বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস (World Wildlife Day 2025) উপলক্ষে, আজ ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের গির জাতীয় উদ্যানে সাফারিতে যান। প্রধানমন্ত্রীকে দেখা যায় সাফারি পোশাক পরিধান করে গিরের এশীয় সিংহের ছবি তুলতে। হাতে তুলে নেন ক্যামেরা।
এই বিশেষ দিনটিতে, দেশবাসীকে তিনি বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসের (World Wildlife Day 2025) শুভেচ্ছা জানান এবং বলেন, ‘আজ বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসে আমরা আমাদের পৃথিবীর অপূর্ব জীববৈচিত্র্য রক্ষার এবং সংরক্ষণের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করি। প্রতিটি প্রজাতির নিজস্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আসুন আমরা তাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করি যাতে পরবর্তী প্রজন্মও তা উপভোগ করতে পারে। আমরা ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে যে অবদান রেখেছি, তাও গর্বের সাথে গ্রহণ করি।’
গির জাতীয় উদ্যানে বর্তমানে প্রায় ৩০,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ৫৩টি তালুকে বা এলাকায় এশীয় সিংহের বসবাস। গুজরাট সরকার এই মহিমান্বিত প্রাণীটির সংরক্ষণ এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী প্রজাতির রক্ষার জন্য একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে একটি জাতীয় প্রকল্পের আওতায়, জুনাগড় জেলার নাভা পিপলিয়া এলাকায় বন্যপ্রাণী কেন্দ্রের জন্য ২০.২৪ হেক্টর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে।
এছাড়া, একটি হাই-টেক মনিটরিং সেন্টার এবং উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে সাসানে একটি অত্যাধুনিক হাসপাতালও স্থাপন করা হয়েছে যাতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রচেষ্টা আরও জোরালো হতে পারে। গুজরাট সরকারের এই পদক্ষেপগুলির মাধ্যমে এশীয় সিংহের সংরক্ষণ কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হয়েছে।
২০১৪ সালে, গিরের সিংহের সুরক্ষার জন্য গুজরাট সরকার একযোগে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০২৪ সালে ২৩৭ জন বীট গার্ড (১৬২ পুরুষ ও ৭৫ মহিলা) গির অঞ্চলে নিয়োগ করা হয়েছে যারা সুরক্ষিত এলাকার পেট্রোলিং করবেন এবং সিংহের আবাসস্থল রক্ষা করবেন। এই পদক্ষেপগুলি সিংহের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
গির সিংহের সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি ২০০৭ সালে গির বনভূমি পরিদর্শন করেন এবং প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝার জন্য স্থানীয় বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করেন। এরপর, তিনি গির অঞ্চল, সিংহ সংরক্ষণ এবং বন্যপ্রাণী জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য একাধিক রূপান্তরমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
তিনি ‘বৃহদ গির'(Bruhad Gir) ধারণা চালু করেন, যার মাধ্যমে গির জাতীয় উদ্যানের বাইরেও সিংহ সংরক্ষণের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ৩০,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা, যেখানে গির সিংহের বসবাস রয়েছে, সংরক্ষিত করা হয়। বর্ধিত গির প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের কল্যাণ এবং উন্নয়নও নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী মোদী এশীয় সিংহ এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী প্রজাতির রক্ষায় গুজরাট সরকারের উদ্যোগগুলির প্রশংসা করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘ভারত বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমরা আমাদের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।’
এশীয় সিংহ, যা একমাত্র গির জাতীয় উদ্যানে দেখা যায়, এর সংরক্ষণের জন্য গুজরাট সরকার প্রচুর শ্রম ও শক্তি নিয়োগ করেছে। সিংহের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি, তাদের আবাসস্থল এবং অন্যান্য প্রাণী প্রজাতির সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গির জাতীয় উদ্যানে সিংহের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি, বনাঞ্চল এবং গ্রামীণ জনগণের উন্নয়নও লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসে প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ বিশ্বের সামনে একটি বড় বার্তা পাঠিয়েছে।