সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে জখম ভারতীয় যুবক রনি আহমেদ

ত্রিপুরার পুটিয়া গ্রামে সীমান্ত পেরোনোর সময় বিএসএফের (BSF) গুলিতে গুরুতর আহত হলেন এক ভারতীয় যুবক। আহত যুবকের নাম রনি আহমেদ (২৪)। তিনি পুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের…

BSF Gunfire Injures Indian Youth Ronnie Ahmed at Tripura Border

ত্রিপুরার পুটিয়া গ্রামে সীমান্ত পেরোনোর সময় বিএসএফের (BSF) গুলিতে গুরুতর আহত হলেন এক ভারতীয় যুবক। আহত যুবকের নাম রনি আহমেদ (২৪)। তিনি পুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, সীমান্তের ১৫১ নম্বর গেট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের সময় বিএসএফের গুলিতে তিনি জখম হন।

   

সূত্রের খবর অনুযায়ী, রনি আহমেদ প্রায় ছয় মাস আগে বাংলাদেশের খাদলা এলাকার এক যুবতীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং পরে তাকে বিয়ে করেন। দুদিন আগে তিনি অবৈধভাবে বাংলাদেশে তার শ্বশুরবাড়িতে যান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, একইভাবে তিনি ভারতে ফিরে আসার চেষ্টা করেন।

কিন্তু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে বিএসএফের সন্দেহ হয় যে তিনি কোনো পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ্য করেই সীমান্তে কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ান তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। গুলিটি তার ঘাড় ও মুখে লাগে, ফলে তিনি গুরুতর আহত হন।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বিএসএফ দ্রুত বিষয়টি পুটিয়া বিওপি-তে জানায়। এরপর অন্যান্য বিএসএফ সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। আহত রনিকে বিএসএফের গাড়িতে করে প্রথমে বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়ে দ্রুত তাকে আগরতলার জিবি হাসপাতালে রেফার করেন।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, রনির শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটজনক। তার চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল গঠন করা হয়েছে। পরিবার এবং স্থানীয় বাসিন্দারা তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছেন।

এই ঘটনার পর থেকেই পুটিয়া এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রনির পরিবার এবং স্থানীয় বাসিন্দারা বিএসএফের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, বিএসএফ আগে থেকেই সন্দেহ করে গুলি চালিয়েছে, যা অত্যন্ত অন্যায়।

তবে বিএসএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জওয়ানরা সন্দেহজনক কিছু দেখলে ব্যবস্থা নিতেই পারেন। রনি আহমেদের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে থামানোর জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

এই ঘটনার পর বিএসএফ সীমান্তে নিরাপত্তা আরও কঠোর করেছে। ১৫১ নম্বর গেটসহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোনো অননুমোদিত চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

একইসঙ্গে, স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হবে এবং কোনো গাফিলতি থাকলে তা প্রকাশ্যে আনা হবে।

রনি আহমেদের বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এই ঘটনার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তারা বিএসএফের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।

এদিকে, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করা উচিত। কোনো ব্যক্তি যদি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেন, তবে তাকে আটক করা যেতে পারে, কিন্তু গুলি চালানো কি একমাত্র সমাধান? এই প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
ত্রিপুরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং বিএসএফের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। রাজ্য সরকারও রনির চিকিৎসার দায়িত্ব নিচ্ছে বলে জানিয়েছে।