যোগী আদিত্যনাথের (Yogi Adityanath) নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশ সরকার মহাশিবরাত্রি (Maha Shivratri) উপলক্ষে চলমান মহাকুম্ভের (Mahakumbh 2025) শেষ বৃহত্তম স্নানের জন্য প্রস্তুতি জোরদার করেছে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ স্নান অনুষ্ঠিত হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্য সচিব মনোজ কুমার সিংহ এবং পুলিশ মহাপরিচালক (ডিজিপি) প্রশান্ত কুমার মহাকুম্ভ নগরীতে গিয়ে প্রস্তুতিগুলির মূল্যায়ন করেছেন এবং কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, ডিজিপি প্রশান্ত কুমার সাংবাদিকদের কাছে বলেন, “আমরা স্নান, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, ভিড় ব্যবস্থাপনা এবং ভক্তদের সুষ্ঠু অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছি, বিশেষত শেষ স্নান এবং আসন্ন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল, যাতে ভক্তদের কোন ধরনের অস্বস্তির সম্মুখীন না হতে হয়।”
উত্তরপ্রদেশ সরকার মহাকুম্ভের পরিবেশ যাতে অশান্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে সামাজিক মাধ্যমের উপরও নজরদারি চালাচ্ছে। ডিজিপি আরও জানান যে, কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ৫০টিরও বেশি মামলা (এফআইআর) দায়ের করেছে, যাদের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। তিনি এই ধরনের অসামাজিক উপাদানদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
মুখ্য সচিব মনোজ কুমার সিংহ এবং ডিজিপি প্রশান্ত কুমার একটি নৌকায় করে সঙ্গম ঘাটের পরিদর্শন করেন, যেখানে তাঁরা পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেন এবং আরও নির্দেশনা প্রদান করেন।
মুখ্য সচিব বলেন, “মহাকুম্ভে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৯ কোটি ভক্ত অংশগ্রহণ করেছেন, যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক সমাবেশ। এটি গঙ্গা, যমুনা, এবং পৌরাণিক সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, মহাকুম্ভের প্রথম পর্ব ১৩ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল, এবং এটি এখন শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। প্রতিদিন এক কোটি মানুষ এই পুণ্য স্নান করতে আসছেন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সনাতন ধর্মের আধ্যাত্মিক গুরু এবং সাধুরাও আছেন, যারা সঙ্গমে স্নান করতে আসছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে একত্রিত হয়ে স্নান করতে এসেছেন।
এই মহাকুম্ভের আয়োজনকে আন্তর্জাতিকভাবে স্মরণীয় করে তুলতে, বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের গভর্নররা, বহু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, ভুটানের রাজা, বিদেশী কূটনীতিক, শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি এবং প্রখ্যাত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বরা ছিলেন। সকলেই সঙ্গমে স্নান করেছেন।
এছাড়াও, উত্তরপ্রদেশ সরকার মহাকুম্ভের সামগ্রিক নিরাপত্তা এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। প্রশাসন ইতিমধ্যে স্থানীয় জনসংখ্যার জন্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, ঘাট এবং আশপাশের এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সমস্ত ঘাটে পর্যাপ্ত জল, স্যানিটেশন এবং শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে কোনো ধরনের অস্বস্তি বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি না হয়।
মহাকুম্ভের প্রস্তুতিতে বিদ্যুৎ, পানির সরবরাহ এবং সড়ক অবকাঠামোর ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন মহাশিবরাত্রি স্নানের দিন সমস্ত রাস্তা এবং সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও জোরদার করবে।
এই মহাকুম্ভে হাজার হাজার সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং পর্যটকরা একত্রিত হয়েছেন। এর ফলে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অনেক সুবিধা পাচ্ছেন। পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি মহাকুম্ভ বাণিজ্যিক দিক থেকেও একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। জেলার ব্যবসায়ী এবং হোটেল মালিকরা তাদের ব্যবসায়িক উপকারিতা পাচ্ছেন, তবে প্রশাসন তাদেরকে গ্রামীণ ও শহুরে অঞ্চলে বিনামূল্যে পরিষেবা প্রদান করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে, যাতে সাধারণ জনগণ উপকৃত হতে পারে।
এছাড়া, কিছু গণমাধ্যম সূত্র থেকে জানা গেছে যে, মহাকুম্ভের সফল আয়োজন এবং সুষ্ঠু পরিচালনা নিয়ে চমৎকার মন্তব্য করা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যটক এবং বিদেশী কূটনীতিকরা উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রচেষ্টাকে সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এমনকি বিভিন্ন দেশ থেকেও দর্শনার্থীরা মহাকুম্ভে অংশ নিতে এসেছেন এবং তারা এটিকে একটি বিশ্বমানের ধর্মীয় উৎসব হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে এই শেষ স্নানের দিনে সবার উদ্দেশ্যে প্রশাসনের তরফ থেকে একটি সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন চায় যে, সমস্ত ভক্তরা নিরাপদে এবং শান্তিপূর্ণভাবে স্নান সম্পন্ন করেন এবং মন্দির এবং আশেপাশে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা যেন না সৃষ্টি হয়।
এই মহাকুম্ভ সারা পৃথিবী থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষদের একত্রিত করার এক বিরল সুযোগ প্রদান করেছে এবং এই উৎসবের অংশ হিসেবে, উত্তর প্রদেেশ সরকার এক নতুন ধর্মীয় ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে যা আগামী বছরগুলিতে আরও বড় আকারে পালিত হবে।
মহাশিবরাত্রি এবং মহাকুম্ভের এই মেলবন্ধন ধর্মীয় উৎসবের মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, যা আগামীকাল নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে।