কলকাতা হাই কোর্টে রাজ্য সরকারের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের বিরুদ্ধে দায়ের করা জনস্বার্থ মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। মামলাকারী দাবি করেছিলেন যে, এই প্রকল্পের সুবিধা সাধারণ মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই পাচ্ছেন না, এবং এটি মূলত ভোটে ফায়দা তোলার উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছে। তাঁর মতে, প্রকল্পটি কার্যকর নয় এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে এর কোনো প্রভাব নেই। তবে আদালত মামলাটি খারিজ করে সাফ জানিয়েছে যে, রাজ্য সরকার জনহিতেই এমন প্রকল্প চালু করতে পারে এবং আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
২০২১ সালে একটি সংস্থা কলকাতা হাই কোর্টে এই মামলাটি দায়ের করেছিল, যেখানে চিকিৎসক কুণাল সাহা তাদের হয়ে সওয়াল করেন। মামলাকারী অভিযোগ করেন যে, ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের মাধ্যমে পরিবার প্রতি ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা দেওয়ার কথা বলা হলেও, বেশিরভাগ মানুষই এই সুবিধা পান না। তাঁদের মতে, বেসরকারি হাসপাতালগুলি রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে, এবং প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বাধা রয়েছে।
এদিন, কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি শুনানি হয়। আদালত জানায়, রাজ্য সরকার যে কোনও প্রকল্প জনগণের কল্যাণে চালু করতে পারে এবং ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প সরকারি সিদ্ধান্তের অংশ। এর সাথে বিচারপতির মন্তব্য ছিল, “ধরুন, এই প্রকল্প নেই, তাহলে কী বলবেন? আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। প্রয়োজনে বিধায়ক এবং সাংসদদের সঙ্গে কথা বলুন।”
‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পটি ২০১৬ সালে চালু হয় এবং এর আওতায় পরিবারগুলির মহিলাদের নামে একটি করে কার্ড তৈরি করা হয়। এই কার্ডের মাধ্যমে সরকারী এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল। তবে প্রকল্প চালুর পর থেকেই বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে যে, বহু বেসরকারি হাসপাতাল এই কার্ড ফিরিয়ে দিয়েছে এবং এর সুবিধা পাওয়া যায় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক হুঁশিয়ারির পরেও পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প অনেক মানুষের উপকার করেছে এবং তাদের চিকিৎসা খরচে বড় ধরনের সহায়তা প্রদান করেছে।
এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার, রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প চালু করা হয়েছিল এবং এর লক্ষ্য ছিল দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া। তবে প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং তার কার্যকারিতা নিয়ে অভিযোগ থাকলেও, আদালত এই বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করতে চায়নি।