ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল শিলিগুড়িতে (Siliguri)। বেআইনিভাবে জমি দখলের মামলার কারণে একটি ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট প্রকাশ্যে আসে। পরে জানা যায়, এই ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেটের সংখ্যা কমপক্ষে ১০০টি। তবে, এসবের সঠিক রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
বাগডোগরার মাধব চন্দ্র মণ্ডলের মৃত্যু নিয়ে ২০১৩ সালে একটি মামলা শুরু হয়। মামলা করেন রেখা পাল নামে এক মহিলা। ওই মামলায় জমা পড়ে একটি ডেথ সার্টিফিকেট, যার মধ্যে উল্লেখ করা হয় যে মাধব চন্দ্র মণ্ডল ১৯৯৮ সালে মারা গিয়েছেন কিন্তু বাস্তবে তিনি ২০০০ সালে মারা যান। এরপর, এলাকাবাসী ও স্থানীয় সমাজসেবী গৌতম কির্তনিয়া বিষয়টি তদন্ত শুরু করেন। তারা যখন স্বাস্থ্য দফতর থেকে তথ্য চেয়ে জানতে চান, তখন তাদের জানানো হয়, ওই ডেথ সার্টিফিকেটের নম্বরের কোনো রেকর্ড নেই।
গৌতম কির্তনিয়া জানান, ‘যখন বুঝলাম সার্টিফিকেটটি ভুয়ো, তখন আরও সন্দেহ বাড়ে। ওই সার্টিফিকেট যেই বই থেকে ইস্যু হয়েছিল, সেই বইয়ের বাকি সার্টিফিকেটগুলির তথ্যও পাওয়া যায়নি।’ তিনি আরও জানান, ‘এটি জমি দখলের কাজে ব্যবহার হতে পারে। এমনকি পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড বা নাগরিকত্ব প্রমাণীকরণের জন্যও এটি ব্যবহার হতে পারে।’
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। ২০০০ সালে মাধব চন্দ্র মণ্ডলের মৃত্যু নিয়ে যে সার্টিফিকেটটি ইস্যু হয়েছিল, সেই সময় গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের ক্ষমতা ছিল। উপপ্রধান ছিলেন প্রবীর রায়। তার সই রয়েছে ওই ডেথ সার্টিফিকেটে। তবে, প্রবীর রায় এখন তৃণমূলে আছেন। তিনি বলেন, ‘যদি সার্টিফিকেটে আমার সই থাকে, তবে আমি তাতে সই করেছিলাম। তবে কেন স্বাস্থ্য দফতরে কোনো রেকর্ড নেই, তা আমি জানি না।’
এদিকে, স্থানীয় তৃণমূল নেতা নিরেন রায় বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা খুবই গুরুতর। যারা এসব কাজ করেছে, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া উচিত।’ অন্যদিকে, বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘এটি শুধু জমি দখলে ব্যবহৃত নয়, অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যবহৃত হতে পারে।’
এটা স্পষ্ট যে, এই ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেটের ঘটনা একটি বৃহত্তর অজানা চক্রান্তের অংশ হতে পারে। রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনাকে নিয়ে আলোচনা চলছে এবং অনেকেই মনে করছেন যে, এটা কোনও বড় ধরনের দুর্নীতির ঘটনা হতে পারে।
গৌতম কির্তনিয়া সেক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন, যাতে এই সমস্ত ভুয়ো ডেথ সার্টিফিকেট বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায় তাঁদের বেঞ্চে ২০ ফেব্রুয়ারি এই সার্টিফিকেট বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে, জেলা প্রশাসককে এই সার্টিফিকেট বাতিলের জন্য নোটিশ জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাগডোগরা (লোয়ার) গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘এটি একটি পুরানো ঘটনা। আমরা জানতে পেরেছি যে, ওই বইয়ের অন্যান্য সার্টিফিকেটও এখন আমাদের কাছে নেই।’
এই ঘটনার তদন্ত চলছে এবং বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে, তবে এটা রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশে একটি বড় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন ঘটনা যে শুধু প্রশাসনিক দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়, তা নয়, এটি একটি গভীর চক্রান্তেরও অংশ হতে পারে।