দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে (Digha Jagannath Temple) প্রাণপ্রতিষ্ঠা নিয়ে বড় ঘোষণা রাজ্য প্রশাসনের। অক্ষয় তৃতীয়ায় দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের দারোদ্ঘাটন। মহাপ্রভুর প্রাণপ্রতিষ্ঠা তার আগের দিন। মহাপ্রভুর প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান এক বিশেষ দিন হতে চলেছে, যা সারা রাজ্যবাসীর জন্য এক বিশেষ মুহূর্ত। মন্দিরের এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাজ্য এবং ভিনরাজ্যের অসংখ্য মানুষ দিঘায় আসবেন। তবে, এই জমায়েত যেন কোনও বিপত্তি সৃষ্টি না করে, তার জন্য আগাম সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
রাজ্য প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান চলাকালে মন্দির (Digha Jagannath Temple) সংলগ্ন এলাকায় টোটো-সহ সমস্ত যানবাহন নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। প্রশাসনের উদ্দেশ্য, বিশৃঙ্খলা এড়ানো এবং সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন যে, রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে জায়ান্ট স্ক্রিনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে এই অনুষ্ঠান। তিনি রাজ্যবাসীকে আবেদন জানিয়েছেন, ‘জগন্নাথ দেবের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে সকলে ধীরে-ধীরে আসুন। আর প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিন নজর রাখুন জায়ান্ট স্ক্রিনে।’
জগন্নাথ দেবের প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে রাজস্থান থেকে আসা কষ্টিপাথর এবং শ্বেতপাথরের তিনটি মূর্তি ব্যবহার করা হবে। এই মূর্তিগুলি অনেক আগেই তৈরি হয়ে এসেছে। তবে, নিত্যপূজার জন্য যে মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, তা হবে নিমকাঠের। পুরীর দ্বৈয়িতাপতি এই প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন এবং পরবর্তী সময়ে ইসকন মন্দির কর্তৃপক্ষ নিত্যপূজার দেখভাল করবেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জগন্নাথ ধামের জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করেছেন। এই ট্রাস্ট মন্দিরের সব কার্যক্রম এবং পুজো-পদ্ধতি পরিচালনা করবে। মন্দিরে পুরীর রীতি মেনেই পুজো করা হবে। পুজোর সময় ধ্বজা বদলানো এবং নিত্য উপাচারও পুরী মন্দিরের মতোই হবে। মন্দিরের গায়ে ওঠানামার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হবে। মন্দিরের গায়ে ওঠার জায়গা আরও প্রশস্ত করা হবে, যাতে কোনো বিপত্তি না ঘটে।
মন্দিরের ভোগের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেখানে পুরীর জগন্নাথ দেবের ভোগে খাজা জনপ্রিয়, সেখানে দিঘার মন্দিরে স্থানীয় মিষ্টি, পেঁড়া এবং ছানার মুড়কি বিশেষভাবে রাখা হবে। এই ভোগ মন্দিরে বসেই উপভোগ করা যাবে।
পুরাণ অনুযায়ী, দিঘার মন্দিরের সঙ্গে কালীঘাটের মা কালীর মন্দিরের একটি সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্ক অনুযায়ী, দিঘার মন্দিরের ভোগে থাকবে পেঁড়া এবং ছানার মুড়কি। মন্দিরের পাশেই সমুদ্র সৈকতের উপর পুরনো জগন্নাথ মন্দিরটি ছিল। এটি এখন ‘জগন্নাথের মাসির বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত হবে, এবং এটি সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে।
তিন দেবের তিনটি রথও তৈরি হয়েছে দিঘার মন্দিরে। পুরীর মতো, দিঘার তিনটি রথেরও আলাদা নাম থাকবে। মন্দিরের রাস্তা আরও চওড়া করা হয়েছে, যাতে রথগুলি সহজে চলাচল করতে পারে। রথের যাত্রা যেন কোনওভাবে বিঘ্নিত না হয়, তার জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পুরী মন্দিরের স্বর্গদ্বারে যেমন চৈতন্যদেবের মূর্তি রয়েছে, তেমনই দিঘায়ও চৈতন্য ফটক তৈরি হয়েছে। এই ফটকটি মন্দিরে আসা দর্শনার্থীদের জন্য এক বিশেষ আর্কষণ হয়ে উঠবে।
মন্দিরের সব কাজের জন্য প্রশাসন কঠোরভাবে নজর রাখবে এবং সুরক্ষা ব্যবস্থাও যথাযথ হবে। রাজ্যবাসী, ভিনরাজ্য থেকে আসা দর্শনার্থীরা যেন নিরাপদে প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারেন, তার জন্য সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এবারের প্রাণপ্রতিষ্ঠা শুধুমাত্র দিঘার জন্য নয়, পুরো রাজ্যের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। রাজ্যের সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত এই মহান অনুষ্ঠানটি রাজ্যবাসী সারা জীবনের জন্য স্মরণ করবে।