‘তৃণমূল খাওয়ার জায়গা নয়’! বিধায়কের উস্কানিমূলক মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক

হুগলি জেলার ব্যান্ডেল এলাকায় অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পের আওতায় শুরু হয়েছে এক নতুন পরিবর্তন। ব্যান্ডেল স্টেশনটি আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য বেশ কিছু পুরানো ও পরিত্যক্ত…

Asit Majumdar Angrily Orders Locals to Attack Rail Employees if They Attempt Eviction

হুগলি জেলার ব্যান্ডেল এলাকায় অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্পের আওতায় শুরু হয়েছে এক নতুন পরিবর্তন। ব্যান্ডেল স্টেশনটি আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য বেশ কিছু পুরানো ও পরিত্যক্ত জায়গা রেলের অধীনে আনা হয়েছে। কিন্তু এই সম্প্রসারণের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে সেখানকার কিছু স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্যে। বেশ কিছু বছর ধরে ওই অঞ্চলের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারগুলো দখল করে বসবাস করছেন বহু মানুষ, যারা মূলত দিনমজুর ও পরিযায়ী শ্রমিক। রেলের নতুন উদ্যোগে তাদের উচ্ছেদের হুমকি দেখা দিয়েছে, যা নিয়ে এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে যখন আন্দোলন শুরু হয়, তখন এলাকাতে উপস্থিত হন শাসক দলের এক বিধায়ক। তার বক্তব্য, যারা ওই জায়গাগুলিতে অবৈধভাবে বসবাস করছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিধায়ক বলেন, ‘‘মারছ না কেন? আপকে ঘর মে বঁটি নেহি হ্যয়, কাটারি নেহি হ্যয়? ওসব লেকে মারো, উসকো…’’ তার এই মন্তব্যে চমকে যান অনেকেই। তিনি সাধারণ মানুষকে উস্কানি দিয়ে বলেন, ‘‘তোমরা যদি ঘরে বঁটি বা কাটারি রাখো, তাহলে সেই লোকজনকে বের করে দাও।’’ এমন উস্কানিমূলক মন্তব্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

   

এখন প্রশ্ন উঠছে, বিধায়কের এই বক্তব্যে আসলে কোন উদ্দেশ্য ছিল? কেন তিনি সাধারণ জনগণকে হিংসার কথা বললেন? তার বক্তব্যের দিকে তাকালে পরিষ্কার যে, তিনি রেলের কর্মীদের উদ্দেশ্য করে এই কথা বলছেন, যারা ওই জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ পেয়েছেন। তবে, তাদের কি এমন আচরণের সম্মুখীন হতে হবে? জনসমক্ষে এরকম ভাষা ব্যবহার করে কি আদতে সমস্যার সমাধান সম্ভব?

ব্যান্ডেল স্টেশনের সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত জমিতে কাজ শুরু করতে চাচ্ছে, কিন্তু সেখানে থাকা অনেক লোক ওই জায়গাগুলি ছাড়তে রাজি নন। তাদের কাছে এটি শুধুই একটি আশ্রয়স্থল নয়, বরং জীবিকা নির্বাহের জায়গা। অনেক দিন ধরে ওই এলাকাগুলোতে বসবাস করা শ্রমিকরা এখন সেখানে নিজেদের ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন। তবে, তাদের জায়গা খালি করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। একদিকে উন্নয়ন, অন্যদিকে সেখানকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতা। এই দোটানার মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসা সহজ নয়।

এমন পরিস্থিতিতে, বিধায়কের উস্কানিমূলক মন্তব্য আরও সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তার ভাষা যে কোনওভাবেই উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলতে পারে, তা নিশ্চিত। জনগণকে উসকানি দেওয়া এবং হিংসাত্মক মনোভাব তৈরি করার বদলে, বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা উচিত ছিল।

রেলের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, এই জমি ও ভবনগুলির অধিকাংশই পরিত্যক্ত এবং অবৈধভাবে দখল করা। সেগুলি এখন উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হবে। তবে, সেখানে বসবাসকারী মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি শুধু উচ্ছেদ করলেই সমস্যা সমাধান না হয়, তাহলে সরকারের উচিত হবে তাদের জন্য বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা করা।

এই ঘটনায়, খোদ শাসক দলের বিধায়কের এমন বক্তব্যে সমালোচনা অবধি শেষ হয়নি, বরং পুরো এলাকায় উত্তেজনা এবং অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের উচিত হবে, উচ্ছেদের সময় মানুষের প্রতি সহানুভূতির সঙ্গে আচরণ করা এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, যেন উন্নয়ন আর মানবিকতার মধ্যে সমন্বয় রক্ষা হয়।