সরকারি বিধি ভেঙে বাসভবন সংস্কার? কেজরির ‘শিশমহল’ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ CVC-র

নয়াদিল্লি: দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকারি বাসস্থানে বিলাসবহুল সংস্কার এবং অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে এ বার তদন্ত করে দেখবে কেন্দ্র। এই সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে…

নয়াদিল্লি: দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকারি বাসস্থানে বিলাসবহুল সংস্কার এবং অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে এ বার তদন্ত করে দেখবে কেন্দ্র। এই সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতরকে (CVC)। দিল্লির ৬, ফ্ল্যাগশিপ রোডের ওই বাংলোতে ২০১৫ সাল থেকে থাকতেন কেজরিওয়াল। মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে তিনি বাংলোটি খালি করে দেন। বিজেপির দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, কেজরি জমানায় মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন সংস্কারে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন খোদ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। 

কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর বা সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন (CVC) এই মামলায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। মূল অভিযোগ, কেজরিওয়াল কোটি কোটি টাকার অপব্যবহার করে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের বিলাসবহুল সংস্কার করেছিলেন৷ CVC নির্দেশ দিয়েছে যে, সেন্ট্রাল পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (CPWD) তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগের যথার্থতা যাচাই করবে। অভিযোগ, কেজরিওয়ালের প্রাক্তন সরকারি বাসভবনে ৪০,০০০ ৮ একর এলাকা জুড়ে নির্মিত ‘শিশ মহল’ নামে পরিচিত বিলাসবহুল ভবনটি নির্মাণ বিধি এবং ফ্লোর এরিয়া রেশিও (FAR) লঙ্ঘন করে তৈরি করা হয়েছে।

   

এই অভিযোগটি প্রথম তুলেছিলেন বিজেপি নেতা বিজেন্দর গুপ্ত৷ তাঁর অভিযোগ, কেজরিওয়ালের প্রাক্তন বাসস্থানে বেআইনিভাবে জমি একত্রিত করে এই বিলাসবহুল নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে। তাঁর দাবি, জমি ব্যবহার এবং নির্মাণ নকশার অনুমোদন ছাড়াই এই কাজ শুরু হয়, যা সরকারি নিয়মের পরিপন্থী।

এরপর ১৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে CVC এই বিষয়টির তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দেয় এবং নভেম্বর ২০২৪-এ CPWD-কে তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করে। CPWD পরে একটি রিপোর্ট জমা দেয়, যার ভিত্তিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ CVC পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছে।

বিলাসবহুল সংস্কারের অভিযোগ

বিজেন্দর গুপ্ত আরও অভিযোগ করেন, কেজরিওয়াল তাঁর প্রাক্তন বাসস্থানে বিলাসবহুল সংস্কারের জন্য বিপুল পরিমাণ সরকারি টাকা খরচ করেছেন৷ জনগণের টাকায় অযথা বিলাসিতা করেছন তিনি। তাঁর মতে, এই সংস্কারগুলি অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় খরচের প্রমাণ, যা সরকারের আর্থিক শৃঙ্খল ভঙ্গ করেছে।

CVC এই অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে CPWD-কে আরও বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। CPWD-এর প্রধান ভিজিল্যান্স অফিসার (CVO) ডিসেম্বর ২০২৪-এ একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে CVC বর্তমান তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

সিএমও অফিসের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল নিয়ে বিতর্ক

এদিকে, দিল্লি সরকারের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল “@CMODelhi” নাম পরিবর্তন নিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। দিল্লি সরকার সম্প্রতি এক্স হ্যান্ডেলটি “KejriwalAtWork” নামে পরিবর্তন করার জন্য আবেদন জানায়। বিজেপি এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে৷ আপ নেতৃত্বের নির্দেশে এটি ব্যক্তিগত প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়।

বিজেপির অভিযোগ, সিএমও অফিসের এই হ্যান্ডেলটি সরকারি কাজের জন্য বরাদ্দ থাকার কথা, তবে এটি এখন কেজরিওয়ালের ব্যক্তিগত প্রচারের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা সংবিধান এবং সরকারি নীতির পরিপন্থী। দিল্লি বিজেপির সভাপতি বিরেন্দ্র সাচদেবা এই পদক্ষেপকে বেআইনি এবং অসাংবিধানিক বলে দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে দিল্লি সরকার “X” প্ল্যাটফর্মে একটি চিঠি পাঠিয়ে “CMODelhi” হ্যান্ডেলটি পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে, যাতে এটি শুধুমাত্র সরকারি ব্যবহারের জন্য নিশ্চিত করা যায়। বিজেপি এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছে।

রাজধানীতে ভোট প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘‘আমিও তো শিশমহল তৈরি করতে পারতাম। কিন্তু, আমি দেশের গরিব মানুষদের জন্য চার কোটিরও বেশি বাড়ি বানিয়েছি।’’

যদিও বাসভবন সংস্কার দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন কেজরি। তাঁর পাল্টা দাবি, রাজনৈতিক কারণে তাঁর বাসভবনকে ইস্যু করে বিতর্ক উস্কে দেওয়া হয়েছে৷ কেজরির বক্তব্য ছিল, বিজেপি নিজেদের অপারগতাকে ঢাকতে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে নিশানা করে মানুষের নজর ঘোরাতে চাইছে৷