ভারত-আমেরিকা যৌথভাবে তৈরি করবে সামুদ্রিক ড্রোন, গ্লাইডার এবং নজরদারি ব্যবস্থা

সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করতে ভারত ও আমেরিকা যৌথভাবে আধুনিক সামুদ্রিক ড্রোন, গ্লাইডার এবং নজরদারি ব্যবস্থা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগের আওতায় এমন স্বায়ত্তশাসিত অস্ত্র…

wave glider

সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদার করতে ভারত ও আমেরিকা যৌথভাবে আধুনিক সামুদ্রিক ড্রোন, গ্লাইডার এবং নজরদারি ব্যবস্থা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগের আওতায় এমন স্বায়ত্তশাসিত অস্ত্র তৈরি করা হবে, যা সমুদ্রে দীর্ঘ সময় কাজ করতে পারবে এবং জাহাজের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন নেতৃত্বের মধ্যে বৈঠকের সময় এই চুক্তির ঘোষণা করা হয়।

উদ্দেশ্য প্রতিরক্ষা উৎপাদন বাড়ানো
এই প্রকল্পটি ‘অটোনোমাস সিস্টেমস ইন্ডাস্ট্রি অ্যালায়েন্স (ASIA)’-এর অধীনে শুরু হয়েছে, যার উদ্দেশ্য হল ভারত ও আমেরিকার কোম্পানিগুলিকে একত্রিত করে প্রতিরক্ষা উৎপাদনকে উন্নীত করা। এই নতুন সিস্টেমগুলি ভারত এবং আমেরিকার সেনাবাহিনী ব্যবহার করবে এবং সেগুলি রফতানি করাও সম্ভব হবে।

   

এই উদ্যোগ ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করবে, বিশেষ করে ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (বিইএল), ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড (বিডিএল) এবং সাগর ডিফেন্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো কোম্পানিগুলিকে। এই নতুন উদ্যোগের অধীনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সহ-তৈরি করা হবে।

এই প্রধান সিস্টেম নির্মাণ করা হবে
ওয়েভ গ্লাইডার আনম্যান্ড সারফেস ভেহিকল (Wave Glider Unmanned Surface Vehicle) – এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত নজরদারি ড্রোন যা জ্বালানি ছাড়াই এক বছর সমুদ্রে থাকতে পারে। এটি জাহাজ এবং সাবমেরিনের কার্যকলাপ রেকর্ড করার ক্ষমতা রাখে।

সি পিকেট অটোনোমাস সার্ভেলেন্স সিস্টেম (Sea Picket Autonomous Surveillance System) – এটি একটি মুরিং (স্থায়ীভাবে মোতায়েন) নজরদারি ব্যবস্থা, যা ক্রমাগত পৃষ্ঠ এবং জলের নিচের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে। এটি ছয় বছর কোনো বাধা ছাড়াই কাজ করতে পারে।

লো ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাক্টিভ টাওয়া সোনার (Low Frequency Active Towed Sonar) – ভারতীয় যুদ্ধজাহাজে এই সোনার সিস্টেম বসানো হবে, যাতে জলের নিচে উপস্থিত হুমকি সহজেই শনাক্ত করা যায়। এটি যৌথভাবে তৈরি করবে আমেরিকার L3 হ্যারিস এবং ভারতের ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (BEL)।

মাল্টি-স্ট্যাটিক অ্যাক্টিভ সোনোবয়স (Multi-Static Active Sonobuoys) – এটি একটি জলের নিচে নজরদারি ব্যবস্থা, যা যৌথভাবে আমেরিকার আল্ট্রা-মেরিটাইম এবং ভারতের বিডিএল দ্বারা তৈরি করা হবে।

ট্রাইটন অটোনোমাস আন্ডারওয়াটার এবং সারফেস ভেহিকল (Triton Autonomous Underwater and Surface Vehicle) – এটি একটি বিশেষ ধরনের ড্রোন, যা জলের উপরিভাগ এবং জলের নিচে নজরদারি করতে পারে। এটি আমেরিকার ওশেনিয়ারিং কোম্পানি দ্বারা নির্মিত। এটি এখন ভারতেও সহ-প্রযোজনা করা হবে।

দুই দেশের মধ্যে সহজ প্রযুক্তিগত বিনিময়
এই নতুন উদ্যোগ ভারত ও আমেরিকার মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে আরও জোরদার করবে। আমেরিকা ইতিমধ্যে ভারতকে কৌশলগত বাণিজ্য অনুমোদন-১ (STA-1) মর্যাদা দিয়েছে। এটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিনিময়কে সহজ করেছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা বাড়বে
এছাড়াও এই প্রকল্প ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা বাড়াবে এবং ভারতের সামুদ্রিক সক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে। এতে শুধু ভারতীয় নৌবাহিনীই লাভবান হবে না, বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোকে আধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিও সরবরাহ করবে। শুধু তাই নয়, এই যৌথ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগকে শক্তিশালী করবে এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা উৎপাদনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।