২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, পুলওয়ামার লেথপোরায় ঘটে যাওয়া সেই ভয়াবহ নাশকতার পর আজ ছ’বছর পার হয়ে গেছে। দেশের ৪০টি শহিদ পরিবারের জন্য, এই দিনটি শুধু এক বছরপূর্তির সংখ্যা নয়, বরং এক অমিমাংসিত শোকের প্রকাশ। ছেলেরা, ভাইরা, স্বামীরা, পিতারা—যারা দেশকে রক্ষা করতে গিয়েছিলেন, তারা আর ফিরেনি। কিন্তু এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ছেলেরা যে প্রাণ দিলেন, তার কি কিছু ফল পাওয়া গেছে? কিছু পরিবর্তন এসেছে কি?
এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারিতেও, পুলওয়ামার শহিদদের স্মরণে দেশের নানা জায়গায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। হাওড়ার বাবলু সাঁতরা, নদিয়ার সুদীপ বিশ্বাস এবং দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা শহিদদের পরিবার এখনও সেই দিনটি নিয়ে কথা বলছে, স্মৃতি আঁকড়ে ধরে। বাবলুর স্ত্রী মিতা পেয়েছেন চাকরি, সুদীপের মা পেয়েছেন পেনশন—এগুলো কিছুটা সহানুভূতি, কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও কি এই ক্ষতি পূরণ হতে পারে?
বাবলু সাঁত্রার বোন ঝুমা বলছিলেন, “এতগুলো বছর কেটে গেল, কিন্তু এখনও তো নতুন কোনো উত্তর পাইনি। এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, অথচ সবাই যেন সব ভুলে গেছে। এই দিনটা এলেই সবাই নিয়ম মেনে কিছুটা শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে যায়, আর কিছু নয়।” ঝুমার কথায় স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে শহিদদের পরিবারের গভীর বেদনা। তারা জানতে চায়, কেন তাদের প্রিয়জনদের এত তাড়াতাড়ি চলে যেতে হয়েছিল? কেন এই ঘটনা যে এত বড় ছিল, তাও প্রায় ভুলে গেছে সবাই?
২০১৯ সালের পুলওয়ামার ঘটনার সময় তৎকালীন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের দেওয়া বিস্ফোরক মন্তব্যগুলি তখন অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। তবে, এই দিনটি নিয়ে রাজনীতিরও এক অন্যমাত্রা দেখা যায়। জামাত-হিজবুল, পাকিস্তান, নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বহু কথাবার্তা হয়, কিন্তু শহিদদের পরিবারের সেই শোক কি কখনো দূরীভূত হবে?
বাবলুর দাদা কল্যাণ বলেন, “সরকার চাইলে সব কিছু করতে পারে, কিন্তু কিছুই ফিরে আসবে না। আমাদের তো কিছুই পাবার নেই, যা গেছে, তা আমাদেরই গেছে।” এই গম্ভীর কথায় তিনি প্রকাশ করেছেন তাদের হতাশা। তাঁদের কাছে শুধু একটি প্রশ্ন, “কেন?”
এদিকে, গত পাঁচ বছরের মতো এবারও পুলওয়ামার শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সিআরপিএফ উপস্থিত থাকবে লেথপোরার জাতীয় সড়কে। তবে, জম্মু-কাশ্মীর সরকারের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। রাজ্যের নতুন সরকারের মুখপাত্ররা বিষয়টি নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না। এক নেতা বলছেন, “এ বিষয় রাজ্য সরকারের কোনো ভূমিকা নেই, এটি কেন্দ্রীয় বিষয়।”
এই পরিস্থিতিতে, জম্মু-কাশ্মীর বিজেপির মুখপাত্র আলতাফ ঠাকুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এনসি এবং পিডিপির এই অবস্থান পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে, তারা ভারতীয় সেনা ও আধাসেনাদের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা বা ভালোবাসা দেখায় না। মুখ্যমন্ত্রী কী এতটুকু সময় বের করতে পারতেন না শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে?”
পুলওয়ামার শহিদদের পরিবারের জন্য এটি শুধু একদিনের স্মরণ নয়, এটি এক অমীমাংসিত শোকের প্রহর। ছয় বছর পরও, ‘কেন’ এই ঘটনার সত্যিকারের উত্তর খুঁজে পায়নি তারা।