মুখ্যমন্ত্রীর ভবানীপুরে বিজেপির পাল্টা কর্মসূচি, ভুয়ো ভোটার ইস্যুতে রাজনৈতিক উত্তেজনা

রাজ্যের রাজনীতি এবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভবানীপুর কেন্দ্র নিয়ে। গত বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল কংগ্রেসের মহা সমাবেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্যের…

BJP Starts Surveillance from Chief Minister Mamata Banerjee's Bhabanipur Assembly to Counter TMC's Program of Finding Fake Voters

রাজ্যের রাজনীতি এবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভবানীপুর কেন্দ্র নিয়ে। গত বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল কংগ্রেসের মহা সমাবেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, রাজ্যের ভোটার তালিকায় বিপুল সংখ্যক ভুয়ো ভোটারের নাম যুক্ত করা হচ্ছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সব বিধানসভা কেন্দ্রে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। সেই কমিটি সর্বস্তরের নেতাদের পাঠিয়ে ‘স্ক্রুটিনি’ বা ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে। এরই মধ্যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরেও এই স্ক্রুটিনি কর্মসূচি শুরু করেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

এদিকে, তৃণমূলের এই কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপি। বিজেপির এই কর্মসূচি ভবানীপুর থেকেই শুরু হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, “যদি আপনি ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা অনুভব করেন অথবা আপনার নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, তবে আমাদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করুন।” এই বার্তাটি নিজের মোবাইল নম্বরসহ জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ খটিক সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের পাঠিয়েছেন।

kolkata24x7-sports-News

   

ইন্দ্রজিৎ খটিক, যিনি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কালীঘাটের ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, তিনি জানান, “আমরা শুধু ভবানীপুরেই নয়, দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার অন্তর্গত রাসবিহারী, কসবা, বেহালা পূর্ব ও বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রেও এই কর্মসূচি শুরু করেছি। বালিগঞ্জ এবং কলকাতা বন্দর বিধানসভা কেন্দ্রেও এই কাজ ধীরগতিতে শুরু হয়েছে। তবে, ভবানীপুরের দিকে আমাদের বিশেষ নজর রয়েছে।”

ইন্দ্রজিৎ আরও বলেন, “গত লোকসভা নির্বাচনে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ৫টি ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে ছিল। মাত্র ৩টি ওয়ার্ডে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল। এই পরিসংখ্যান দেখে, ফিরহাদ হাকিম বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের নিয়ে স্ক্রুটিনি করার কাজ শুরু করেছেন, যাতে বিরোধী ভোটারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায়। তাই আমরাও আমাদের পাল্টা কর্মসূচি শুরু করেছি।”

গত লোকসভা নির্বাচনে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ৬৩, ৭০, ৭১, ৭২, এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। অন্যদিকে, ৭৩, ৭৭, এবং ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল। রাজ্যজুড়ে মোট ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে কলকাতা পুরসভায় বিজেপি প্রায় ৪২টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল।

এমন পরিস্থিতিতে, তৃণমূলের অভিযোগ যে রাজ্যে ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটারের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে, তা এখন অনেকটাই রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মমতার নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুরে বিজেপির শক্তিশালী অবস্থানও এখন আর কেউ এড়িয়ে যেতে পারছে না। বিজেপি তাদের কর্মসূচি নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলছে এবং এটি রাজ্যের রাজনৈতিক তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের কর্মসূচি এবং পাল্টা কর্মসূচির মাধ্যমে যে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা ভবিষ্যতে রাজ্যের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বড় ভূমিকা রাখবে। ভোটার তালিকা এবং ভুয়ো ভোটার নিয়ে যত আলোচনা বাড়বে, ততই ভোটের ওপর এর প্রভাব আরও গভীর হতে পারে। তৃণমূল এবং বিজেপি দু’পক্ষই এই ইস্যুকে নিজেদের রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যা আগামী দিনে রাজ্যের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নতুন মোড় আনতে পারে।