অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অভিষেকে শতরান জশ ইংলিসের

অস্ট্রেলিয়ার তারকা ক্রিকেটার জশ ইংলিস (Josh Inglis) তাঁর টেস্ট অভিষেকে এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে গালে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন, ইংলিস ২৯ বছর…

Josh Inglis Scores Fastest Century on Test Debut for Australia Against Sri Lanka

অস্ট্রেলিয়ার তারকা ক্রিকেটার জশ ইংলিস (Josh Inglis) তাঁর টেস্ট অভিষেকে এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে গালে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন, ইংলিস ২৯ বছর বয়সী এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর অভিষেকে দ্রুততম শতরান হাঁকিয়ে গোটা ক্রিকেট বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাগি গ্রিনের হয়ে তিনি প্রথম টেস্টে খেলে এমন এক কীর্তি স্থাপন করেছেন যা বেশিরভাগ ক্রিকেটারের জন্য স্বপ্নসাধ্য।

অস্ট্রেলিয়ার ডেবিউ শতরান: জশ ইংলিসের কৃতিত্ব
ইংলিস প্রথম ইনিংসে দারুণ শুরু করেন এবং নিজের অভিষেকে দ্রুততম শতরান করার রেকর্ড তৈরি করেন। মাত্র ৯০ বলে, ১০টি চার এবং একটি ছয়ে ইংলিস তার শতরানে পৌঁছান। এর ফলে, তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক টেস্টে সবচেয়ে দ্রুত শতরান করার রেকর্ডটি অর্জন করেন। তাঁর এই দ্রুততম শতরানটি ক্রিকেট ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক তৈরি করেছে।

   

ইংলিসের খেলা ছিল একেবারে আক্রমণাত্মক। অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘ সময় ধরে এক রক্ষণাত্মক খেলার স্ট্র্যাটেজিতে ব্যস্ত থাকলেও ইংলিস তার ব্যাটিংয়ে এক নতুন ঝলক আনেন। প্রথম ৫০ রান করেন মাত্র ৫১ বলেই, যেখানে ৫টি চার এবং স্কোরিং রেটের জন্য রোটেটিং স্ট্রাইক অনেক বেশি ভূমিকা পালন করেছে। এরপর, ইংলিস আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন এবং ৯০ বলের মধ্যে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন।

ইংলিস ম্যাচ শেষে বলেছেন, “এটা পুরোপুরি বোধ হয়নি। আজকের দিনটা খুব বিশেষ ছিল, আমি সত্যিই গর্বিত। প্রথম বলেই বাউন্ডারি পাওয়া সবসময়ই ভালো লাগে। আমি এই গ্রুপের সঙ্গে অনেকদিন ধরে আছি, পরিবারকে পাশে পেয়ে সবসময় ভালো লাগে। মা-বাবা খুব তাড়াতাড়ি চলে এসেছিলেন। অভিষেকে শতরান করা সত্যিই বিশেষ, আমি সত্যিই খুব খুশি,” ইংলিসের এসব কথা ESPNcricinfo থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে।

ইংলিসের রেকর্ড এবং তার পরবর্তী দিক
অস্ট্রেলিয়ার নতুন এই ক্রিকেটারের ১০২ রান (৯৪ বল) ম্যাচ শেষ হয়। ইংলিসের স্ট্রাইক রেট ছিল ১০৮.৫১, যা টেস্ট ক্রিকেটের অভিষেক ম্যাচে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট। এর ফলে, ইংলিস শিখর ধাওয়ানকে পিছনে ফেলেছেন, যিনি ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৭৪ বলের মধ্যে ১৮৭ রান করে দ্রুততম শতরানের রেকর্ড করেছিলেন। ইংলিসের স্ট্রাইক রেট ধাওয়ানের ১০৭.৪৭ থেকে অনেক বেশি ছিল।

ইংলিসের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং অস্ট্রেলিয়ার স্কোর অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। তাঁর কারণে অস্ট্রেলিয়া ৬৫৪/৬ রান পর্যন্ত পৌঁছায়, যেখানে ইংলিসের এই দুর্দান্ত শতরানটির ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দলের অধিনায়ক স্মিথ ম্যাচ শেষে ইংলিসের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হন এবং স্কোর অনেকটাই বড় হওয়ার পর ম্যাচ ডিক্লেয়ার করে দেন।

সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কঠিন পরিস্থিতি
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে চ্যালেঞ্জ ছিল মারাত্মক। ইংলিসের সেঞ্চুরি এবং আক্রমণাত্মক খেলা শ্রীলঙ্কার বোলিংকে ভেঙে ফেলেছিল। শ্রীলঙ্কার স্পিনার প্রভাত জয়াসুরিয়া ইংলিসকে আউট করতে সক্ষম হলেও ইংলিসের আক্রমণাত্মক ইনিংস শ্রীলঙ্কার জন্য এক বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জয়াসুরিয়া ইংলিসকে একটি সহজ ক্যাচ ধরতে বাধ্য করেন, এবং এর মাধ্যমে ইংলিসের দৃষ্টিনন্দন শতরান শেষ হয়।

স্মিথের ডিক্লেয়ার এবং শ্রীলঙ্কার বোলিং
ইংলিসের কার্যক্রম শেষে, অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্মিথ দলের স্কোর ৬৫৪/৬তে পৌঁছানোর পর ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেন। শ্রীলঙ্কার বোলিংয়ের জন্য তা ছিল এক কঠিন পরীক্ষা। এই বিশাল স্কোরের মুখোমুখি হওয়ার জন্য শ্রীলঙ্কার বোলাররা প্রস্তুত ছিল না। শ্রীলঙ্কা তাদের প্রথম ইনিংসে তিনটি দ্রুত উইকেট হারিয়ে ৪৪ রানে পৌঁছাতে পারে, যেখানে নাথান লায়ন, মিচেল স্টার্ক এবং ম্যাথু কুহনেম্যান প্রত্যেকে একটি করে উইকেট নেন।

অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত টেস্ট অভিষেক এবং ভবিষ্যত
জশ ইংলিসের টেস্ট অভিষেক এই সিরিজের অন্যতম উজ্জ্বল মুহূর্ত হয়ে থাকবে। যদিও ইংলিসের সেঞ্চুরি সত্যিই অসাধারণ, তাঁর এই পারফরম্যান্স একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ইংলিসের পারফরম্যান্সের পর অস্ট্রেলিয়া দলের সামর্থ্য নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইংলিস তার অভিষেকে এত দ্রুত সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্রমাণ করেছেন যে তিনি শুধু টেস্ট ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত নয়, ভবিষ্যতে আরও বড় কীর্তি গড়তে প্রস্তুত।

অস্ট্রেলিয়া দলের জন্য ইংলিসের পারফরম্যান্স বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ তার খেলা দলের জন্য শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি টেস্ট ক্রিকেটে আরও নতুন প্রতিভার আবির্ভাব ঘটাতে পারে। এর মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হতে চলেছে এবং সারা বিশ্বে এক নতুন ক্রিকেট তারকা সৃষ্টি হয়েছে।