ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ২০২৪-২৫ মরসুমে (ISL 2024-25 Session) মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan SG) শিল্ড ঘরে তুলছে বলে আশাবাদী সমর্থকরা। তবে অপেক্ষা এখনও কয়েক ম্যাচের। এরই মধ্যে শনিবার কেরালা ব্লাস্টার্সের (Kerala Blasters FC) বিপক্ষে মাঠে নামবে বাগান ব্রিগেড। এই ম্যাচের কেরলের কাঁটা হয়ে উঠতে পারেন মালাপ্পুরমের গলি থেকে কলকাতার রাজপথে পৌঁছানোর গল্পের নায়ক আশিক কুরুনিয়ান (Ashique Kuruniyan)। ফুটবল জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছেন তিনি। । কেরলের ছেলে হয়েও দেশের অন্যতম বড় ফুটবল ক্লাব মোহনবাগানে খেলা, তা কোনো সহজ পথ ছিল না। তবে আশিকের জীবন শুধু পারফরম্যান্স আর জয়-পরাজয়ের গল্প নয়, আসলে হার না মানা আত্মবিশ্বাসের এক প্রতীক।
২০ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল জীবনে পা রেখেছিলেন আশিক। শুরু করেছিলেন এফসি পুনে সিটিতে। এরপর বেঙ্গালুরু এফসি, ভিয়ারিয়েল সি-সহ আরও অনেক ক্লাবে খেলার সুযোগ পান। কিন্তু কেরলের ফুটবলপ্রেমীদের কাছে আশিক কুরুনিয়ান তখনও অপরিচিত ছিলেন। শুধু একজন ভালো ফুটবলার হিসেবে নয়, ব্যক্তিগত জীবনের চ্যালেঞ্জও ছিল তাঁর কাছে। ফর্মে থাকা, সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণ করা এবং ক্যারিয়ার গড়া সবকিছুর মাঝে তাঁর জীবন চলছিল এক কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে।
আশিকের সবচেয়ে বড় শক্তি হল তার সংকল্প। কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে কখনোই তিনি খেলেননি। বরং প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের হয়ে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিপক্ষে মাঠে নেমেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল তার ভিয়ারিয়েল সি-তে খেলাটা, যেখানে বিদেশে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে তিনি নিজেকে একেবারে পাল্টে ফেলেন।
এফসি পুনে সিটি থেকে বেঙ্গালুরুতে যোগ দেওয়া, তারপর মোহনবাগানে আসা তার ফুটবল ক্যারিয়ারের নানা মাইলফলক। কিন্তু, তার ফুটবল জীবনে সবচেয়ে বড় দুঃসময় আসে ২০২৩ সালে, যখন কিংস কাপে ইরাকের বিরুদ্ধে খেলার সময় এএসএল চোট পেয়ে পুরো মরসুমের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান। তার কাছে এটি ছিল এক বড় ধাক্কা, তবে আশিক হাল ছাড়েননি। দুঃসময় কাটিয়ে মাঠে ফিরে আসেন তিনি। যদিও মাঠে ফিরতে তার এক বছর লেগে যায়, তবুও ফিরে এসে এই চোট কাটিয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন।
এবার আশিক নতুনভাবে মোহনবাগানে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি শুধু উইঙ্গার হিসেবেই নয়, লেফট ব্যাকের দায়িত্বও পালন করছেন। এই নতুন ভূমিকা গ্রহণ তাকে আরও শক্তিশালী করেছে। তিনি নিজেও বলেন, “লেফট উইঙ্গার ও লেফট ব্যাক পজিশনে খুব বেশি তফাৎ নেই। উইং ব্যাককে যেমন রক্ষণে থাকতে হয়, তেমনি আক্রমণে ওঠাও জরুরি। এই দায়িত্বকে আমি ভালোভাবে গ্রহণ করেছি।”
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টে আশিকের অভিষেক হয়েছে একজন আদর্শ ফুটবলারের মতো। ২০১৯ সালে তিনি মোহনবাগানে যোগ দেওয়ার পর, তার পারফরম্যান্সও ঈর্ষণীয়। প্রতি ম্যাচে তিনি এক নতুন চরিত্রে নিজেকে তুলে ধরেন। আশিকের খেলা তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং শক্তি, এটি প্রমাণ করে যে তিনি একজন লিডারও হতে পারেন।
আশিকের ফুটবল জীবনে সমর্থকদের ভালোবাসাও কম নয়। কলকাতার মোহনবাগান ক্লাবের জন্য যেটি সবচে বড় উপহার, তা হলো তার একাগ্রতা। আশিক বলেন, “মোহনবাগান আমাকে দুঃসময়ে অনেক সাহায্য করেছে, তাই এখানেই থাকতে চাই। কলকাতায় ফুটবলের জন্য যে আবেগ রয়েছে, তা সারা দেশে আর কোথাও দেখতে পাইনি। এখানে খেলাটাই সবার জন্য স্বপ্ন।”
এবার যখন আশিক কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন, তখন সেখানে বিশেষ কিছু থাকবে না বলেও তিনি জানান। আশিক বলেন, “আমি প্রতিটি ম্যাচেই সমান মনোভাব নিয়ে মাঠে নামি। কেরলের মাঠে খেলা তো বিশেষ কিছু নয়। তবে নিজ রাজ্যে খেলা, সেটি অবশ্যই বিশেষ।”