সম্প্রতি রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব (Ashwini Vaishnaw) বাংলার রেল প্রকল্পের অগ্রগতির জন্য জমিজটকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পক্ষ থেকে জমি সংক্রান্ত সমস্যা থাকায় বহু রেল প্রকল্প থমকে পড়েছে।
বিশেষ করে, খিদিরপুর স্টেশনে মেট্রো প্রকল্পের কাজেও সমস্যা হচ্ছে। রেলমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে ভবানীপুর কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করেন, যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংসদীয় কেন্দ্র। তাঁর দাবি, এখানে রাজ্য সরকারের জমি প্রয়োজন এবং কেন্দ্র সরকারের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজ্যের সহযোগিতা কামনা করেন।
অশ্বিনী বৈষ্ণব আরও অভিযোগ করেন, জমিজটের কারণে নন্দীগ্রামে রেল প্রকল্পে সমস্যা হয়েছে এবং বর্তমানে নিউ ব্যারাকপুর-বারাসত রেল প্রকল্পেও এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “মোদী সরকারের ১০ বছরে কলকাতা মেট্রোর কাজ হয়েছে ৩৮ কিমি, অথচ ১৯৭২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত, অর্থাৎ ৪২ বছরে, কলকাতা মেট্রো শুধু ২৮ কিমি পর্যন্তই এগিয়েছে।” এর মাধ্যমে তিনি মোদী সরকারের প্রতি প্রশংসা প্রদর্শন করার চেষ্টা করেন।
তবে, রেলমন্ত্রীর এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সংসদীয় নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন রাজ্যসভায় রেলমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি সংসদের রুল তুলে ধরে বক্তব্য পেশ করতে চাইলেও রাজ্যসভার প্যানেল চেয়ারম্যান, বিজেপি সাংসদ ঘনশ্যাম তিওয়ারি তাকে অনুমতি দেননি। এর পর তৃণমূল সাংসদরা রাজ্যসভার কক্ষ থেকে ওয়াক আউট করেন এবং মকর দ্বারের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন।
ডেরেক ও’ব্রায়েন সাংবাদিকদের কাছে বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি না আমরা কোনও সার্কাসে আছি কিনা। আসলে বিজেপির একটাই উদ্দেশ্য—বাংলাকে সব দিক থেকে বঞ্চিত করা। কারণ তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে লড়াই করতে পারছে না।” তিনি আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর মন্ত্রীরা যদি সংসদের নিয়ম ভেঙে বক্তব্য রাখেন, তবে আমাদের দল তৃণমূল কংগ্রেস তাদের টিউশন দিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত।”
ডেরেক ও’ব্রায়েন আরও দাবি করেন, এবারের রেল বাজেটে পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা এবং তামিলনাড়ুর মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যখন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি যেমন মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের বরাদ্দ বেড়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে রেলমন্ত্রী কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। ডেরেক বলেন, “এটা একেবারে লজ্জাজনক পদক্ষেপ।”
মঙ্গলবার রাজ্যসভায় অনুষ্ঠিত এই বিতর্কের পর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি যৌথ সাংবাদিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তৃণমূল নেতারা একযোগে রেলমন্ত্রীর অভিযোগ এবং বিজেপির রাজনৈতিক উদ্দেশ্যগুলোকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করেন। তারা বলছেন, বিজেপি বাংলায় রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
মোটের ওপর, রাজ্যসভায় আজকের এই তর্কবিতর্ক এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য এক নতুন রাজনৈতিক বিষয় তৈরি করেছে, যা আগামী দিনগুলিতে আরও জটিল হতে পারে। বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর, বিশেষ করে রেল প্রকল্প সংক্রান্ত বিতর্ক, যে কোনো সময় আরও তীব্র হতে পারে।