আয়ুষ্মান ভারত স্কিমে জরুরি OPD সেবা অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ পার্লামেন্টারি কমিটির

সম্প্রতি পার্লামেন্টের একটি কমিটি আয়ুষ্মান ভারত পিএমজেএই (PMJAY) স্কিমে জরুরি OPD (আউটপেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট) সেবা অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি ধাপে ধাপে পরিকল্পনার সুপারিশ করেছে। তাদের মতে, এই…

parliamentary-committee-recommends-including-essential-opd-services-in-ayushman-bharat-scheme

short-samachar

সম্প্রতি পার্লামেন্টের একটি কমিটি আয়ুষ্মান ভারত পিএমজেএই (PMJAY) স্কিমে জরুরি OPD (আউটপেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট) সেবা অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি ধাপে ধাপে পরিকল্পনার সুপারিশ করেছে। তাদের মতে, এই সংযোজনটি দেশের স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সাশ্রয়ী এবং সমন্বিত করতে সাহায্য করবে।

   

কমিটি আরও বলেছে যে স্কিমটির মূল ফোকাস এখনও সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি ইনপেশেন্ট কেয়ার বা হাসপাতাল ভর্তি পরিষেবার উপর, কিন্তু OPD সেবা এবং সীমিত পোস্ট-হাসপিটালাইজেশন ওষুধের আচ্ছাদন বর্তমান স্কিমে অনুপস্থিত থাকার কারণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাঁক সৃষ্টি করছে।

এছাড়া, কমিটি জানায় যে, OPD সেবা ও পোস্ট-হাসপিটালাইজেশন চিকিৎসা সেবার পরিধি বৃদ্ধি করে দেশের জনগণের জন্য আরো উন্নত এবং সম্প্রসারিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

জরুরি OPD সেবা ও পোস্ট-হাসপিটালাইজেশন পরিষেবার অন্তর্ভুক্তি:

কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, প্রথম ধাপে, দীর্ঘমেয়াদী রোগ এবং সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট বা জ্বর, এসবের জন্য জরুরি OPD সেবা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এতে যেমন রোগীদের চিকিৎসা প্রাপ্তি সহজ হবে, তেমনি খরচও অনেকটা কমবে।

এছাড়া, রোগীদের হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পরেও তাদের পরবর্তী চিকিৎসার জন্য যেসব ওষুধের প্রয়োজন হয়, সেগুলোর জন্য ১৫ দিনের সীমা শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘতর সময়কাল পর্যন্ত সেবা নিশ্চিত করা হবে, যা বর্তমানে স্কিমে অন্তর্ভুক্ত নেই। এটি আরও একধাপ উন্নতি এনে দেবে এবং রোগীদের উপর আর্থিক চাপ কমাবে।

ডাটা-ভিত্তিক ট্রান্সপারেন্ট মনিটরিং সিস্টেম:

কমিটি আরও সুপারিশ করেছে, জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ (NHA) যাতে একটি সুষ্ঠু, ডাটা-ভিত্তিক এবং স্বচ্ছ মনিটরিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে অস্বাভাবিক লেনদেনের ঘটনা বা হাসপাতালের অপব্যবহার শনাক্ত করা যাবে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমনকি, কোনও ধরনের প্রতারণা শনাক্ত করার জন্য শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে নয়, বরং হাসপাতালে যত সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছে, কিভাবে ওষুধ দেয়া হচ্ছে বা রোগী পর্যবেক্ষণের ফলাফলের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ডিজিটাল টুলস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর ব্যাপক ব্যবহার, ডাটা বিশ্লেষণ এবং প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে এবং স্কিমটির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করবে।

ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ডে কেয়ার সেন্টার:

কমিটি জানিয়েছে যে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ৪ থেকে ৬টি বেডের একটি ডে কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব রয়েছে। এই সেন্টারগুলোতে কেমোথেরাপি ও অন্যান্য চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। এছাড়া, কেন্দ্রের স্বাস্থ্য কর্মী বা নার্সের জন্য স্থানীয় জেলা হাসপাতাল থেকে কর্মী সংগ্রহের বদলে আলাদা কিছু বিশেষজ্ঞের নিয়োগ করা উচিত, কারণ বর্তমানে জেলা হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের বড় ধরনের অভাব রয়েছে।

নারী ও পুরুষদের জন্য NCD স্ক্রীনিং সুপারিশ:

কমিটি আরও যোগ করেছে যে, দেশের নাগরিকদের জন্য নন-কিউমুনিকেবল ডিজিজ (NCD) যেমন ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, মাউথ ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, সার্ভিক্যাল ক্যান্সার ইত্যাদির জন্য স্ক্রীনিং প্রক্রিয়াকে NPNCD (ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব নন-কিউমুনিকেবল ডিজিজ) এর আওতাধীন একটি অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিশেষ করে, ৩০ বছর বা তার ঊর্ধ্বে যাদের বয়স, তাদের জন্য এই স্ক্রীনিং করা প্রয়োজন।

এছাড়া, কমিটি সুপারিশ করেছে যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছিলেন, আগামী তিন বছরে সব জেলা হাসপাতালে ক্যান্সার ডে কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে এবং ২০২৫-২৬ সালে ২০০টি ডে কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা হবে। এই উদ্যোগটি আয়ুষ্মান ভারত স্কিমের সম্প্রসারণে একটি বড় পদক্ষেপ হবে।

এটি একদিকে যেমন সরকারের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সেবা ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করবে, তেমনি জনগণের জন্য আরও সাশ্রয়ী, সহজলভ্য এবং মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে।

এই নতুন সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে স্বাস্থ্যখাতে দেশে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে এবং বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আরও সহজে উচ্চমানের স্বাস্থ্যসেবা পেতে সক্ষম হবে।