কেজরির পরাজয়ে পঞ্জাবে ‘আপ’ সংকট, মানের শাসনে অনিশ্চয়তা

২০২৫ সালের দিল্লি নির্বাচনে আম আদমি পার্টির (এএপি) বিপর্যয়ের (AAP’s Leadership Crisis) পর, পঞ্জাবের রাজনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দিল্লিতে আম আদমি পার্টির হারের জের এসে…

Kejriwal's Defeat Sparks Uncertainty in Punjab, Threatening Mann's Rule

২০২৫ সালের দিল্লি নির্বাচনে আম আদমি পার্টির (এএপি) বিপর্যয়ের (AAP’s Leadership Crisis) পর, পঞ্জাবের রাজনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দিল্লিতে আম আদমি পার্টির হারের জের এসে পড়েছে পঞ্জাবের ভগবন্ত মানের দুর্গে। আম আদমি পার্টির জাতীয় দল হওয়ার নেপথ্যে পঞ্জাবের জয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

পঞ্জাবের রাজনীতি যে ‘দিল্লি মডেল’ বা আম আদমি পার্টির দৃষ্টিভঙ্গিতে এক সময় পুরোপুরি নড়েচড়ে উঠেছিল, সে পরিস্থিতি বর্তমানে অনেকটাই বদলেছে। পঞ্জাবের মানুষের মনোভাবেও এই পরিবর্তনের ছাপ স্পষ্ট।

   

আম আদমি পার্টি পঞ্জাবে ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এক ঐতিহাসিক জয় লাভ করেছিল। ‘দিল্লি মডেল’ দিয়ে পঞ্জাবের রাজনীতিতে নবজাগরণ ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। ২০২৫ সালের দিল্লি নির্বাচনে আম আদমি পার্টির পরাজয় তারই বিরূপ প্রতিফলন হতে পারে। কংগ্রেস নেতা প্রতাপ সিং বাজওয়া দাবি করেছেন যে, আপের ৩০ জন বিধায়ক তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন ও তার নেতৃত্বে আসার জন্য প্রস্তুত। এখান থেকে বোঝা যায় যে পঞ্জাবে আম আদমি পার্টির মধ্যে ভাঙন ধরতে পারে। তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাথে বিজেপির যোগাযোগ থাকতে পারে।

পঞ্জাবে আম আদমি পার্টি এসে এক নতুন সম্ভাবনার আলো দেখিয়েছিল। তবে, তাদের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্প ও উদ্যোগ বাস্তবায়নে ব্যর্থতা জনগণের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে। বিশেষত, ভগবন্ত মানের নেতৃত্বে যে ‘দিল্লি মডেল’ কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা পুরোদমে কার্যকর হয়নি। একদিকে পঞ্জাবের মানুষের আশা ছিল যে, আম আদমি পার্টি তাদের রাজ্যে নতুন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি আনবে, অন্যদিকে, বাস্তবতার মধ্যে ওই প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি পূর্ণ হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, ‘দিল্লি মডেল’-এর মাধ্যমে পঞ্জাবের রাজনীতিতে যে ঝাড়ু ঝড় উঠেছিল, তা এখন কার্যত থেমে গেছে। জনগণ এখন মনে করছে যে, আম আদমি পার্টি আর কোনো রাজনৈতিক বিকল্প নয়। তারা অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর মতোই। এর ফলে, পঞ্জাবে কংগ্রেস এবং শিরোমণি আকালি দলের পুনরুত্থানও হতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা জনগণের কাছ থেকে এই সময়ের ভুল বোঝাবুঝি আর অবহেলার সুবিধা নিতে পারে।

দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরীওয়াল নিজেই যখন নিজের আসন হারিয়েছেন, তখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আপ দলের মেরুদণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েছে। কেজরীওয়ালের মতো বড় নেতা নিজের নির্বাচনী এলাকা হারিয়ে ফেললে, তার দলের মনোবল চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তার ব্যক্তিগত পরাজয় দলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং এতে করে পঞ্জাবে দলের অন্যান্য নেতাদের ওপরও চাপ পড়বে। আম আদমি পার্টির এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে নিজেদের শক্তি পুনরুদ্ধার করা এবং নির্বাচনী ফলাফল বদলে দেওয়া।

একদিকে দিল্লি হারানোর পর পঞ্জাবে রাজনৈতিক ধাক্কা খাওয়ার শঙ্কা তো আছেই, অন্যদিকে, কেজরিওয়াল এবং তার সহকর্মী মণীশ সিসোদিয়া ও সত্যেন্দ্র জৈনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও দলকে দুর্বল করেছে। আম আদমি পার্টি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে এসেছিল, কিন্তু এখন তাদের উপর দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, জনগণ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, ‘আপ কি আদৌ অন্য দলগুলোর থেকে আলাদা?’

পঞ্জাবের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যে বদলাতে পারে, সেটা শুধু দিল্লির ফলাফলের কারণে নয়, বরং রাজ্যের দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত দেয়। কংগ্রেস এবং শিরোমণি আকালি দল পঞ্জাবে পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করতে পারে, বিশেষত যদি তারা জনগণের মনে বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে সক্ষম হয়।

এদিকে, বিজেপিও পঞ্জাবে তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাতে পারে, বিশেষ করে যদি তারা দিল্লির নির্বাচনে আম আদমি পার্টির পরাজয়ের সুযোগ নেয়ার পরিকল্পনা করে। বিজেপির পঞ্জাব শাখা যদি শক্তিশালী হয়, তবে আগামী দিনে পঞ্জাবের রাজনৈতিক ভারসাম্য আরও চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।