেফতার

উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচ জেলায় শনিবার রাতে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি) এবং উত্তরপ্রদেশ পুলিশের যৌথ দল এক দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korean) মহিলাকে গ্রেফতার করেছে।…

South Korean Woman Arrested in UP

উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচ জেলায় শনিবার রাতে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি) এবং উত্তরপ্রদেশ পুলিশের যৌথ দল এক দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korean) মহিলাকে গ্রেফতার করেছে। অভিযোগ, ওই মহিলা নেপালের মাধ্যমে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করছিলেন এবং এই সময় তিনি তার নাম পরিবর্তন করে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করছিলেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ঘটনা ভারত-নেপাল সীমান্তে নিরাপত্তার বিষয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) দুর্গা প্রসাদ তিওয়ারি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শনিবার রাত প্রায় ১১টার দিকে বাহরাইচ জেলার রূপইডিহার সীমান্ত ইন্টার কলেজের কাছে এসএসবি এবং পুলিশের যৌথ দল এক বিদেশি নাগরিককে আটক করে। তিনি আরও বলেন, “ওই মহিলা নেপাল থেকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করছিলেন। আমাদের দল তাকে থামিয়ে তার পরিচয় যাচাই করে।” পরবর্তী তদন্তে জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়া মহিলার নাম পার্ক সেরিয়ন ওরফে য়োগসুক। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের বাসিন্দা এবং তার বয়স ৫৪ বছর।

   

কর্মকর্তাদের মতে, পার্ক সেরিয়ন সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফ্লাইটে করে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এসেছিলেন। এরপর তিনি দিল্লি থেকে নেপালের কাঠমান্ডুতে পৌঁছান। সেখান থেকে তিনি ভারত-নেপাল সীমান্তের রূপইডিহা চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। তবে তিনি বৈধ ভিসা বা অনুমতি ছাড়াই এই প্রবেশের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানা গেছে। সীমান্তে নজরদারি চলাকালীন এসএসবি এবং পুলিশের সতর্ক দল তার গতিবিধি লক্ষ্য করে তাকে আটক করে।

Advertisements

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তিওয়ারি জানান, “তার কাছে থাকা নথিপত্র যাচাই করা হয়েছে। তিনি তার আসল নাম গোপন করে য়োগসুক নামে নিজেকে পরিচয় দিচ্ছিলেন। এই ধরনের কার্যকলাপ সীমান্তে নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ।” পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পার্ক সেরিয়নের কাছে দক্ষিণ কোরিয়ার পাসপোর্ট ছিল, তবে ভারতে প্রবেশের জন্য তার কাছে কোনও বৈধ ভিসা বা অনুমতি পাওয়া যায়নি।

পার্ক সেরিয়ন কেন এইভাবে ভারতে প্রবেশ করতে চাইছিলেন, তা নিয়ে এখনও স্পষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ ও এসএসবি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, এবং তার উদ্দেশ্য জানার চেষ্টা চলছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনি সম্ভবত কোনও বিশেষ কারণে ভারতে আসতে চাইছিলেন, যা বৈধ পথে সম্ভব হয়নি। এই ঘটনা নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, এবং তাদের কাছে এই বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে।

ভারত-নেপাল সীমান্তের এই এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ প্রবেশ ও চোরাচালানের জন্য কুখ্যাত। এই ঘটনা সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পার্ক সেরিয়নের বিরুদ্ধে ভারতীয় পাসপোর্ট আইন এবং অবৈধ প্রবেশের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এই ঘটনার পর ভারত-নেপাল সীমান্তে নিরাপত্তা আরও কঠোর করা হয়েছে। এসএসবি এবং উত্তরপ্রদেশ পুলিশের যৌথ টিম এখন রূপইডিহা এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, “আমরা সীমান্তে কড়া নজর রাখছি। এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” গত কয়েক বছরে এই সীমান্ত দিয়ে বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন, যার মধ্যে চীন, পাকিস্তান এবং নেপালের নাগরিকরা উল্লেখযোগ্য।

এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, সীমান্তে নিরাপত্তার অভাবের কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এখানে প্রায়ই অবৈধ কার্যকলাপ হয়। সরকারের উচিত আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।” অন্যদিকে, কেউ কেউ এই ঘটনাকে একটি বিচ্ছিন্ন কাণ্ড হিসেবে দেখছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, পার্ক সেরিয়নের গ্রেফতারির পর তাকে স্থানীয় থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এবং তদন্তে তার ভ্রমণের পেছনের উদ্দেশ্য ও সম্ভাব্য সহযোগীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, এই ঘটনা নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই ঘটনা ভারত-নেপাল সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। পার্ক সেরিয়নের অবৈধ প্রবেশের উদ্দেশ্য কী ছিল, তা তদন্তের পরই স্পষ্ট হবে। তবে এই ঘটনা সীমান্তে কড়াকড়ি এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আগামী দিনে তদন্তের ফলাফলের দিকে নজর রাখছে সবাই।