কলকাতায় ভূমিকম্পের সংখ্যা আগামী দিনে আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (GSI) ডিরেক্টর অসিত সাহা। সম্প্রতি শিলিগুড়ি ও উত্তরবঙ্গসহ প্রতিবেশী রাজ্য বিহারে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পের পর কলকাতা শহরেও একই ধরনের ভূকম্পনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভূমিকম্পের সম্ভাবনা কমানোর কোন উপায় নেই, বরং সময়ের সাথে সাথে তা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, গভীর রাত ২টা ৩৬ মিনিটে নেপাল থেকে উত্তরের কিছু অংশে এবং শিলিগুড়ি সহ গোটা উত্তরবঙ্গ, বিহারে ভূমিকম্পের প্রভাব অনুভূত হয়। এর আগেই ২০ ফেব্রুয়ারি, কলকাতায় একই ধরনের ভূমিকম্প হয়। এদিন সকালে শহরজুড়ে কেঁপে ওঠে কলকাতা। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি (NCS) জানায়, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.১ এবং বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯১ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পের উৎসস্থল। একই দিনে, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, বাংলাদেশ ও ওডিশাতেও ভূকম্পনের অনুভূতি পাওয়া গেছে। এই ভূমিকম্পের বারবার ঘটনার পেছনে যে কারণ আছে, তা সম্প্রতি বিশ্লেষণ করেছেন GSI ডিরেক্টর অসিত সাহা। তাঁর মতে, কলকাতা শহর ভূতত্ত্বগতভাবে বেশ কিছু আলাদা আলাদা প্লেট বা ব্লকের উপর অবস্থিত, যেখানে প্রতিনিয়ত প্লেটগুলির মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। বিশেষজ্ঞরা এটিকে “কনভারজেন্স” এবং “ডাইভারজেন্স” বলছেন। কনভারজেন্সের অর্থ হল যখন দুটি প্লেট একে অপরের দিকে চলে আসে এবং ডাইভারজেন্স মানে দুটি প্লেট একে অপর থেকে দূরে সরে যায়। কলকাতার ভূগর্ভে এই দুটো ঘটনার প্রভাব রয়েছে।
অসিত সাহা আরও বলেন, কলকাতা মূলত ইন্ডিয়ান প্লেটের উপর অবস্থিত, যেটি প্রতি বছর ৫ সেন্টিমিটার করে সরে যাচ্ছে টিবেটান প্লেটের দিকে। এই চলমান ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার কারণে কলকাতা সিজমিক জোনে পড়ে এবং ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের ঘনত্ব বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেন কলকাতায় বারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে GSI ডিরেক্টর অসিত সাহা জানান, কলকাতার তলদেশে থাকা প্লেটগুলির মধ্যে সংঘর্ষ চলতে থাকায় এবং টিবেটান প্লেটের দিকে সরে যাওয়ার কারণে এ ধরনের ভূমিকম্প বারবার হতে থাকে।
তবে এমন ভূমিকম্পের প্রভাব শুধুমাত্র কলকাতা বা উত্তরবঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়, বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকার বিভিন্ন স্থানেও কম্পন অনুভূত হচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসেও একই ধরনের ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছিল। এখন সবার মনে প্রশ্ন, কলকাতায় কি আরও বড় ভূমিকম্প আসবে? এর সঠিক উত্তর হয়তো এখনই বলা সম্ভব নয়, তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে এই ভূমিকম্পের পরিস্থিতি আরও বাড়বে, এবং মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে।
এখন কলকাতা এবং আশপাশের অঞ্চলে ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নিতে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু সঠিকভাবে এই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য আরও শক্তিশালী ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তাই রাজ্যবাসীকে সচেতনতা বজায় রেখে চলার পরামর্শ দিয়েছেন জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার বিশেষজ্ঞরা।