কর্ণাটক সরকার শনিবার ডিজিপি-র্যাঙ্কের অফিসার কে রামচন্দ্র রাও-কে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে। সরকারি আদেশে জানানো হয়েছে, তাঁর জায়গায় অতিরিক্ত মহাপরিচালক (নিয়োগ) কে ভি শরৎ চন্দ্র দায়িত্ব নেবেন। এই সিদ্ধান্ত এসেছে একটি চাঞ্চল্যকর সোনা পাচার মামলার (Gold smuggling case) প্রেক্ষিতে, যেখানে রামচন্দ্র রাও-এর সৎকন্যা এবং কন্নড় অভিনেত্রী রানিয়া রাও ওরফে হর্ষবর্ধিনী রানিয়া জড়িত। গত ৩ মার্চ বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাই থেকে সোনা পাচারের অভিযোগে রানিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
রামচন্দ্র রাও বর্তমানে কর্ণাটক স্টেট পুলিশ হাউজিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর সৎকন্যার গ্রেফতারির পর থেকেই তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। রানিয়া রাও-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দুবাই থেকে ১৪.৮ কিলোগ্রাম সোনা পাচারের চেষ্টা করছিলেন, যার মূল্য প্রায় ১২.৫৬ কোটি টাকা। ডিরেক্টরেট অফ রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই) তাঁকে বিমানবন্দরে আটক করে এবং পরবর্তীতে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ২.০৬ কোটি টাকার সোনার গয়না এবং ২.৬৭ কোটি টাকার নগদ অর্থ উদ্ধার করে। এই ঘটনায় মোট জব্দকৃত সম্পত্তির মূল্য ১৭.২৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা কেম্পেগৌড়া বিমানবন্দরে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় পাচারকাণ্ড বলে দাবি করেছে ডিআরআই।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রানিয়া রাও বিমানবন্দরে প্রোটোকল সুবিধার অপব্যবহার করেছিলেন, যা সাধারণত উচ্চপদস্থ আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে। অভিযোগ উঠেছে, তিনি তাঁর সৎপিতা রামচন্দ্র রাও-এর নাম ব্যবহার করে নিরাপত্তা পরীক্ষা এড়িয়ে গিয়েছিলেন। এই ঘটনার পর কর্ণাটক সরকার অতিরিক্ত মুখ্য সচিব গৌরব গুপ্তার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির কাছে প্রশ্ন, রামচন্দ্র রাও এই পাচার কাণ্ডে কোনও ভূমিকা পালন করেছিলেন কি না, এবং প্রোটোকল সুবিধার অপব্যবহারের পিছনে তাঁর কোনও সংযোগ ছিল কি না। তদন্ত শুরুর পরই রামচন্দ্র রাও-কে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রানিয়া রাও, যিনি ‘মানিক্য’ এবং ‘পটাকি’র মতো কন্নড় ছবিতে অভিনয় করেছেন, গত কয়েক মাসে দুবাইয়ে ৩০ বারের বেশি যাতায়াত করেছেন। ডিআরআই-এর দাবি, তিনি একটি বড় পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর গ্রেফতারির পর তদন্তে আরও একজন ব্যবসায়ী, তরুণ কোন্দুরু রাজুকে আটক করা হয়েছে, যিনি রানিয়ার সঙ্গে এই অপরাধে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। রানিয়া জানিয়েছেন, তিনি ব্যবসার জন্য দুবাই গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর কাছে পাওয়া সোনার বার এবং গোপন করার পদ্ধতি তাঁর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
রামচন্দ্র রাও এই ঘটনায় নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমার মেয়ের কাজের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি চার মাস আগে বিয়ে করেছেন এবং তখন থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। আইন তার পথে চলবে।” তিনি আরও দাবি করেছেন, তাঁর ৩০ বছরের কর্মজীবনে কোনও কলঙ্ক নেই। তবে ২০১৪ সালে মহীশূরে আইজিপি থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে হাওয়ালা কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল, যা তাঁর দাবির বিপরীতে প্রশ্ন তুলছে।
এই ঘটনা রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিজেপি নেতা বি ওয়াই বিজয়েন্দ্র অভিযোগ করেছেন, কংগ্রেসের একজন মন্ত্রী এই পাচারে জড়িত। তবে উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার এটিকে ‘রাজনৈতিক গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। রানিয়ার গ্রেফতারির পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলছে। শুক্রবার অর্থনৈতিক অপরাধের বিশেষ আদালত তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। ডিআরআই জানিয়েছে, তিনি একটি আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন, এবং জামিন দিলে তদন্তে বাধা পড়তে পারে।
কর্ণাটক সরকারের এই পদক্ষেপে স্পষ্ট, তারা এই মামলায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে। রামচন্দ্র রাও-এর ছুটিতে যাওয়া এবং তদন্তের অগ্রগতি এখন সবার নজরে। এই ঘটনা শুধু পুলিশ বিভাগের সুনামের উপরই প্রশ্ন তুলছে না, ভারতীয় বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাও প্রকাশ করছে।